চৈতাপাড়া গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর)
চৈতাপাড়া গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় এপ্রিলে দুদফা। এছাড়া নভেম্বর মাসে বিহারিদের হাতে একজন যুবক নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি পাকহানাদার ও বিহারিরা ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
পার্বতীপুর উপজেলায় চৈতাপাড়া নামে দুটি পাড়া আছে। একটি বড়চণ্ডীপুর এবং অপরটি মন্মথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। দুই চৈতাপাড়ার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় বিহারিদের সহায়তায় চণ্ডীপুর চৈতাপাড়ায় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে এবং শেষদিকে দুদফা হামলা করে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন এবং গণহত্যা চালায়। দ্বিতীয়বার হামলার সময় তারা এ পাড়ার কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় এবং হাজী নুরুল ইসলাম, আনসার আলী, কছিবুল্লাহ, অছিউদ্দিন, আব্দুস সামাদ, আতাউল্লাহ, ফারাজউদ্দিন, মহরউদ্দিন, কসিমুদ্দিনসহ অনেকের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হামলার পূর্বেই চৈতাপাড়ার লোকজন অনতিদূরের বুড়িদলা বিলপাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতায় ২৭ জন নিহত হয় (দ্রষ্টব্য বুড়িদলা বিলপাড় গণহত্যা)।
অপরদিকে মন্মথপুর চৈতাপাড়ায় পাকবাহিনী বিভিন্ন সময়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন করে। নভেম্বর মাসে এ পাড়ার সফিউদ্দিন সপু (পিতা পশরতুল্লাহ সর্দার) বিহারিদের হাতে নিহত হন। ২৫-২৬ বছর বয়সী সফিউদ্দিন সপু ছিল অপ্রকৃতিস্থ। বিহারিদের হামলার সময় গ্রামের সবাই যখন দূরে পালিয়ে যেত, তখন সে পালানোর চেষ্টা করত না, বরং বড় একটা দা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াত আর বলত, ‘আমার কাছে আছে দাও, বিহারিকে করব তাও।’ তার এ কথা শুনে বিহারিরা ক্রুদ্ধ হয়ে তার পেটে ধারালো অস্ত্র চালিয়ে দেয়। তার পেট চিড়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন রাতের বেলা তার দাফনকার্য সম্পন্ন করে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড