You dont have javascript enabled! Please enable it!

ছনকান্দা শ্মশানঘাট বধ্যভূমি (জামালপুর সদর)

ছনকান্দা শ্মশানঘাট বধ্যভূমি (জামালপুর সদর) জামালপুর সদরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা এখানে বহু লোককে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জামালপুর জেলা সদরে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে, তার এক নির্মম অধ্যায়ের স্বাক্ষী হয়ে আছে জেলা সদরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত শেরপুর ঘাট-সংলগ্ন ছনকান্দার শ্মশানঘাট। ২২শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জামালপুর জেলা সদরে প্রবেশ করেই শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। তারা পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটে)-এ ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর থেকেই তারা জেলা শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে – আওয়ামী লীগ, ন্যাপ – – ছাত্রলীগ – ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতা-কর্মী, মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ ও প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধরে এনে পিটিআই ক্যাম্পে বন্দি করে রাখত এবং তাদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালাত। তারপর তাদের শেরপুর ঘাটের নিকট শ্মশানঘাটে নিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত। হানাদার বাহিনীর এই নির্মম হত্যাকাণ্ড যুদ্ধের নয় মাস ধরেই চলেছে। তাদের এই জঘন্য মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে স্থানীয় শান্তি কমিটি, -রাজাকার- ও -আলবদর বাহিনী।
যুদ্ধের নয় মাস প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির শব্দে জামালপুর শহর প্রকম্পিত হয়েছে, সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছে। পাকসেনাদের হাতে বন্দি অধিকাংশ মানুষকে শ্মশানঘাটে নিয়ে এসে গুলি করে বা বেয়নেট চার্জ করে হত্যার পর ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসিয়ে দেয়া হয়। প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্র নদে কলাগাছের ভেলার মতো ভাসমান অসংখ্য মৃতদেহের সারি দেখা যেত ৷ যুদ্ধের নয় মাস অসংখ্য মানুষের গলিত লাশে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। জামালপুর হানাদারমুক্ত হওয়ার পরও প্রায় বছরাধিক কাল শহরের বাসিন্দারা ব্রহ্মপুত্র নদের মাছ কেনা ও খাওয়া থেকে বিরত ছিল।
এ শ্মশানঘাটেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কমিউনিস্ট পার্টি র নেতা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের পিতা সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আব্দুল হামিদ মোক্তারকে হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। শ্মশানঘাটেই হানাদার বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে পানিতে পড়ে গিয়েও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বজ্রাপুরের ন্যাপ (ভাসানী)-র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুল ওয়াহাব। এখানেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় পানিতে পড়ে গিয়ে বেঁচে যান দেওয়ানপাড়ার সায়দুর রহমান সাদু (পরবর্তীতে জামালপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান)। কিন্তু সেদিনই তাঁর শ্যালক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হামিদ খানকে এ শ্মশানঘাটেই গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন এখানে ১০ জনের অধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর শ্মশানঘাটকে একাত্তরের বধ্যভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এ শ্মশানঘাট বধ্যভূমিতে নির্মিত হয় একটি স্মৃতিফলক। [আহমদ আজিজ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!