চুলকাঠি বধ্যভূমি (বাগেরহাট সদর)
চুলকাঠি বধ্যভূমি (বাগেরহাট সদর) বাগেরহাট সদর এলাকার চুলকাঠি বাজারে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধকালে কসাই হিসেবে পরিচিত রাজাকার কমান্ডার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালে চুলকাঠি বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করেন। রাজাকার কমান্ডার সিরাজ মাস্টার (পিতা হারেজ শেখ, গোটাপাড়া; মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত)-এর নেতৃত্বে রাজাকাররা অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে এ ক্যাম্প আক্রমণ করে। এতে মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ শহীদ হন। ১৩ই অক্টোবর এখানে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনরায় যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধের রেশ ধরে রাজাকাররা ১৪ই অক্টোবর চুলকাঠি বাজার এবং আশেপাশের এলাকায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠন চালায়। গণহত্যা চলাকালে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে চুলকাঠি কাঠের ব্রিজের ওপর বেয়নেট দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়। এ সময় তারা বাজারের অনেকগুলো দোকান এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরবর্তীতে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা এ বধ্যভূমিতে একাধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। চুলকাঠি বধ্যভূমিতে শহীদ ১১ জনের পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন- চুলকাঠি গ্রামের যজ্ঞেশর পাল, দূর্গাচরণ দেবনাথ, সুনীল কুমার দেবনাথ (পিতা দূর্গাচরণ দেবনাথ), সন্তোষ দেবনাথ (পিতা দূর্গাচরণ দেবনাথ), ঘনশ্যামপুর গ্রামের রাখাল চন্দ্ৰ দেবনাথ, খোরশেদ মল্লিক, বেতগা গ্রামের শশী ভূষণ দাস, বাসুদেব দাস (পিতা শশী ভূষণ দাস), দুলাল চন্দ্র দেবনাথ (খাজুরা), বিজয় কৃষ্ণ দাস (রনজিতপুর), মন্মথ দেবনাথ (চুড়ামনি)। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ সকল শহীদদের স্মরণে চুলকাঠি বাজারে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড