চারুয়াপাড়া গণহত্যা (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ)
চারুয়াপাড়া গণহত্যা (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় জুন মাসে। এতে ২৭ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন। তাদের অনেকে শরাণার্থী শিবির-এ আশ্রয় নিতে ভারতে যাওয়ার সময় এখানে প্রাণ হারান।
ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইঝপাড়া ইউনিয়নের একটি হাট চারুয়াপাড়া। মাইঝপাড়া ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর থানাধীন ছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের একদিন বেলা ১১টার দিকে দুর্গাপুরের বিরিশিরি পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে ১০-১২ জন পাকিস্তানি সেনা চারুয়াপাড়া হাটে আসে। তাদের পথপ্রদর্শক ছিল রাজাকার- শাহনেওয়াজ ও সোহগীপাড়ার কাইউম। উল্লেখ্য, সোহাগীপাড়ার অনেকে রাজাকার ছিল। তাদের দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা একটি প্লাটুন গঠন করেছিল। এজন্য সোহাগীপাড়া গ্রাম এখনো দালালপাড়া নামে কুখ্যাত।
পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের আসার সংবাদ পেয়ে চারুয়াপাড়া হাটের লোকজন পালাতে শুরু করে। পলায়নরত লোকদের অন্তত ৩৫ জন পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে। তাদের ওপর প্রথমে পাকসেনারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। এরপর সারিবদ্ধ করে হাটের মধ্যে দাঁড় করিয়ে গুলি চালায়।
এতে ঘটনা স্থলে ২৭ জন মানুষ প্রাণ হারান। বাকিরা দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করলেও কেউ-কেউ গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। নিহত ও আহতদের অনেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ পথে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাচ্ছিলেন। বাইরের লোক হওয়ায় অধিকাংশ মানুষের পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয় যে কয়জন সেদিন নিহত হন, তারা হলেন- হাসিম উদ্দিন (উত্তর পঞ্চাননপুর), সফির উদ্দিন (বল্লবপুর), আবদুল গফুর (চারুয়াপাড়া), দিদার আলী (চারুয়াপাড়া), বুছা মিয়া (চারুয়াপাড়া) ও লাল মিয়া (রায়পুর)। পাকসেনাদের গুলিতে জমির উদ্দিন (রায়পুর) মারাত্মকভাবে আহত হন। চারুয়াপাড়া হাটের পাশের কয়েকটি বাড়িতে পাকিস্তানি হানাদাররা নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। খায়রুন্নেছাসহ কয়েকজন নারী এখানে সম্ভ্রম হারান। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড