You dont have javascript enabled! Please enable it!

চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম)

চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় দুবার ২১শে আগস্ট ও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথম আপারেশনে বেশ কয়েকজন রাজাকার- আহত হয় এবং সকলে পালিয়ে যায়। দ্বিতীয় অপারেশনেও রাজাকাররা পালিয়ে যায় এবং উভয় অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা বেশকিছু অস্ত্র গোলা-বারুদ উদ্ধার করেন।
সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামণি এলাকায় ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেজামে ইসলামী-র প্রার্থী এবং বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত এমপিএ মৌলভি আহমদ ছগির শাজাদার বাড়ি। চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প ছিল তার নেতৃত্বাধীন। শক্তিশালী এ ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালিত করার পূর্বে রেকি করেন উত্তর কাঞ্চনা নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা নায়েক ফয়েজ আহমদ ও ওবাইদুর রহমান (পিতা মনির আহমদ)। ২১শে আগস্ট কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলামের নেতৃত্বে এ ক্যাম্পসহ মৌলভি আহমদ ছগিরের বাড়িতে অপারেশন পরিচালিত হয়। অপারেশনের রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মধ্যম কাঞ্চনার ঘোষবাড়িতে মিলিত হন। সেখানে তাঁরা দুদলে বিভক্ত হয়ে মধ্যরাতে চূড়ামণিতে পৌঁছে প্রথম দল চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প এবং দ্বিতীয় দল ছগিরের বাড়ি আক্রমণ করেন। ক্যাম্পের রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের প্রায় ৪ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত রাজাকাররা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে অনেক রাজাকার আহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা ৮টি থ্রি-নটি-থ্রি রাইফেল, ১টি এসবিবিএল বন্দুক ও প্রচুর গোলাগুলি উদ্ধার করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় দল মৌলভি আহমদ ছগির শাহ্জাদার বাড়ি আক্রমণ করলে ছগিরের নেতৃত্বে সেখানে অবস্থানরত রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করে। সেখানেও প্রায় ৪ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর ছগির রাজাকারদের নিয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ছগিরের বাড়ি থেকে ৪টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করেন।
চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প এবং মৌলভি আহমদ ছগির শাহ্জাদার বাড়ি অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল, চন্দনাইশ), হাবিলদার আছহাব মিয়া (পিতা কেরামত আলী, উত্তর গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), নায়েক সুজায়েত আলী (পিতা মফজল আহমদ, সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ), ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইসহাক, উত্তর হাশিমপুর, চন্দনাইশ), নায়েক ফয়েজ আহমদ (উত্তর কাঞ্চনা), আশরাফুল আলম (পিতা এজাহার মিয়া, উত্তর হাশিমপুর), মো. রফিকুল ইসলাম (পিতা গুরা মিয়া, উত্তর গাছবাড়িয়া; সেনাসদস্য), সুবেদার এ কে এম হারুন (পিতা হাবিবুর রহমান, উত্তর গাছবাড়িয়া; ইপিআর), নুরুল ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল; সেনাসদস্য), আইয়ুব আলী (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল), দুদু মিয়া (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), এস এম গফুর (পিতা ছৈয়দুল হাকিম, বরকল), মো. আবুল কাশেম (পিতা এনু মিয়া, পশ্চিম পাঠানদণ্ডি, বরকল), ছাবের আহমদ (পিতা গুরা মিয়া, দোহাজারী), আবুল কাশেম (পিতা মফজল আহমদ), মো. ইছহাক মিয়া (পিতা মো. এনু মিয়া, পাঠানদণ্ডি, বরকল), মো. ইছহাক (পিতা আলতাপ মিয়া, উত্তর হাশিমপুর), মো. আবদুল জব্বার (পিতা দুলা মিয়া চৌধুরী, বরকল), আনোয়ারুল হক চৌধুরী (বরকল), হিম্মৎ শরীফ (কুনিরবিল, আনোয়ারা), মনছফ আলী (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), আবুবকর চৌধুরী (পিতা কবির আহমদ চৌধুরী, বরকল), হাবিলদার রফিফ (ছমদরপাড়া, সাতকানিয়া), ল্যান্স নায়েক নূরুল কবির (সাতকানিয়া), হারুন (দোহাজারী), সুভাষ বড়ুয়া (পুলিশ সদস্য), নুরুশ্ছফা (সাতকানিয়া, মেকানিক), আহমেদ শফি (সাতকানিয়া), আতিউর রহমান প্রমুখ।
প্রথম অপারেশনে চূড়ামণি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে এলেও পরে তা আবার রাজাকাররা দখল করে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় অপারেশন চালিয়ে ক্যাম্পটি দখল করেন এবং ক্যাম্পের রাজাকাররা তাঁদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এবার মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প থেকে শতাধিক থ্রি-নট- থ্রি রাইফেল উদ্ধার করেন। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!