চিতোষী ক্যাম্প অপারেশন (লাকসাম, কুমিল্লা)
চিতোষী ক্যাম্প অপারেশন (লাকসাম, কুমিল্লা) পরিচালিত হয় নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। মুক্তিযোদ্ধারা এদিন মনোহরগঞ্জ উপজেলার (তৎকালীন লাকসাম) চিতোষীতে মির্জাপুর সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে অভিযান চালান। অতর্কিত আক্রমণে পাকসেনারা টিকতে না পেরে রাতের অন্ধকারে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এফএফ সাব-সেক্টর কমান্ডার এডভোকেট আবুল বাশার, বিএলএফ থানা কমান্ডার সায়েদুল ইসলাম (লাকসাম কলেজের ভিপি) ও বিএলএফ-এর ডেপুটি থানা কমান্ডার এ টি এম আলমগীরের যৌথ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চিতোষী ক্যাম্প আক্রমণ করেন। স্থানীয় রাজাকার- ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে সাতপুকুরিয়া বাজারের বিভিন্ন দোকান ভেঙ্গে এবং আশপাশের হিন্দু বাড়িগুলো জোরপূর্বক দখল করে অনেকগুলো বাঙ্কার তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে পাকসেনাদের প্রধান সহযোগী ছিল চিতোষী শান্তি কমিটির সভাপতি শামসুল হক (সাতপুকুরিয়া) ও সেক্রেটারি, দলিল- লেখক আবদুল লতিফ মাস্টার (ক্যাম্প অপারেশনের পর উভয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত)।
ঘটনার দিন রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে হিরাপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে ৪০-৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল এসে চিতোষী ক্যাম্পের চতুর্দিক ঘেরাও করে। এলএমজি, এসএলআর, তিন ইঞ্চি মর্টার, স্ট্যান্ডগান, চাইনিজ রাইফেল ও হ্যান্ডগ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং রাতের অন্ধকারে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। এভাবে চিতোষী থেকে পাকবাহিনী বিতাড়িত হওয়ার মাধ্যমে <মুক্তিবাহিনী-র একটি সফল বিজয় সূচিত হয়। তৎকালীন বৃহত্তর লাকসামের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, হাসনাবাদ, মির্জাপুর, নোয়াগাঁও, আশিয়াদারি, চাটিতলা, শমসেরপুর, হাঁটিরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা চিতোষী ক্যাম্প অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মো. রফিকুল ইসলাম (মির্জাপুর), ওহিদুজ্জামান (হাঁটিরপাড়), হাসান আহমেদ (লাকসাম পশ্চিমগাঁও), বদিউজ্জামান (হাসনাবাদ), এনায়েত উল্লাহ্ (নোয়াগাঁও), নুরুজ্জামান ভূঁইয়া (মান্দারগাঁও), ছলিম উল্লাহ (দেবপুর), আব্দুল হাদী (দৈয়ারা), অজিউল্লাহ (কেশতলা), আবদুল হামিদ (দিশাবন্দ), সুলতান মাস্টার (শমসেরপুর), সিরাজুল ইসলাম (চাটিতলা), এ বি এম মোক্তার হোসেন (নাওতলী), মাস্টার মো. শাহজাহান (বাদুয়াড়া), সুনীলকান্ত চৌধুরী (মেইশাতুয়া), সৈয়দ লুৎফর রহমান (লাকসামের রাজাপুর), মোতাহার হোসেন চৌধুরী (শরীফপুর), আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (শরীফপুর), মো. মিলন শাহ (শরীফপুর), মো. মোকলেছ (দুর্গাপুর), মো. সেলিম (দিশাবন্দ) প্রমুখ। [ইমন সালাউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড