চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (কেশবপুর, যশোর)
চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (কেশবপুর, যশোর) সংঘটিত হয় দুবার – প্রথমবার ১১ই অক্টোবর ও দ্বিতীয়বার ৬ই ডিসেম্বর। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার- নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। অপরপক্ষে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন আহত হন।
চিংড়া বাজারটি কেশবপুর থানার সাগরদাড়ী গ্রামের মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির নিকটবর্তী কপোতাক্ষ নদের পাশে অবস্থিত। এটি কেশবপুর থানার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখানে একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পের কমান্ডার ছিল মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন এবং তার সহযোগী ছিল মো. বিল্লাহ হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, আজিম সরকার, কাজি ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল প্রমুখ। ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর রাজাকাররা বিভিন্ন সময় এলাকার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে ত্রাস সৃষ্টি করে। জুলাই মাসের প্রথম দিকে রাজাকাররা এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাট শুরু করে এবং ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। রাজাকারদের অত্যাচার-নির্যাতনে এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এর প্রতিকারের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১১ই অক্টোবর তাঁরা প্রথমবার চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধা চাঁদতুল্য গাজী ও শাওন (বগা মহাদেবপুর) শহীদ হন।
৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয়বার চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। রাজাকারদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ যখন অতিষ্ঠ, তখন সাব-সেক্টর কমান্ডার শফিউল্লাহ বিষয়টি অবগত হয়ে ক্যাম্পটি উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার কাজী রফিকের নেতৃত্বে বুড়িহাটির কমান্ডার মনি, গ্রুপ কমান্ডার শওকত আকবর, হান্নান, কাশেম ও মশিয়ারসহ ১৫-২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল এ আক্রমণ রচনা করে। চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পে তখন ৫০-৬০ জনের মতো রাজাকার অবস্থান করছিল। মুক্তিবাহিনী দুদলে বিভক্ত হয়ে নদীর বিপরীত দিকে আখক্ষেতে অবস্থান নেয়। আক্রমণ রচনার সুবিধাজনক আবস্থান দেখিয়ে দেয়ার জন্য একজন করে স্থানীয় যুবক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাখা হয়। যুবকদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্পের নিকট পৌঁছে ক্যাম্প লক্ষ করে গুলি চালান। রাজাকাররা পাল্টা গুলি চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এক ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে কপালে গুলি লেগে দলনেতা রফিক আহত হন। পরনের লুঙ্গি ছিঁড়ে কপাল বেঁধে আহত অবস্থায় তিনি সাঁতরে কপোতাক্ষ নদ পার হন। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে কাজী রফিকের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ আলী (পাত্রপাড়া, কেশবপুর), আ. ছাত্তার, শাহাবুদ্দিন, খলিলুর রহমান, আব্দুল লতিফ, শহিদুল, ফজর আলী (মেহেরপুর), কাজী আশরাফ, লিয়াকত, তৌহিদ, করিম, বশির, আবু আহম্মেদ, মতলেব মাস্টার (চুরমনকাটি, যশোর), শেখ সালাম, মাহবুরর রহমান, মো. আফসার (কলারোয়া, ধানদিয়া) ও আবু আহম্মদ। [ঈশিতা আক্তার মুক্তি]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড