চুনাতি যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা)
চুনাতি যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১০ই ডিসেম্বর। চুনাতি ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে যৌথবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ-যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে অর্ধ-শতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অপরদিকে কয়েকজন ভারতীয় শিখ সেনা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই লাকসামের সঙ্গে বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল এবং এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ও যুদ্ধসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতেন। লাকসামে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লাকসাম থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরিতে ক্যাম্প স্থাপন করে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন কমান্ড ৮ই ডিসেম্বর লাকসামে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ শুরু করে। হরিশ্চর স্কুল ঘাঁটি ও লাকসাম জংশন সংলগ্ন সিগারেট ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন অবস্থানের ওপর বিমান আক্রমণ চালিয়ে তিন দিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘেরাও করে ফেলে। দুদিন ধরে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারে যে, তারা যৌথবাহিনী কর্তৃক চতুর্দিক থেকে ক্রমশ ঘেরাও হয়ে পড়ছে। তাই তারা চাঁদপুর হয়ে ঢাকা পালানোর চেষ্টা করে। ১০ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী লাকসাম জংশন ছেড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশে মুদাফ্ফরগঞ্জ সড়ক পথে পালাতে থাকে। পালানোর সময় ভারতীয় বাহিনী লাকসামের চুনাতি গ্রামে এবং মুক্তিবাহিনী শ্রীয়াং ও বাংলাইশ গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা চুনাতি ব্রিজের পার্শ্বে ডিফেন্স নিলে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর এম্বুশে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর শিখ সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। ফলে উভয় পক্ষ শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং একে অন্যকে বেয়নেট দিয়ে আক্রমণ করতে থাকে। ২ ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক যুদ্ধের পর উভয় পক্ষের সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে ঢাকার দিকে পালাতে সক্ষম হয়। চুনাতি যুদ্ধে অর্ধ-শতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং কয়েকজন ভারতীয় শিখ সেনা শহীদ হয়। [ইমন সালাউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড