চুকনগর গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)
চুকনগর গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় ২০শে মে। এটি খুলনা জেলা তথা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গণহত্যা। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক নিরস্ত্র ও উদ্বাস্তু মানুষকে হত্যা করা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার এক নিষ্ঠুর উদাহরণ। এতে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
চুকনগর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আটলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ব্যবসায় কেন্দ্র। খুলনা শহর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে চুকনগর বাজারের অবস্থান। স্থানটি খুলনা জেলার পশ্চিম, সাতক্ষীরা জেলার পূর্ব এবং যশোর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। বর্তমানে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে সড়ক পথ চুকনগরে এসে মিলিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে যশোর থেকে চুকনগরের ওপর দিয়ে সাতক্ষীরা যাওয়ার রাস্তা ছিল। চুকনগরের বাজারের পাশে ভদ্রা নামক একটি নদী প্রবাহিত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চুকনগরের পার্শ্ববর্তী সমগ্র এলাকা ছিল গ্রামাঞ্চল; জমি ছিল নিচু এবং ডোবা-নালায় ভর্তি। ভদ্রা নদীর তীরে বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি প্রায়শই বিলে প্রবেশ করত।
গণহত্যার প্রেক্ষাপট : ২৫শে মার্চের পর সমগ্র বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতন শুরুর কারণে বরিশাল, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে অসংখ্য উদ্বাস্তু খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। খুলনা শহরে সংঘটিত গণহত্যার কারণেও বহু মানুষ এসব গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নিতে আসে। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ডুমুরিয়া, ফুলতলা, কেশবপুর (যশোর জেলা), বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা প্রভৃতি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় লুণ্ঠন, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও সম্পত্তি দখল শুরু করে। ১৫ই এপ্রিল ডুমুরিয়ার রংপুর, ২০শে এপ্রিল বটিয়াঘাটার জলমা- চক্রাখালী হাইস্কুল ও সংলগ্ন এলাকা, ২৭শে এপ্রিল রূপসার অজোগড়া, ২রা মে ডুমুরিয়ার দাসপাড়া, ১১ই মে দাকোপের বাজুয়া, ১৯শে মে বটিয়াঘাটার ফুলতলা, দেবীতলা ও বাদামতলায় গণহত্যা সংঘটিত হয়। এসব গণহত্যার শিকার হয়েছিল প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে এ সম্প্রদায়ের মানুষ চরম আতঙ্কে দেশত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮ ও ১৯শে মে বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও ডুমুরিয়ার বহু মানুষ বাস্তু ত্যাগ করে ভারতের পথে রওনা হয়। তাদের সঙ্গে বরিশাল, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে আসা উদ্বাস্তুরাও ছিল। ডুমুরিয়ার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি থানার মানুষের ভারতে যাবার পরিচিত পথ ছিল চুকনগর হয়ে সাতক্ষীরার সীমান্ত অতিক্রম করা। ১৯শে মে সন্ধ্যার মধ্যে অন্তত ২০ হাজার মানুষ চুকনগরে পৌঁছায় এবং সেখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
চুকনগর গণহত্যায় স্থানীয় যারা সহযোগিতা করেছিল তাদের অন্যতম ছিল চুকনগরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। সে পাকসেনাদের এখানে নিয়ে আসে। সে স্থানীয় হিন্দুদের ভারতে পার করে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সবাইকে এখানে একত্রিত হওয়ার জন্য বলে। তার কথায় বিশ্বাস করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই চলে এসেছিল। চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বিশ্বাসঘাতকতা করে যশোরে ফোন দিয়ে পাকসেনাদের এখানে আনে। গোলাম হোসেন খানসেনাদের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। উদ্বাস্তুদের সঙ্গে থাকা শেষ সম্বলটুকু লুট করে নেয়ার জন্যই গোলাম হোসেন এ কাজ করে। সে পূর্বেই তার নিজ ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে লুটতরাজ চালিয়েছিল। সীমান্তের গোপন পথে ভারতে মানুষ পার করা এবং চোরাচালানি ব্যবসার সঙ্গে সে পূর্ব থেকেই যুক্ত ছিল। গণহত্যার পর সে তার লোকজনের দ্বারা নিহতদের লাশ থেকে ঘড়ি, টাকাপয়সা ও অলংকারাদি লুট করিয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্প্রদায়গতভাবে হিন্দুরা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিশেষ শিকার। চুকনগর গণহত্যায় পাকিস্তানি সেনাদের চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেদিন রতন আলী সরদার নামে এক ব্যক্তি হানাদার সেনাদের সামনে পড়ে গেলে তারা তাকে জিজ্ঞেস করে সে ‘মুসলিম না মালায়োন’। মুসলমান পরিচয় দেবার পর তার লুঙ্গি খুলে দেখে নিশ্চিত হয়ে তারা ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেয়। তারপর জানতে চায় ‘মুসলিম কোন ধারে, আর মালায়োন কোন ধারে। হিন্দুদের এলাকা দেখিয়ে দেয়ার পর তারা সেখানে যায় এবং নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
গণহত্যার বিবরণ : ১৯শে মে চুকনগর বাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত উদ্বাস্তুতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে বাজার ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তাঘাট, স্কুল, মন্দির এমনকি নদীতে নৌকায়ও রাত্রি যাপন করে। ২০শে মে সকালে আরো বহুসংখ্যক মানুষ এখানে আসে। উদ্বাস্তুদের কেউ- কেউ সকালে দ্রুত কিছু রান্না চড়িয়েছিল, কেউ বা চেষ্টা করছিল যানবাহন জোগাড়ের। অনেকে তাদের সঙ্গে রক্ষিত সোনা-দানা-অলঙ্কারাদি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছিল। এ অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা বাজারে পৌঁছায়। চুকনগর কলেজের দক্ষিণ পাশে সাতক্ষীরার দিক থেকে এসে দুটি আর্মি ভ্যান থামে। এ স্থানটি মালতিয়া গ্রামের অন্তর্ভুক্ত এবং স্থানীয়ভাবে পাতখোলার বিট নামে পরিচিত। আনুমানিক এক প্লাটুন সৈন্য এসে নামে। তাদের সঙ্গে ৮-১০ জন বিহারি ছিল। পাতখোলার বিট থেকেই পাকিস্তানি হানাদাররা গুলি করা শুরু করে। তাদের গুলিতে প্রথমে মালতিয়া গ্রামের চিকন মোড়ল মারা যান। হানাদাররা এরপর ৪-৫টি দলে ভাগ হয়ে বাজারের চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের মোড় থেকে পূর্বদিকের কাঁচা রাস্তা ধরে এক দল, যশোর ও সাতক্ষীরা অভিমুখী পাকা রাস্তা ধরে ২টি দল এবং পার্শ্ববর্তী নদীর তীর বরাবর চুকনগর গ্রামের ভেতর দিয়ে অন্য আরেকটি দল গুলিবর্ষণ করতে-করতে অগ্রসর হয়। এরপর প্রত্যেকটি দল কখনো সম্মিলিতভাবে কখনো বিচ্ছিন্নভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে মানুষ হত্যা করতে থাকে।
সেদিন চুকনগর বাজার ও তৎসংলগ্ন অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা ভারতগামী উদ্বাস্তুতে পূর্ণ ছিল। গণহত্যার শুরু হয়েছিল বেপরোয়া ও এলোপাতাড়ি গুলির মাধ্যমে। বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে উদ্বাস্তুদের পক্ষে শুরুতে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি গুলি ঠিক কোন দিক দিয়ে আসছে এবং মুক্তিবাহিনী না-কি পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে অথবা এদের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে কি-না। হানাদার বাহিনী চুকনগরে নেমে সেখানকার অধিবাসী দুর্গাপদ নন্দী এবং তাঁর প্রতিবেশীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনের ধোঁয়া দেখে দূর থেকে অনেকে মনে করেছিল হিন্দু পাড়ায় লুট হচ্ছে। তবে অল্পক্ষণ পরে পাকিস্তানি সেনারা দলে-দলে ভাগ হয়ে বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গণহত্যা চালাতে থাকে।
লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা : হানাদারদের একটি দল ভদ্রা নদীর তীরে গিয়ে নৌকায় পলায়নরত উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে পুরুষদের ডাঙায় তুলে তাদের লাইন দিয়ে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়। এর ফলে আতংকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অনেকেই নৌকা থেকে ডাঙায় নেমে লাইনে দাঁড়ায়। তারা ভেবেছিলেন, পাকসেনাদের আদেশ মেনে হাত তুলে লাইনে দাঁড়ালে হয়তো হত্যা করবে না। পাকসেনারা লোকজনকে নৌকা থেকে নামিয়ে পাঁচটি লাইনে দাঁড় করায়। কিছুক্ষণ পর পাঁচটি লাইনে পাঁচজন পাকসেনা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। লাইনের সব লোক ঘটনা স্থলে নিহত হয়। প্রতি লাইনে ২৫ থেকে ৩০ জন লোক ছিল।
নদীর তীর ছাড়া চুকনগরের অন্যান্য স্থানেও লাইনে দাঁড় করিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। একটি খালের পাড়ে এসে হানাদার সেনারা কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে সবাইকে চুপচাপ লাইনে দাঁড়াতে বলে। এরপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিতে নিহত হন অনেকে। পাকহানাদাররা দুদিক দিয়ে গুলি শুরু করে। উদ্বাস্তুদের কেউ-কেউ তখন খালের পারে মাটিতে বসে ছিল। হঠাৎ গুলি এসে কারো মাথায়, কারো গায়ে লাগে। কয়েকজনের মাথা গুলিতে উড়ে যায়।
পুকুরে গণহত্যা : লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে নৃশংস হত্যা শুরু করলে মানুষজন প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকে গাছ-গাছালিপূর্ণ গ্রামের ভেতর প্রবেশ করে। শুকনো মৌসুম থাকায় চুকনগর গ্রামের অনেক পুকুরে তখন পানি কমে গিয়েছিল। সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে বড়বড় গর্তের আকার ধারণ করেছিল। পুকুরপাড়ের গাছপালা ও ঝোপঝাড়ের কারণে অনেক মানুষ পুকুরে লুকিয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদাররা স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে পাখি শিকার করার ভঙ্গিতে গুলি করতে থাকে। চুকনগরের এরকম একটি পুকুরে স্বামী-সন্তান হারান কমলা জোয়ার্দার (কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা)। পাকিস্তানিদের আসতে দেখে তারা মালোপাড়া পুকুরের ভেতর নেমেছিলেন। তাদের দুটি মেয়ে পিতার কাছে ছিল। কমলা স্বামীর হাত ধরে পানিতে ডুব দেন। তার দেবর তার কাছেই দাঁড়ানো ছিল। হানাদারদের গুলি তার দেবরের মাথায় লাগে। পরে তারা এক গুলিতে দুই ভাইকে হত্যা করে। কমলার বড় মেয়ের গায়ে গুলি লাগে। মালোপাড়া পুকুরের জল লাল হয়ে যায়। এ পুকুরে ৫০-৬০ জন হানাদারদের গুলিতে নিহত হন। চুকনগরে স্বামী হারান আরেক নারী পুষ্প রানি রায় (কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা)। পাকসেনাদের ভয়ে লোকজন ছুটাছুটি করে পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার বড় ছেলেটিকে নিয়ে স্বামী হরিভক্ত রায় পানিতে একবার ডুব দিচ্ছিলেন, আর একবার ভেসে উঠছিলেন। এমনি সময় পাকিস্তানি সেনারা তাকে গুলি করে। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলি থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য যখন পুকুরে ডুব দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর কাঁধে ছিল ৭ বছরের ছেলে প্রশান্ত রায়। এক পর্যায়ে দম নেয়ার জন্য হরিভক্ত রায় জলের ওপর মাথা তুললে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গুলি করে। তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি পানিতে তলিয়ে যান। জলের নিচ থেকে রক্ত উঠতে থাকে। পিতার হাত থেকে পুত্রের মুঠো আলগা হয়ে যায়। তার সলিল সমাধি ঘটে। এভাবে আরেকটি পুকুরে পিতা এবং কাকাকে হারিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ বৈরাগী (তেলিখালি, ডুমুরিয়া)। পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে চলে যাবার পর তিনি মালোপাড়ার পুকুরে তার পিতা আর এক জ্যাঠামশাইকে মৃত অবস্থায় পান। গুলিতে তার পিতার মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। জেলেপাড়া ছাড়া চুকনগর গ্রামের আরো চার-পাঁচটি পুকুরে গণহত্যা সংঘটিত হয়।
নদীতে গণহত্যা : চুকনগর বাজার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় যখন গুলি হচ্ছিল, তখন প্রাণভয়ে বহু মানুষ পার্শ্ববর্তী ভদ্রা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বহু লোক যখন সাঁতরে নদী পার হচ্ছিল, তখন পাকসেনারা গুলি করে তাদের হত্যা করে। কেউ-কেউ সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হলেও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়, আর উঠতে পারেনি। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গুলি করার পর হানাদাররা নৌকায় উঠে নদীতে ঘুরে-ঘুরে গুলি করে এবং বেয়নেট দিয়ে অনেককে হত্যা করে। চারদিকে গোলাগুলি হচ্ছে দেখে পূর্ব পাতিবুনিয়ার বিন্দু ও নিশিকান্ত নদীতে ডুব দিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। বিন্দুর ঘাড়ে ছিল তার ৪ বছরের একটি ছেলে। হঠাৎ একটা গুলি এসে ছেলেটির মাথায় লাগে। তৎক্ষণাৎ শিশুটি মারা যায়। এরপর গুলি লাগে নিশিকান্তর পিঠে। তার নাড়িভুঁড়ি পেট দিয়ে বের হয়ে যায়। হাত দিয়ে পেট চেপে সে বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হাবুডুবু খেতে-খেতে তলিয়ে যায়। এভাবে নদীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া ছাড়াও অনেকে সাঁতাররত অবস্থায় পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে মারা যায়। অনেক মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ এভাবে নদীতে প্রাণ হারায়।
অন্যান্য স্থানে গণহত্যা : চুকনগরের পার্শ্ববর্তী পুটিমারি বিলেও অসংখ্যক মানুষ হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যার শিকার হন। এখানে তেমন কোনো উঁচু বাঁধ না থাকায় এ বিলে প্রতিদিনই জোয়ারের জল প্রবেশ করত। গণহত্যার দিন পলায়নরত মানুষ বিলের মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বা দৌড়ে অথবা খাল দিয়ে সাঁতরে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ বিলে পিতা ও কাকাসহ মোট ৫ জন স্বজন হারিয়েছিলেন মনোজ কান্তি রায় (আলাদিপুর)। বিলে জোয়ারের জল প্রায় এক ফুট উঁচু ছিল। এর মধ্যে পালাতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ বিলে মারা পড়ে। পুটিমারি গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ দাস এদিন তার পিতাকে এ বিলে হারিয়েছিলেন। ঘরের দরজায় তালা দিয়ে তিনি নিজের স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী ও মা-বাবাকে নিয়ে বিলের মধ্যে ঝাঁপ দিলে পাকসেনাদের গুলি পেছন থেকে তার বাবার গায়ে লাগে। সঙ্গে-সঙ্গে পানির মধ্যে পড়ে তিনি মারা যান। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা বিলের ধারে বসে এক-এক জনের মাথা লক্ষ করে গুলি করে।
বিল ছাড়াও বিভিন্ন বাগান, ঘর, এমনকি গাছের শাখায় আশ্রয় নেয়া মানুষজন পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হন। চুকনগর বাজার সংলগ্ন কালীমন্দিরে আশ্রয় নেয়া কিছু মানুষ এ গণহত্যার শিকার হন। মন্দিরে বসা অবস্থায় পিতা- পিতৃব্য ও অন্য স্বজন মিলিয়ে ৭ জনকে হারিয়েছিলেন পরবর্তীকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পূর্ণেন্দু গাইন। তারা কালীবাড়িতে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় ৪-৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও কয়েকজন রাজাকার- সেখানে এসে উপস্থিত হয় এবং গুলি ছোড়া শুরু করে। তার চোখের সামনেই বারান্দায় থাকা তার বাবা, কাকা, কাকার বড় ছেলে, এক জেঠতুতো ভাই, জেঠাতো ভাইয়ের ছেলে, পিসেমশাই এবং তার ছেলে গুলিতে নিহত হয়। এ কালীমন্দিরের পেছন দিকে একটি বড় বটগাছ ছিল। সেটি তখন কাত হয়ে পড়ায় গাছের গোড়ায় শেকড়ের নিচে বেশ বড় গর্ত তৈরি হয়েছিল। গোলাগুলিতে আতঙ্কিত অনেকে এ গর্তে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে তাদের প্রায় সকলে নিহত হন। এছাড়া চুকনগর গ্রামের একটি গাবগাছ, বেশ কয়েকটি নারকেল গাছ এবং বাঁশঝাড়ে প্রাণভয়ে মানুষ আশ্রয় নিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান। স্থানীয় দাসপাড়ায় ঢুকে পাকসৈন্যরা বহু মানুষকে হত্যা করে। এভাবে প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা একটানা গণহত্যা চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যশোরের দিকে চলে যায়।
গণহত্যা শেষ হওয়ার পর মালতিয়া গ্রামের এরশাদ আলী মোড়ল বধ্যভূমিতে ছয় মাসের একটি কন্যা শিশুকে দেখতে পান। শিশুটি তার মৃত মায়ের স্তন্য পান করছিল। তিনি শিশুটিকে তুলে নিয়ে মালতিয়া গ্রামের মান্দার দাসের তত্ত্বাবধানে রাখেন। মান্দার দাস শিশুটিকে লালন-পালন করেন। গণহত্যার মর্মন্তুদ সাক্ষী হিসেবে রাজকুমারী সুন্দরী নামের সেই শিশুটি এখনো বেঁচে আছে।
মৃতের সংখ্যা : চুকনগর গণহত্যার নিষ্ঠুরতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেও সেখানে নিহত মানুষের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা কঠিন। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, অন্তত এক বর্গকিলোমিটার বাজার ও মাঠ, অর্ধ কিলোমিটারের মতো নদীর তীরবর্তী স্থান, একটি মন্দির, একটি বৃহৎ বটগাছসহ বেশকিছু গাছ, চুকনগর বাজারের মাঠ, রাস্তা, চুকনগর, পুটিমারি ও মালতিয়া গ্রাম, পুটিমারির বিল, অন্তত ৫টি পুকুর, দাসপাড়ার বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও বাগান এবং নদীবক্ষ ছিল এ গণহত্যার স্থান। এক প্লাটুনের মতো সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার সৈনিক অন্তত ৫ ঘণ্টা ধরে একতরফা ও বাধাহীনভাবে এখানে নির্বিচার গুলি এবং বেয়নেট দিয়ে গণহত্যা চালায়। গণহত্যার পর পাকিস্তানি হানাদাররা এখান থেকে চলে গেলে গ্রামের লোকজনের মধ্যে অনেকে পরের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাঁশ দিয়ে ঠেলে লাশ নদীতে ফেলেন। বধ্যভূমির এ বিস্তৃতির কারণে প্রত্যক্ষদর্শী কারো পক্ষে মৃতদেহের সংখ্যা গণনা করা সম্ভব ছিল না। এছাড়া মারা যাবার সঙ্গে-সঙ্গে বহু লাশ নদীর স্রোতে ভেসে কিংবা ডুবে গিয়েছিল। গুরুতর আহত অনেকে ভারতে কিংবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যত্র মারা গিয়েছিল। চুকনগরে সেদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার উদ্বাস্তু উপস্থিত ছিল। তাদের বিপুল সংখ্যক এ গণহত্যার শিকার হয়। চুকনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে রাস্তার দক্ষিণ পাশে এবং চুকনগর কলেজের পাশে কিছু মরদেহ গণকবরে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীকালে এ গণকবরে কংকাল পাওয়া যায়।
চুকনগর গণহত্যায় শহীদ ২ শতাধিক ব্যক্তির নাম ও পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তারা হলেন— ভগীরথ দাস (চুকনগর), কালাচান (চুকনগর), বাবুরাম বিশ্বাস (চুকনগর), হবিজান বিবি (মাতা শহরজান বিবি; চুকনগর), সুরেন কুণ্ডু (চুকনগর), দিগম্বর (চুকনগর), সালেহা খাতুন (পিতা ইনছার আলী শেখ; চুকনগর), উৎপল, সুরেন্দ্র কুণ্ডু (মালতিয়া), চিকন মোড়ল (মালতিয়া), বাবুলাল দাস (পুটিমারি), তার স্ত্রী, বাবুলাল দাসের চার কন্যা ও এক পুত্র, কালীপদ বৈরাগী (পিতা দ্বিজবর বৈরাগী; তেলিখালি), ফণীভূষণ বৈরাগী (পিতা দ্বিজবর বৈরাগী, তেলিখালি), কুশীলাল রায় (তেলিখালি), দীনদয়াল মণ্ডল (চিংড়া), রাজকৃষ্ণ সরকার (পিতা স্বরূপ সরকার, পার মাগুরখালী), মঙ্গলময় সরকার (পিতা রাজকৃষ্ণ সরকার, পার মাগুরখালী), মন্মথ রায় (পিতা ভরত রায়, শিবনগর, ডুমুরিয়া), তার স্ত্রী, প্রমীলা রায় (পিতা মন্মথ রায়; শিবনগর), মন্মথ রায়ের জামাতা, অশ্বিনী রায় (পিতা ফকির রায়; শিবনগর), নারায়ণ রায় (পিতা রামচরণ রায়; শিবনগর), অতুল রায়ের স্ত্রী, কুশীলাল সানা (পিতা পাঁচু সানা; শিবনগর), গোবিন্দ সানা (পিতা কুশীলাল সানা; শিবনগর), বনমালী সানা (পিতা কুশীলাল সানা; শিবনগর), অমূল্য (কুশীলাল সানার জামাতা; নোয়াকাঠি, সাহস), কালীপদ সানা (পিতা স্বরূপ সানা; শিবনগর), সুশীল সানা (পিতা বাগান সানা; শিবনগর), সুবোধ সানা (পিতা হরষিত সানা; শিবনগর), হরেন্দ্রনাথ সানা (পিতা বিহারী সানা; শিবনগর), অনিল মণ্ডল (পিতা পঞ্চরাম মণ্ডল; শিবনগর), অতুল মণ্ডল (পিতা দেবনাথ মণ্ডল; শিবনগর), চুনিলাল মণ্ডল (শিবনগর), জিতেন মণ্ডল (পিতা চুনিলাল মণ্ডল; শিবনগর), পঞ্চানন মণ্ডল (পিতা শুকচাঁদ মণ্ডল; শিবনগর), কালীপদ ঘোষ (পিতা নকুল ঘোষ; শিবনগর), পাচিদাসী রায় (পিতা অতুল রায়; শিবনগর), মুকুন্দ রায়ের শ্বশুর, কেশব রায় (পিতা কালীচরণ রায়; আলাদীপুর), প্রফুল্ল রায় (পিতা কালীচরণ রায়; আলাদীপুর), কার্তিক রায় (পিতা কালীচরণ রায়; আলাদীপুর), দেবেন রায় (পিতা কেশব রায়; আলাদীপুর), মদন রায় (পিতা কেশব রায়; আলাদীপুর), শিবপদ রায় (পিতা প্রিয়নাথ রায়; আলাদীপুর), দেবনাথ রায় (আলাদীপুর), অভিরাম মণ্ডল (পিতা ভরত মণ্ডল; আলাদীপুর), নির্মল মণ্ডল (পিতা অভিরাম মণ্ডল; আলাদীপুর), বিনোদবিহারী মোহন্ত (পিতা রাজেন্দ্রনাথ মোহন্ত; কাঞ্চন নগর, মাগুরখালী), অনিল রায় (পিতা নিমাইচাঁদ রায়; কাঞ্চন নগর, মাগুরখালী), দুলাল বিশ্বাস (পিতা সারদা বিশ্বাস; কাঞ্চন নগর, ভাণ্ডারপাড়া), মাদার বিশ্বাস (পিতা দুলাল বিশ্বাস; কাঞ্চন নগর, ভাণ্ডারপাড়া), নীরেন বিশ্বাস (পিতা হাজরা বিশ্বাস; কাঞ্চন নগর, ভাণ্ডারপাড়া), অনন্ত বিশ্বাস (পিতা নীরেন বিশ্বাস; কাঞ্চন নগর, ভাণ্ডারপাড়া), দৈবচরণ মণ্ডল (পিতা নয়ন মণ্ডল; কাঞ্চননগর ভাণ্ডারপাড়া), প্রভাস মণ্ডল (পিতা দৈবচরণ মণ্ডল; কাঞ্চননগর, ভাণ্ডারপাড়া), মণিরাম সানা (চরাইল, ভাণ্ডারপাড়া), শিবদাস সানা (পিতা মণিরাম সানা; চরাইল, ভাণ্ডারপাড়া), নিশিকান্ত বালা (পিতা চণ্ডীচরণ বালা; পূর্ব পাতিবুনিয়া), ঠাকুরদাস বালা (পিতা বিজয় বালা; পূর্ব পাতিবুনিয়া), কালীপদ বালা (পিতা সতীশ বালা; পূর্ব পাতিবুনিয়া), প্রফুল্ল মণ্ডল (পিতা যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল; পূর্ব পাতিবুনিয়া), গৌরপদ মণ্ডল (পূর্ব পাতিবুনিয়া), বিশ্বাসভাজন মল্লিক (পূর্ব পাতিবুনিয়া), সাধু মণ্ডল (পিতা অরবিন্দ মণ্ডল বিন্দু; পূর্ব পাতিবুনিয়া), কেশবলাল মণ্ডল (পিতা রাম মণ্ডল; ঘুরুনিয়া), বিষ্ণুপদ মণ্ডল (পিতা সুরেন মণ্ডল; পশ্চিম পাতিবুনিয়া), বিনোদ সরকার (পিতা রাজমোহন সরকার; কাঠালিয়া), নিমাই সরকার (পিতা গোবর্ধন সরকার; কাঠালিয়া), রাজমোহন সরদার (পিতা শীতল সরদার; কাঠালিয়া), হরিপদ সানা (পিতা শিবরাম সানা; কাঠালিয়া), বীরেন মণ্ডল (পিতা কান্তরাম মণ্ডল; কাঠালিয়া, ডুমুরিয়া), অনিল মণ্ডল (পিতা স্বরূপ মণ্ডল; কাঠালিয়া), জগবন্ধু গোলদার (পিতা মধুসূদন গোলদার; মাগুরখালী), কালীদাস মণ্ডল (পিতা গোপাল মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), ঠাকুরদাস মণ্ডল (পিতা কালীদাস মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), লক্ষ্মী রানি মণ্ডল (স্বামী কালীদাস মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), জনেক মণ্ডল (পিতা হাজারিলাল মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), তপন মণ্ডল (পিতা জনেক মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), ধীরেন মণ্ডল (পিতা পূর্ণচরণ মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), নারায়ণ গোলদার (পিতা ঝড়ু গোলদার; খড়িবুনিয়া), নারায়ণ মণ্ডল (পিতা কুশীলাল মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), শিশুবর মণ্ডল (পিতা বিশ্বনাথ মণ্ডল; খড়িবুনিয়া), নারায়ণ গাইন (পিতা শিশুবর গাইন; খড়িবুনিয়া), কৃষ্ণলাল মণ্ডল (খড়িবুনিয়া), দুর্গাচন্দ্র মণ্ডল (ডুমুরিয়া বাজার), বাবুলাল দাসের ছেলে (ডুমুরিয়া বাজার, দাসপাড়া), অরবিন্দ বালা (কচুবুনিয়া, ডুমুরিয়া), খোকন মণ্ডল (পিতা শান্তি রঞ্জন মণ্ডল; চটচটিয়া), অধর মণ্ডল (পিতা সুখচাঁদ মণ্ডল; ছয়ঘরিয়া, বটিয়াঘাটা), ধীরেন্দ্র নাথ মণ্ডল (পিতা অধর মণ্ডল; ছয়ঘরিয়া, বটিয়াঘাটা), খগেন মণ্ডল (পিতা নেপাল মণ্ডল; ছয়ঘরিয়া, বটিয়াঘাটা), সুধন্য মণ্ডল (পিতা পঞ্চরাম মণ্ডল; ছয়ঘরিয়া, বটিয়াঘাটা), জিতেন্দ্রনাথ বৈরাগী (পিতা বরদা কান্ত বৈরাগী, আউশখালি, বটিয়াঘাটা), কিরণচন্দ্র বৈরাগী (পিতা বরদা কান্ত বৈরাগী, আউশখালি, বটিয়াঘাটা), চারুচন্দ্র বৈরাগী (পিতা বরদা কান্ত বৈরাগী, আউশখালি, বটিয়াঘাটা), শিবপদ বৈরাগী শিবে (পিতা বরদা কান্ত বৈরাগী, আউশখালি, বটিয়াঘাটা), শরৎ বৈরাগী (আউশখালি, বটিয়াঘাটা), শচীন্দ্রনাথ বৈরাগী (আউশখালি, বটিয়াঘাটা), দীনদয়াল বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), পুলিন বৈরাগী (পিতা স্বরূপ বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), সুধীর বৈরাগী (পিতা আশুতোষ বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), নগেন বৈরাগী (পিতা রমাকান্ত বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), রুহিনী বৈরাগী (পিতা নীলকান্ত বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), কৃষ্ণপদ বৈরাগী (পিতা রুহিনী বৈরাগী; আউশখালি, বটিয়াঘাটা), মান্দার (রুহিনী বৈরাগীর শ্যালিকার ছেলে), মনোহর মণ্ডল (বয়ারভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা), ছোট্ট মণ্ডল (মনোহর মণ্ডলের ছোটভাই; বয়ারভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা), বিপ্রদাস মণ্ডল (বয়ারভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা), অবিনাশ চন্দ্র গাইন (পিতা নটবর গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), বাদল গাইন (পিতা নটবর গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), রণজিৎ গাইন (পিতা বাদল গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), ঈশ্বর চন্দ্র গাইন (পিতা হীরালাল গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), বিনয় কুমার গাইন (পিতা ঈশ্বরচন্দ্র গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), রণজিৎ কুমার গাইন (পিতা বাদল গাইন; দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), মালতি গাইন (দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), সৌরভী গাইন (দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), অমর চন্দ্র গাইন (দাউনিয়াফাঁদ, বটিয়াঘাটা), মুকুন্দ রায় (পিতা কালীপদ রায়; বটিয়াঘাটা), নিতাই রায় (পিতা বিদ্যাধর রায়; বটিয়াঘাটা), রাধাকান্ত রায় (পিতা ফকির রায়, বটিয়াঘাটা), সুধীর রায় (পিতা ফকির রায়, বটিয়াঘাটা), হরিদাস রায় (পিতা ফকির রায়, বটিয়াঘাটা), প্রভাস মণ্ডল (পিতা সূর্যকান্ত মণ্ডল, বটিয়াঘাটা), রামচরণ মহলদার (পিতা কালীচরণ মহলদার, বটিয়াঘাটা), সুশীল সানা (পিতা বাগান সানা; বটিয়াঘাটা), খগেন্দ্রনাথ সরকার (পিতা খোকন সরকার; বটিয়াঘাটা), রসিক সরকার (পিতা বরদা সরকার; বটিয়াঘাটা), তারাপদ ফৌজদার (পিতা নদের চাঁদ ফৌজদার; বটিয়াঘাটা), সুধীর ফৌজদার (পিতা নদের চাঁদ ফৌজদার; বটিয়াঘাটা), অধীর ফৌজদার (পিতা দুখীরাম ফৌজদার; বটিয়াঘাটা), মনু সরকার (পিতা জ্যোতিষ সরকার; বটিয়াঘাটা), সন্যাসী বালা (পিতা বাবুরাম বালা; বারুই আবাদ, বটিয়াঘাটা), চুনী রানি বালা (স্বামী সন্যাসী বালা; বারুই আবাদ, বটিয়াঘাটা), দীনবন্ধু বালা (পিতা সন্যাসী বালা; বারুই আবাদ, বটিয়াঘাটা), আনারতি বালা (পিতা দীনবন্ধু বালা; বারুই আবাদ, বটিয়াঘাটা), অক্ষয় মণ্ডল (পিতা বাণীকান্ত মণ্ডল; হাটবাটী, বটিয়াঘাটা), পাঁচু মণ্ডল (পিতা মোংলা মণ্ডল; হাটবাটী, বটিয়াঘাটা), গুরুদাস রায় (পিতা দীনবন্ধু রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), লক্ষ্মীকান্ত রায় (পিতা দীনবন্ধু রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), রমেশ রায় (পিতা সাগর রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), কৃষ্ণপদ রায় (পিতা জ্ঞানদাকান্ত রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), অধীর জোদ্দার (পিতা নটবর জোদ্দার; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), হরিপদ জোদ্দার (পিতা কালীচরণ জোদ্দার; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), মহেন্দ্র জোদ্দার (পিতা কালীচরণ জোদ্দার; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), গুরুদাস জোদ্দার (পিতা সন্তোষ জোদ্দার; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), কালীপদ রায় (পিতা বলরাম রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), দীনবন্ধু রায় (পিতা উত্তর রায়; কাঠামারী, বটিয়াঘাটা), রামচন্দ্র জোদ্দার (পিতা