চিকলী ব্রিজ গণহত্যা (সৈয়দপুর, নীলফামারী)
চিকলী ব্রিজ গণহত্যা (সৈয়দপুর, নীলফামারী) নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও -রাজাকার-রা এখানে অনেক মানুষকে হত্যা করে। চিকলী ব্রিজ সৈয়দপুর উপজেলার ২নং কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বাজারের পাশে অবস্থিত। জুন মাসের শেষের দিকে সৈয়দপুরের চওড়া বাজারে শান্তি কমিটি-র সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সভায় কেউ না যাওয়ায় কাশিরাম পাড়ার ইউনুস আলীর ওপর পাকসেনারা গুলি করে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে সঙ্গে-সঙ্গে তিনি নিহত হন। এ হত্যায় নেতৃত্ব দেয় তাজির উদ্দিন (শান্তি কমিটির সদস্য, নিয়ামতপুর) ও শাহজাহান চৌধুরী (পাকধারা, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান) পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীরা কাশিরাম বেলপুকুড় ইউনিয়ন, চওড়া বাজার ও চওড়া পালপাড়া থেকে অনেককে ধরে নিয়ে চিকলী ব্রিজের পাশে জঙ্গলে হত্যা করে। ব্রিজের পূর্বপাশে তিস্তা নদীর একটি সাইড ক্যানেল ছিল। চওড়া পালপাড়ার সীতারাম পাল চিকলী ব্রিজে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ৪ দিন পর মারা যান। পাকসেনারা শান্তি কমিটির সদস্যদের সাহায্যে চওড়া কুমারপাড়ার সতীশ চন্দ্র পাল, রজিন্দ্র পাল ও সীতানাথ পালকে বেধে চিকলী ব্রিজের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে সতীশ চন্দ্র পাল ও রজিন্দ্র পালকে গুলি করে হত্যা করে। শান্তি কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ না করায় পাকিস্তানি সেনারা কুমারপাড়ায় গুলিবর্ষণ করে। এতে অমূল্য পাল ও সাথী বালা নিহত হন। এদিন শচিন্দ্র পালের বুকে গুলি লাগে এবং তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। সৈয়দপুরের পালপাড়ায় কয়েকশ হিন্দু পরিবার বসবাস করত। ৪০-৫০ জন পাকসেনা শতাধিক রাজাকার নিয়ে পালপাড়ায় আক্রমণ করে। তারা গোটা পাড়া ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে ৩০- ৪০ জন যুবককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। পাড়ার অনেক বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। ধৃত যুবকদের চিকলী ব্রিজের নিকট হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম গেছে, তারা হলেন- সতীশ পাল, শচীন পাল, সাথী পাল, মেঘনাথ পাল, হৃদয় পাল, অশ্বিন পাল ও হ্যাদানাথ পাল। শান্তি কমিটির সদস্যরা স্থানীয় হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করত। তারা হৃদয় নাথ পাল, নরেন্দ্র নাথ পাল, রতিকান্ত পাল ও যোগেন্দ্র নাথ পালকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে। [আহম্মেদ শরীফ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড