You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে ছাতক উপজেলা (সুনামগঞ্জ)

ছাতক উপজেলা (সুনামগঞ্জ) কাগজ এবং সিমেন্ট কারখানার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এর উত্তরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, দক্ষিণে জগন্নাথপুর, পূর্বে কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর, পশ্চিমে বিশ্বনাথ উপজেলা, পশ্চিম-দক্ষিণে সুনামগঞ্জ সদর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা। মার্চের শুরু থেকেই এখানকার সর্বস্তরের জনসাধারণ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাতক থানা সদর সিলেটের নিকটবর্তী হওয়ায় সিলেট জেলা শহরের নেতৃবৃন্দ ঘনঘন ছাতকের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে এ এলাকার মানুষজনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপিত করে তোলেন।
৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পর পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছাতকের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। বিশেষ করে ২৫শে মার্চের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পিলখানা ও রাজারবাগের হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে হানাদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেতনা বাড়তে থাকে। ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালি ও অবাঙালির মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জনতার মাঝে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা একাকার হয়ে মিশে যান এবং সেখানে লাল খাঁন নামক এক অবাঙালি ইপিআর সদস্য জনতার রোষানলে পড়ে প্রাণ হারায়। উত্তেজিত জনতা রেলের অবাঙালি কর্মচারীদের ওপর আক্রমণ চালায়। ছাতক রেল স্টেশনে বাঙালি ইপিআর এবং অবাঙালি ইপিআর-এর মধ্যে এক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ের সময় বাঙালি স্টেশন মাস্টারের স্ত্রী (তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন- কর্মী স্বপনের মা, মহিলা নেত্রী, কুমিল্লা) শহীদ হন।
মোহাম্মদ আব্দুল হক এমএনএ ও সামছু মিয়া চৌধুরী এমপিএ- র নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-এর হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস পুরকায়স্থ (দিঘলী), ডা. হারিছ আলী (আওয়ামী লীগ), ডা. আব্দুর রহিম (আওয়ামী লীগ), মানিক মিয়া (ট্রেড ইউনিয়ন নেতা), মদরিছ চৌধুরী (সভাপতি, আওয়ামী লীগ, বাগবাড়ি), মদরিছ আলী বিএ (ন্যাপ সভাপতি) প্রমুখের উদ্যোগে ছাতক পেপার মিলস ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎপাদন বন্ধ রেখে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেয়। ছাতক থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়।
২৬শে মার্চের পরই ছাতক শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোহাম্মদ আব্দুল হক এমএনএ এবং সামছু মিয়া চৌধুরী এমপিএ-কে উপদেষ্টা করে ছাতকের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। এ কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে মদরিছ চৌধুরী (সভাপতি, আওয়ামী লীগ, বাগবাড়ি), মদরিছ আলী বিএ (ন্যাপ সভাপতি, বাগবাড়ি ) ও মানিক মিয়া (ন্যাপ সম্পাদক, দামোদরতপী)। সদস্যদের মধ্যে এম এ কবির (ছাতক বাজার), হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস পুরকায়স্থ (দিঘলী), নিজামুদ্দিন বুলি (বাগবাড়ি), পিয়ারা মিয়া (বাগবাড়ি), নেছার আহমদ (ব্যবসায়ী, কুলাউড়া), আব্দুল মতিন (টেংগেরগাঁও), আব্দুল কাইয়ুম (সহকারী সমবায় পরিদর্শক, নেত্রকোনা), ইলিয়াছ মিয়া (রাজনগর, মৌলভীবাজার), আব্দুল কদ্দুছ চৌধুরী (শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, কুলাউড়া), এম এ খালেক (সিমেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা, হাতিয়া, চট্টগ্রাম) প্রমুখ। ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন আচ্চা মিয়া (বাগবাড়ি), চাঁন মিয়া চৌধুরী (বাগবাড়ি), আমীর আলী (লেবারপাড়া), গোলাম নবী (কুমিল্লা), আব্দুল ওদুদ (ছাতক বাজার), আব্দুস সালাম (ছাতক বাজার), আব্দুল গফফার (বাগবাড়ি), আবুল লেইছ (মলি[]কপুর), আব্দুল মুবিত চৌধুরী (গণকখাই) প্রমুখ।
সংগ্রাম পরিষদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাতক অঞ্চলকে স্বাধীন রাখা। স্থানীয় আনসার ও মুজাহিদদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের উদ্যোগও ছিল চলমান সংগ্রামেরই অংশ। এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে ছাতকে সংগ্রাম পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে থাকে। এ অবস্থাকে ধরে রাখা এবং ছাতকে পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশকে প্রতিহত করার জন্য ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের নিমিত্তে অস্ত্র সরবরাহের উদ্দেশ্যে এপ্রিলের প্রথম দিকে মোহাম্মদ আব্দুল হক এমএনএ ও মদরিছ আলী বিএ সীমান্তের ওপারে চলে যান। সেখানে প্রাথমিক যোগাযোগের পর ছাতকে ফিরে না এসে তারা সীমান্তের বুড়িডহর গ্রামে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম চালাতে থাকেন৷
ছাতক থানাটি ছিল ৫নং সেক্টরের অধীন। এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী (পরবর্তীতে লে. জেনারেল)। অন্যদিকে এ থানাটি শেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টরের অধীনে ছিল। এ সাব- সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন এ এস হেলাল উদ্দিন (পরবর্তীতে লে. কর্নেল)। এছাড়া বাংলাদেশের দুজন প্রথম কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার লে. রউফ এবং লে. মাহবুব কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে শহীদ চৌধুরী (কোম্পানি কমান্ডার, হরিণাপার্টি), নূরুল হক (কোম্পানি কমান্ডার, বাংলাবাজার), ইদ্রিছ আলী (কোম্পানি কমান্ডার, বড়খাল), শামসুদ্দিন আহমদ (কোম্পানি কমান্ডার, কানাইঘাট), উজির মিয়া (কোম্পানি কমান্ডার, ইনাতনগর), সুবেদার খোরশেদ (ইপিআর), ফখরুদ্দিন, ইয়ামিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন আহমদ প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু।
পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার জন্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে হাজার-হাজার জনতা সিলেট-ছাতক রাস্তার লামাকাজী ফেরি ভেঙ্গে ডুবিয়ে দেয়। সংগ্রামী জনতা এ সময় মাধবপুরের কাঠের ব্রিজটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
২৮শে এপ্রিল পাকবাহিনী ছাতকে অনুপ্রবেশ করে। এদিন সকাল ১০টায় সংগ্রাম পরিষদের সভায় যোগদানের জন্য লোকজন বাগবাড়িতে মিলিত হওয়ার সময় হঠাৎ খবর আসে পাকসেনারা এগিয়ে আসছে। তারা রাস্তার দুপাশের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং মানুষজনকে হত্যা করছে। তাৎক্ষণিক ঐ সভা থেকেই প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়। কয়েকজন ইপিআর, আনসার ও মুজাহিদ সদস্য রেলওয়ে স্টেশনে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে যান। উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু সময় গুলি বিনিময় হলেও পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সামনে তাঁরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এমতাবস্থায় হাজার- হাজার মানুষ সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়। সে মুহূর্তেই ছাতক অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলে পাকসেনাদের অবিরাম হত্যাকাণ্ড। ছাতক সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ভোলাগঞ্জে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু করেন। মানিক মিয়া ও মদরিছ আলীকে শিলং গিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল হক এমএনএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানে দেওয়ান ফরিদ গাজী এমএনএ, পীর হাবিবুর রহমান, দেওয়ান ওবায়দুর রেজা, বরুণ রায় প্রমুখ নেতা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ও অস্ত্র সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। মানিক মিয়া ও মদরিছ আলী মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা ও আশ্বাসের বাণী শুনে ভোলাগঞ্জে ফিরে এসে কর্মতৎপরতা শুরু করেন। বাংলাদেশ অংশে ভোলাগঞ্জের ডিংরাই নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ইচ্ছুক ছাত্র-যুবকদের জন্য ইয়ুথ ক্যাম্প চালু করা হয়। আর ভারতীয় অংশে ছিল মূল ক্যাম্প। ক্যাম্পের প্রশাসক ছিলেন ভারতীয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) এন সি বসাক। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মানিক মিয়া ক্যাম্প ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এম এ খালেক (ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি), আব্দুল গণী (দিরাই), ময়নুদ্দীন (আনসার, শ্রীমঙ্গল), মৃদুল দাশ পুরকায়স্থ (দিঘলী), আমীর আলী, ডা আব্দুর রহিম, নগেন্দ্র চক্রবর্তী (ছাতক) প্রমুখ।
পাকবাহিনী ছাতকে অনুপ্রবেশ করে ছাতক থানায় তাদের মূল ঘাঁটি গড়ে তোলে। সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থাকায় সেখানেও তাদের অবস্থান জোরদার করে। এছাড়াও দূরবীন টিলা, হাদার টিলা ও পেপার টিলায় তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে।
১২ই মে সুনামগঞ্জ শহরের শওকত মিয়া (দালাল মাহমুদ আলীর চাচাতো ভাই)-র বাসভবনে সুনামগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটি- গঠন করা হয়। সেখানে ছাতক থানার আব্দুল মতিন এডভোকেট (খরিদিরচর) মহকুমা শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়। তাছাড়া ফজলুল করিম, সুজন মিয়া চৌধুরী, আব্দুল মন্নান, আব্দুল বারী মহকুমা শান্তি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়। কয়েকদিন পর আব্দুল মতিন এডভোকেটের উপস্থিতিতে ছাতক থানা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। ছাতক থানা শান্তি কমিটির সদস্যদের মধ্যে মৌলভী ফজলুল করিম (মুক্তিরগাঁও), সুজন মিয়া চৌধুরী (বাগবাড়ি), আবিদুর রাজা চৌধুরী (শিমুলতলা), মতছির আলী ফকির (বেতুরা), আব্দুল হালিম, এম আর চৌধুরী, আব্দুল হক (ফকিরটিলা), ইসহাক আলী (নোয়ারাই), জিয়াউল হক (গণেশপুর), আচির আলী খাঁন (চরেরবন্দ), কালু খাঁ রিফিউজি (ছাতক বাজার), কুটি মিয়া (ছৈলা), হাছান আলী (তাতীকোনা), মবশ্বির আলী (দোলার বাজার), সুরুজ আলী (জাউয়া), ছিদ্দিক আলী (শ্রীনাথপুর), কাপ্তান মিয়া (চেচান), গোলাম মোস্তফা (হরিশ্বরন), ফেরদৌস চৌধুরী (সিংচাপইর), নুরুল হুদা চৌধুরী (পীরপুর), আসগর আলী (শিবনগর), আব্দুল হক (চর বারুংকা), নুরুল আবেদিন (ছাতক বাজার), মকবুল আলী (জাউয়া), রুস্তম আলী (জাউয়া), আব্দুন নূর চৌধুরী (ছাতক বাজার), চান্দ আলী (হবিপুর), মহরম আলী (সরিষাপাড়া), কলমদর আলী (সরিষাপাড়া), মনোহর আলী (হবিপুর) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তোতা মিয়া (ইসলামপুর), হাসন আলী রাজা (তাতীকোনা), আশক আলী (কুচবাড়ি), ঈর্শাদ আলী (রায়সন্তোষপুর) ইনতাজ আলী (ফোলকারগাঁও), আব্দুল কাদির (দোয়ারগাঁও), জোবেদ আলী (ছনখাই), আব্দুল খালিক (চারিওয়াদ্দারি), মনু মিয়া (ইসলামপুর), ময়না মিয়া (দিঘীরপার), ইয়াছিন উল্লাহ (শাহপুর), আজিম উল্লা (রাজারগাঁও), মনফর আলী (রাজারগাঁও), রজব আলী (রাজারগাঁও), আকলূছ আলী (জয়নগর), মফিজ আলী (জয়নগর), নাতা মিয়া (জয়নগর), তৈমুছ আলী (জয়নগর), মক্রম আলী (জয়নগর), আইয়ুব আলী (গোদাবাড়ি), আজিজুর রহমান (আছাদনগর), রমজান আলী (আছাদনগর), সমর আলী (আছাদনগর), সাদক আলী (আছাদনগর), শুকুর আলী (আছাদনগর), আবতাব আলী (আছাদনগর), ময়না মিয়া (আছাদনগর), ফয়জুর রহমান (আছাদনগর), আশ্রব আলী (কুচবাড়ি), আব্দুল করিম (কুচবাড়ি), হজল উদ্দিন (কুচবাড়ি), আলিম উদ্দিন (কুচবাড়ি), ননী মিয়া (কুচবাড়ি), আলতাব উদ্দিন (কুচবাড়ি), সিরাজ মিয়া (কুচবাড়ি), মিসকাই মিয়া (কুচবাড়ি), উসমান মিয়া (কুচবাড়ি), তাহির আলী (কুচবাড়ি), মিছির মিয়া (কুচবাড়ি), আব্দুল মমিন (বাঁশখলা), হাবিজ (বাঁশখলা), জামাল মিয়া (বাঁশখলা), মোহাম্মদ আলী (নোয়ারাই), ময়ুর মিয়া (বাগবাড়ি), সোনাধন (বাগবাড়ি), জমসিদ আলী (বাগবাড়ি), আজাদ মিয়া (হাসনাবাদ), আরব আলী (হাসনাবাদ), ফজর আলী (রাজাপুর), হাফিজ আমির আলী (রাজাপুর), হারিছ আলী (রামপুর), তজম্মুল আলী (রামপুর), মাওলানা আব্দুল হাফিজ (নয়া লম্বাহাটি), হাজী মনফর আলী (সাবেরগাঁও), কালা মিয়া (কল্যাণপুর), শমসের আলী (মালিপুর), মন্নান মিয়া (সিকন্দরপুর), ইসকন্দর আলী (কালারুকা), হজর আলী (কালারুকা), আরকুম আলী (কালারুকা), কদ্দুছ আলী (কালারুকা), মনাই মিয়া (রাজারগাঁও), আবুল হোসেন (রাজারগাঁও), মাহমদ আলী (নোয়ারাই), মামদ মিয়া (নোয়ারাই), ইসহাক আলী (নোয়ারাই), তেজাই মিয়া (নোয়ারাই), ছালেক মিয়া (নোয়ারাই), আব্দুছ ছত্তার (নোয়ারাই), কলমদর আলী (কটালপুর), নুর মামুন (কটালপুর), হাজী মনফর আলী (চানপুর), সুরুজ আলী মেম্বার (রংপুর), চান মিয়া (মানিকপুর), মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান (বারকাহন), ইলিয়াছ আলী (ফকিরটিলা), শুকুর উল্লা (ফকিরটিলা), রায়হান উদ্দিন (নোয়াগাঁও), কমর উদ্দিন (বাহাদুরপুর), আলী হোসেন (বাহাদুরপুর), ফেরদৌস (বাহাদুরপুর), বুদ্ধি রহমান (বাহাদুরপুর), আনিছুর রহমান (বাহাদুরপুর), কছর উদ্দিন (বাহাদুরপুর), আশকর আলী (বাহাদুরপুর), মংলা মিয়া (বাহাদুরপুর), খলিল উদ্দিন (বাহাদুরপুর), নুরুল আহমদ (বাহাদুরপুর), মাইন উদ্দিন (বাহাদুরপুর), আব্দুল জলিল (বাহাদুরপুর), তাহির (বাহাদুরপুর), আকবর আলী (বাহাদুরপুর), তোতা মিয়া (বাহাদুরপুর), সমন (বাহাদুরপুর), সমন আলী (গণেশপুর), মখলিছ আলী (গণেশপুর), আতাউর রহমান (গণেশপুর), রজব আলী (গণেশপুর), দুদু মিয়া (নজমপুর), নুর উদ্দিন (রায়সন্তোষ), আব্দুস সোবহান (খরিদিরচর), আব্দুল জব্বার (খরিদিরচর), গেদাব আলী (খরিদিরচর), আরজক আলী (খরিদিরচর), ছাদ আলী (চরমাধব), সৈয়দ তিতুমির (তাতীকোনা), বসু মিয়া (তাতীকোনা), আব্দুল বারী (তাতীকোনা), আপ্তাব আলী (তাতীকোনা), মুকুট মিয়া (তাতীকোনা), ঠাণ্ডা মিয়া (তাতীকোনা), আঞ্জব আলী (তাতীকোনা), আব্দুল মুকিত (তাতীকোনা), কালা মিয়া (মণ্ডলীভোগ), বাদশা মিয়া (হাদা চানপুর), সোনাফর আলী (হাদা চানপুর), সমুজ আলী (হাদা চানপুর), নেছার আলী (হাদা চানপুর), আব্দুল ছত্তার (হাদা চানপুর), হরমুজ আলী (হাদা চানপুর), আশিক আলী (হাদা চানপুর), ছমন মিয়া (কুমারদানি), মৌলভী তছর আহমদ (জাওয়া), আলতাফুর রহমান (জাওয়া), জায়ফর আলী (হরিপুর), জালাল (রামপুর), মওলানা জালাল (রামপুর), তৈমুছ আলী (রামপুর), জমির আলী (রামপুর), কবির (শিবনগর), দবির (শিবনগর), আইন উল্লাহ (শিবনগর), নুর উদ্দিন (শিবনগর), ইছাক আলী (গোবিন্দনগর), নুর ইসলাম (গোবিন্দনগর), আলকাছ আলী (গোবিন্দনগর), আব্দুল বারী (গোবিন্দনগর) প্রমুখের নাম উল্লেযোগ্য।
২৮শে এপ্রিল পাকবাহিনী ছাতকে প্রবেশ করেই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগে মেতে ওঠে। এদিন তাদের গুলিতে প্রাণ হারান জিতেন্দ্র দাস (ছাতক বাজার), দিলীপ কুমার তরাত (সিলেট কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র), জ্যোতির্ময় দত্ত নানু (কলেজ ছাত্র), কলিম উদ্দিন (ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কেরানি), যোগেন্দ্র দত্ত (ব্যবসায়ী), রুনু দাস (ব্যবসায়ী) প্রমুখ। ছাতক বাজারটি মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। পাকবাহিনী বাগবাড়ির সামছু মিয়া চৌধুরী এমপিএ-র বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর পিতা হাজী ময়না মিয়া চৌধুরী ও ভাই সমুজ মিয়া চৌধুরীকে হত্যা করে। ছাতক যাওয়ার পথে গোবিন্দগঞ্জে নিতেন্দ্র দাসসহ তিনজনকে হত্যা করে। তারপর তারা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকায় হানা দেয়। সেখানে তারা কয়েকজন কর্মচারীকে হত্যা করে। কবি উসমান গণি বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার উপর কবিতা রচনা করে ও গান গেয়ে বাজারে-বাজারে বিক্রি করার অপরাধে পাকবাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
জুন মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে ১৮ জন তরুণ সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় কুখ্যাত দালাল মতছির আলী ফকির ওরফে ফকির চেয়ারম্যান (বেতুরা) পাকবাহিনীর নিকট তাদের ধরিয়ে দেয়। পাকবাহিনী তাদের ছাতকের মাধবপুর সড়কের পাশে নিয়ে গিয়ে ১৭ জনকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে, যা মাধবপুর গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। একজন দৈবক্রমে বেঁচে যায়। ঐ তরুণদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য স্বাধীনতার পর সেখানে ‘শিখা সতেরো’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। দালাল ইছাক মিয়া (পাকবাহিনীর গুপ্তচর, কুচবাড়ি)-র সহযোগিতায় পাকবাহিনী গণেশপুর গ্রামের ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মখলিছুর রহমানকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাতক থানার সামনে গুলি করে হত্যা করে তার লাশ সুরমা নদীতে ফেলে দেয়।
১৩ই অক্টোবর থেকে ১৭ই অক্টোবর পর্যন্ত ছাতক যুদ্ধ – সংঘটিত হয়। এতে ২ শতাধিক পাকসেনা নিহত ও সমপরিমাণ আহত হয়। অপরদিকে ৭০- ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও শতাধিক আহত হন।
১৩ই অক্টোবর ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে ইয়াংকি কোম্পানি ও ‘বি’ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর তীরে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন। অপরদিকে ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিন তাঁর নিয়ন্ত্রিত মুক্তিবাহিনী নিয়ে সিমেন্ট কোম্পানির চারপাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে সুদৃঢ় প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলেন। সিলেট থেকে ছাতকের দিকে আসা পাকবাহিনীর একটি লঞ্চকে ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে ইয়াংকি কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা রকেট লঞ্চার দিয়ে ডুবিয়ে দেন। ঐ লঞ্চে থাকা ৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং বেশ কিছু রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। তাদের ১৪টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ছাতকের দুরবীন টিলা, হাদার টিলা ও পেপার টিলায় পাকসেনারা বাঙ্কার করে অবস্থান করত। ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দুরবীন টিলা, হাদার টিলা ও পেপার টিলায় অতর্কিত আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের এলএমজি-র ব্রাশ ফায়ারে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হলে পাকবাহিনী পিছু হটে এবং মুক্তিযোদ্ধারা টিলাগুলো দখলে নিয়ে নেন। পাকসেনাদের বাঙ্কার থেকে কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করে তাদের আত্মীয়-পরিজনের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়।
সিলেট-ছাতক রাস্তায় নির্মিত রেল ও সড়কসেতু দুটি ব্যবহার করে পাকবাহিনী স্থলপথে সহজেই সিলেট থেকে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে যাতায়াত করত। সেতুর উভয় পাশে রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনী বাঙ্কার স্থাপন করে সার্বক্ষণিক পাহারা দিত। তাছাড়া সেতুদুটিতে নিয়মিত পেট্রল ডিউটি করত। পাকবাহিনীর যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটাতে সাব-সেক্টর কমান্ডার হেলাল উদ্দিনের নির্দেশে ২৯শে নভেম্বর কমান্ডার রউফ ও উজির মিয়ার নেতৃত্বে এক্সপ্লোসিভ বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ জাওয়া রেল ও সড়কসেতু ধ্বংস করে।
১৩ই অক্টোবর ছাতক অভিযানের উদ্দেশ্যে সুবেদার ওয়াহাব (পরবর্তীতে অনারারি ক্যাপ্টেন)-এর নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গলের এক প্লাটুন সৈন্য পীরের টিলায় অবস্থান নেন। পাকবাহিনী অতর্কিতে পীরের টিলায় টিলায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। অপরদিকে দোয়ারাবাজারে ক্যাপ্টেন মহসিনের গ্রুপ পাকবাহিনীর আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পাকবাহিনী সে সুযোগে ছাতকের উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পেছন ও সামনে থেকে মর্টার শেল ছুড়তে থাকে। পাকবাহিনীর অনবরত শেলিংয়ে পীরের টিলায় অবস্থানরত ৩য় ইস্ট বেঙ্গলের সৈনিক তারা মিয়া শহীদ হন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেকশন কমান্ডার আব্দুল মতিন আকস্মিকভাবে মারা যান। তাছাড়া মালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার কপালে গুলি লাগলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। এমতাবস্থায় ল্যান্স নায়েক জব্বার মেশিনগান দিয়ে অনবরত গুলি ছুড়তে থাকেন। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখেও মুক্তিসেনারা তাঁদের অবস্থানে টিকে থাকার চেষ্টা চালান। ইতোমধ্যে সিমেন্ট কোম্পানি থেকে পাকসেনাদের অতিরিক্ত আরো এক প্লাটুন সৈন্য হানাদারদের সাহায্যে পীরের টিলার দিকে এগিয়ে আসে। তারা স্টিল হেলমেট পরে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রাখার কৌশল অবলম্বন করলেও মুক্তিযোদ্ধা মহর আলী ও আসমাউল হোসেনের দৃষ্টিকে এড়াতে পারেনি। তারা পাকসেনাদের লক্ষ করে মেশিনগানের ফায়ার ওপেন করলে পাকসেনারা পিছু হটে। এ সুযোগে সুবেদার ওয়াহাবের প্লাটুনটি আপাতত পীরের টিলা ছাড়লেও পরবর্তীতে টিলাটি আবার দখল করে। ৬ই ডিসেম্বর ছাতক উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
ছাতক উপজেলায় ১৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন- ওমেদ আলী (পিতা ছমর আলী, বাহাদুরপুর), আলী আহমেদ (পিতা আব্বাস আলী, কচুদাইর), মনফর আলী (পিতা মফিজ আলী, কারুলগাঁও), জালাল উদ্দিন (পিতা হোসমত আলী, বাহাদুরপুর), আঞ্জব আলী (পিতা রশিদ আলী, বনগাঁও), মো. খলকু মিয়া (পিতা মুনছব আলী, কারুলগাঁও), পীযূষ কান্তি সরকার (পিতা টিকেন্দ্র সরকার, কায়স্তকোনা), ময়না মিয়া (পিতা আসকর আলী, দেবেরগাঁও), মসলিম আলী (পিতা আব্দুল মন্নাফ, আলমপুর), ফিরোজ আলী (পিতা আলফাজ আলী, চরেরবন্দ), মসলিম আলী (পিতা মছদ্দর আলী, পীরপুর), সামসুল হক (পিতা মো. মকবুল আলী, চানপুর), মোস্তফা তালুকদার (পিতা মো. আবুল কাশেম, দক্ষিণ বড়পাড়া) ও মনসুর আলী (পিতা রুসমত আলী, রাঙ্গামাটিয়া)।
ছাতক ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। তিনস্তর বিশিষ্ট একটি বেদির ওপর দাঁড়ানো মূল স্তম্ভটি তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। পেছনের মূল বেদির ওপর প্রধান স্তম্ভটির দুটি অংশ, যার উচ্চতা ৮×৮ এবং পুরুত্ব ১০ ইঞ্চি। এর অন্য মাথা ২×৫’। কিন্তু ১′ × ৮’ করে ৯০ ডিগ্রি কোণে বেঁকে আরো ১ ফুট ৮ ইঞ্চি প্রশস্ত রয়েছে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে স্তম্ভগুলো। ১৯৮৬-৮৭ সালে ছাতক কলেজ ছাত্র সংসদ এটি নির্মাণ করে।
ছাতকে শহীদদের স্মরণে ছাতক বাজারের রাস্তার পাশে নির্মিত হয়েছে ছাতক থানা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। প্রজেশ কুমার দাশ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য জায়গাটি দান করেন। সৌধটিতে ২৩ ফুট × ১৮ ফুট একটি প্লাটফরমের ওপর তিনস্তরবিশিষ্ট মিনার রয়েছে। মাঝের স্তরটি ৬ ফুট প্রশস্ত এবং ৭ ফুট উঁচু। তারপর সামনের দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে আরো ৩ ফুট সম্প্রসারিত। তার দুপাশে দুটি স্তর ৩ ফুট প্রশস্ত এবং ৭ ফুট উঁচু।
গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছাতক যাবার পথে মাধবপুর নামক স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে “শিখা সতেরো’। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সীমান্তে যাওয়ার পথে ১৭ জন যুবককে নির্মমভাবে হত্যায় সহযোগিতা করে ছাতকের কুখ্যাত দালাল মতছির আলী ফকির। জেনারেল ওসমানির উদ্যোগে এ বধ্যভূমি চিহ্নিতপূর্বক গণকবরের চারপাশে স্মৃতিসৌধ শিখা সতেরো নির্মাণ করা হয়। এর চারপাশ ৪.৫ ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। পূর্বদিকের দেয়ালের ওপর রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ। মাঝের দুটি স্তম্ভের উচ্চতা ৮ ফুট করে, তার পরের দুটি ৬.৫ ফুট করে এবং শেষ দুটি স্তম্ভের উচ্চতা ৫ ফুট। এসব স্তম্ভে আলাদাভাবে ঢাল করে সাজানো হয়েছে শাপলা ফুলের আকৃতি। মাঝখানের দুটি স্তম্ভের মধ্যভাগে সূর্যের প্রতীক রয়েছে এবং তার মধ্যভাগে লেখা রয়েছে “শিখা সতেরো’।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ আব্দুল হক এমএনএ ১৯৭১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গোবিন্দগঞ্জ কলেজের নাম রাখা হয়েছে আব্দুল হক স্মৃতি কলেজ, গোবিন্দগঞ্জ। [বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!