কান্তরাম জোদ্দার; গোপালখালী, বটিয়াঘাটা), মনোজ জোদ্দার (পিতা রামচন্দ্র জোদ্দার; গোপালখালী, বটিয়াঘাটা), নিরঞ্জন জোদ্দার নিরু (পিতা রামচন্দ্র জোদ্দার; গোপালখালী, বটিয়াঘাটা), চিত্ত জোদ্দার (পিতা রামচন্দ্র জোদ্দার; গোপালখালী, বটিয়াঘাটা), বিমল জোদ্দার (পিতা শশধর জোদ্দার; গোপালখালী, বটিয়াঘাটা), বিনয়কৃষ্ণ জোদ্দার (পিতা ফকিরচাঁদ জোদ্দার; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), জ্ঞান জোদ্দার (পিতা ফকিরচাঁদ জোদ্দার; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), অমল জোদ্দার (পিতা পঞ্চানন জোদ্দার; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), প্রফুল্ল বিশ্বাস (পিতা বাণীকান্ত বিশ্বাস; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), ললিত জোদ্দার (পিতা পঞ্চরাম জোদ্দার; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), জগন্নাথ মণ্ডল (পিতা রাজবিহারী মণ্ডল; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), নরেন মণ্ডল (পিতা বরদা মণ্ডল; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), হরিভক্ত মণ্ডল (পিতা বরদা মণ্ডল; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), পবন মণ্ডল (পিতা বরদা মণ্ডল; কাতিয়ানাংলা, বটিয়াঘাটা), বৈদ্যনাথ রায় (পিতা যতীন রায়; আমতলা, বটিয়াঘাটা), খোকন রায় (পিতা নলিনী রায়; আমতলা, বটিয়াঘাটা), ভক্তরাম মণ্ডল (পিতা গঙ্গাধর মণ্ডল; মাছালিয়া, বটিয়াঘাটা), অতুল মণ্ডল (পিতা গঙ্গাধর মণ্ডল; মাছালিয়া, বটিয়াঘাটা), নন্দলাল মণ্ডল (পিতা অতুল মণ্ডল; মাছালিয়া, বটিয়াঘাটা), মাখনলাল মণ্ডল (পিতা মান্দার মণ্ডল; মাছালিয়া, বটিয়াঘাটা), বিপ্রদাস মণ্ডল (পিতা শশধর মণ্ডল; বয়ারভাঙা, বটিয়াঘাটা), মনোহর রায় (পিতা প্রসন্ন রায়; বয়ারভাঙা, বটিয়াঘাটা), কানাইলাল মণ্ডল (পিতা পরশ মণ্ডল; বয়ারভাঙা, বটিয়াঘাটা), লালচাঁদ মণ্ডল (পিতা হরিচরণ মণ্ডল; বয়ারভাঙা, বটিয়াঘাটা), ভবনাথ হালদার (পিতা রামচরণ হালদার; হালিয়া, বটিয়াঘাটা), নারায়ণ রায় (হালিয়া, বটিয়াঘাটা), মহাদেব জোদ্দার (পিতা চুণ্টিরাম জোদ্দার; হালিয়া, বটিয়াঘাটা), জ্ঞানেন্দ্রনাথ মহলদার (পিতা নীলাম্বর মহলদার; হালিয়া, বটিয়াঘাটা), নিরঞ্জন মণ্ডল (পিতা কালীচরণ মণ্ডল; সাচিবুনিয়া, বটিয়াঘাটা), অরবিন্দ রায় (পিতা মহানন্দ রায়; কচুবুনিয়া, বটিয়াঘাটা), বেলকা মল্লিক (পিতা ভেজাল মল্লিক; দক্ষিণ রাঙ্গেমারী, বটিয়াঘাটা), দয়াল ঢালী (পিতা শশীবর ঢালী; জলমা, বটিয়াঘাটা), সতীশ চন্দ্র বৈরাগী (পাথরীঘাটা, বটিয়াঘাটা), সুরেন্দ্রনাথ বাছাড় (পিতা চরণ বাছাড়; বসুরাবাদ, বটিয়াঘাটা), সুবল গোলদার (পিতা নটবর গোলদার; ঝড়ভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা), কৃষ্ণদাস মণ্ডল (কাতিনাংলা, বটিয়াঘাটা), ডা. নকুলচন্দ্র সরকার (মাইলমারা, বটিয়াঘাটা), শিবপদ ঢালী (পিতা অনন্ত ঢালী; দেবীতলা, বটিয়াঘাটা), নির্মল চন্দ্র (গল্লামারী), তার স্ত্রী, হরিবর মিস্ত্রী (হেতাইলবুনিয়া, বটিয়াঘাটা), তার ছোটভাই, হরিবর মিস্ত্রীর তিন ছেলে, গৌরপদ বিশ্বাস (পিতা সুধন্য বিশ্বাস; হেতাইলবুনিয়া, বটিয়াঘাটা), ফণী বৈরাগী (পিতা শিশুবর বৈরাগী; তেলিখালী, বটিয়াঘাটা), কালী বৈরাগী (পিতা শিশুবর বৈরাগী; তেলিখালী, বটিয়াঘাটা), হরিদাস রায় (বুনরাবাদ, বটিয়াঘাটা), মনোজ মণ্ডল (গোয়ালখালি, বটিয়াঘাটা), মনোজ মণ্ডলের পিতা, রসিকলাল মণ্ডল (মাইটভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা) এবং বাহাদুর মণ্ডল (মাইটভাঙ্গা, বটিয়াঘাটা)। [দিব্যদ্যুতি সরকার]
তথ্যসূত্র: স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার; মুনতাসীর মামুন (সম্পা.), চুকনগরে গণহত্যা, ঢাকা, বাংলাদেশ চর্চা ২০০২; রাশেদুর রহমান (সম্পা.), খুলনা ১৯৭১ : অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, ঢাকা, প্রথমা ২০১৩; স ম বাবর আলী, স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান, খুলনা, ডরোথী রানা প্রকাশনী ১৯৯১
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড