You dont have javascript enabled! Please enable it!

চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়া গণহত্যা (চকরিয়া, কক্সবাজার)

চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়া গণহত্যা (চকরিয়া, কক্সবাজার) সংঘটিত হয় ২৭শে এপিল। এতে কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ এবং বহু সংখ্যক আহত ও নির্যাতনের শিকার হন। ২৭শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল চট্টগ্রাম কালুরঘাট থেকে প্রথম চকরিয়া পর্যন্ত আসে। কক্সবাজার মহকুমায় (বর্তমান জেলা) তাদের এটি ছিল প্রথম অনুপ্রবেশ। পাকিস্তানি বাহিনী চকরিয়া কলেজ, চকরিয়া থানা ও বাটাখালী ডাকবাংলোতে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে হানাদার বাহিনী এ ক্যাম্প থেকে চকরিয়ায় অনেকগুলো গণহত্যা সংঘটিত করে। ওয়াপদা অফিস ছিল তাদের গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্ৰ।
২৭শে এপ্রিল দুপুরের দিকে চিরিঙ্গা-লক্ষ্যারচর এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর আক্রমণ করে। এ-সময় তারা চিরিঙ্গার সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকিস্তানি বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্যকে নির্বচারে গুলি করে হত্যা করে। ওয়াপদা অফিস সংলগ্ন হিন্দুপাড়ায় পরিতোষ দাশ, মণীন্দ্র লাল দাশ, রমণীনাথ দে, সুরেন্দ্র নাথ দে, মণীন্দ্র নাথ দে- সহ কয়েকজনকে হত্যা করে।
চিরিঙ্গা বাজারের পাশে ডাক্তার হালিমের চেম্বারের সামনে থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় ফণীন্দ্র দাশের পুত্র পরিতোষ চন্দ্র দাশকে ধরে নিয়ে যায়। এক পাকিস্তানি সৈন্য তার দিকে রাইফেল তাক করলে পরিতোষ কলেমা পড়া শুরু করেন। পাকিস্তানি সৈন্য বন্দুক সরিয়ে নেয়। পরে রাজাকারদের কথায় পাকিস্তানি সৈন্যরা লুঙ্গি খুলে পরীক্ষা করে সে মুসলমান কি-না। তারপর তাকে ধরে নিয়ে ওয়াপদার সম্মুখস্থ বিলে গুলি করে হত্যা করে। তারা চিরিঙ্গার হিন্দুপাড়ায় সারদা কিশোর দাশের পুত্র মণীন্দ্রলাল দাশ ও জগন্নাথ মালাকারের পুত্র সারদা চরণ মালাকারকে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় তারা হাবিলদার আবুল হোসেনকে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে তার সহোদর আমির হোসেনকে ধরে এনে নির্যাতন শেষে হত্যা করে। লক্ষ্যারচর নাথপাড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী এদিন রমণীনাথ দে (পিতা তারা কিংকর নাথ)-কে ঘরের ভেতর, সুরেন্দ্র নাথ (পিতা পূর্ণ চন্দ্র নাথ)-কে চকরিয়া বিমানবন্দরে এবং মণীন্দ্র নাথ দে (পিতা পূর্ণ চন্দ্র নাথ)-কে চকরিয়া হাইস্কুল মাঠে গুলি করে হত্যা করে। এ গণহত্যায় তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক নিরীহ আরো অনেককে নির্যাতন ও হত্যা করে। এ-সময় পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা সারদা কিশোর দাশ (মহাজন), জীবন চন্দ্র, জীবন চন্দ্র, অধীর চন্দ্র শীল, হাবিলদার আবুল কালাম, হালকাকারার দেলোয়ার দেলোয়ার হোসেন, দক্ষিণ লক্ষ্যারচরের মৌলভী আবদুল অদুদ, আনোয়ার হোসেন বাঙালি প্রমুখসহ শতাধিক মানুষের বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এ গণহত্যার পর শহীদদের এখানকার শ্মশানে সমাহিত করা হয়। চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ায় শহীদ মনীন্দ্রলাল দাশ-এর নামে একটি বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!