You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.15 | চোকদার ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

চোকদার ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর)

চোকদার ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর) পরিচালিত হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত এ অপারেশনে ৯ জন অবাঙালি পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়।
মাদারীপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মস্তফাপুর ট্রাফিক মোড়ের আগে চোকদার ব্রিজের অবস্থান। এ ব্রিজ লোহার কাঠামোর ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খলিল বাহিনী-র কলাগাছিয়া ক্যাম্পে মোহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক দল এসে যোগ দেয়। তাঁদের সঙ্গে প্রচুর এন্টিট্যাংক ও এন্টি-পারসোনাল মাইন ছিল। ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ব্রিজগুলো বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনাদের যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করার দায়িত্ব দিয়ে এ দলকে পাঠানো হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকদিন রেকি করে চোকদার ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ই সেপ্টেম্বর ভোরে ব্রিজে দুটি এন্টিট্যাংক মাইন স্থাপন করা হয়। এ-সময় সামান্য ভুলের কারণে ব্রিজের পাশে বসবাসকারী শ্রমিক নেতা আব্দুল মাজেদ চোকদার মুক্তিযোদ্ধাদের এসএমজি-র গুলিতে আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা কাঠের পাটাতনের তলে দুটি এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে রাখতে সক্ষম হন। পরদিন ১৫ই সেপ্টেম্বর সকালবেলা শত্রুর একটি কনভয় কালকিনি থানায় যাওয়ার সময় আক্রান্ত হয়। সবার সামনে থাকা এসডিপিও- র জিপটি নির্বিঘ্নে পার হয়ে গেলেও পেছনের পাঞ্জাবি পুলিশ বোঝাই ‘আল্লার শান’ নামের বাসটি বিস্ফোরণে টুকরো- টুকরো হয়ে উড়ে যায়। এ-সময় একজন অফিসারসহ ৯ জন পাঞ্জাবি পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়। নিহত রাজাকারদের মধ্যে মাদারীপুর মহকুমা শান্তি কমিটি-র কুখ্যাত সদস্য কুলপদ্দি গ্রামের গোলাপ খাঁর এক ছেলেও ছিল। গাড়ির ড্রাইভার আবদুল খালেক মারাত্মকভাবে আহত হয়। মাইনের আঘাতে সে উড়ে খালের পানিতে পড়ে।
১৫ই সেপ্টেম্বরের অপারেশনের পর চোকদার ব্রিজের পাশে রাজাকারদের টহল ক্যাম্প স্থাপিত হয়। নভেম্বর মাসে এ ক্যাম্পের কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্রসহ আত্নসমর্পণ করে। ৮ই ডিসেম্বর ভোরে পাকসেনারা মাদারীপুর শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ৯ই ডিসেম্বর সকালে গ্রামবাসী চোকদার ব্রিজে টহলরত রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড