চৌকিরপাড় গণহত্যা (নাটোর সদর)
চৌকিরপাড় গণহত্যা (নাটোর সদর) সংঘটিত হয় ১৬ ও ১৯শে এপ্রিল। এতে মোট ১১৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
নাটোর শহরের নিচাবাজার এলাকার সামান্য দক্ষিণে চৌকিরপাড় গ্রাম অবস্থিত। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পাকহানাদার বাহিনী এ গ্রামে দুটি ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। প্রথম গণহত্যাটি সংঘটিত হয় ১৬ই এপ্রিল। এতে ১৫ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়।
১৯শে এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর <রাজাকার বাহিনী দ্বিতীয়বার চৌকিরপাড়ে আক্রমণ চালায়। শান্তি কমিটির সদস্য ও দালালদের মাধ্যমে হানাদার বাহিনী খবর পায় যে, কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক চৌকিরপাড়ে অবস্থান করছে। এ সংবাদ পেয়ে হানাদার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাত ১২টার পর সমস্ত চৌকিরপাড় এলাকা ঘিরে ফেলে এবং একে-একে ঘুমন্ত মানুষদের ডেকে তুলে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর তারা লাইনে দাঁড়ানো লোকদেরকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। ১০০ জন নিরীহ সাধারণ মানুষ এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কালিচন্দ্র বাগচীর ছেলে সমীপ বাগচী গুলি করার আগে সারি থেকে দ্রুত ছিটকে গিয়ে আঁকাবাকাঁ পথ ধরে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। চৌকিরপাড় গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- হাফিজুর রহমান (১৬ই এপ্রিল নিহত), কালিচন্দ্র বাগচী, মতিলাল বাগচী, কানাই ফল বাগচী, দুলাল চন্দ্র বাগচী, ববি চক্রবর্তী, মধুসূদন রায়, বিনোদ বিহারী বাগচী, প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী, বুধা রায়, কালীপদ মহন্ত, অৰ্চনা মহন্ত, বিজনবিহারী বাদ্যকর, পূর্ণচন্দ্র দাস, রমেশ চন্দ্র রায়, শীতল চন্দ্র বাদ্যকর, কালীপদ দাস, বিধুভূষণ আচার্য (পিলখানা মোড়, ১৯শে এপ্রিল নিহত)। [মতিউর রহমান মর্তুজা]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড