চিতোষী যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)
চিতোষী যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ২৯শে সেপ্টেম্বর। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা ৪ জন রাজাকার, ২ জন পাকিস্তানি দালাল ও ১ জন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানকে হত্যা করেন। বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়। কয়েকজন বন্দি যুবতী নারীকেও উদ্ধার করা হয়।
এপ্রিলের শেষদিকে চিতোষী বাজারে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় অত্র অঞ্চলে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। এদের কাজ ছিল পাকবাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা ও মুক্তিবাহিনীর খোঁজখবর তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এর সূত্র ধরে পাকসেনারা চিতোষী উচ্চ বিদ্যালয় ও সাত পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মিলিটারি ও রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। উক্ত ক্যাম্পে অবস্থান করে পাকিস্তানি সৈন্যরা অত্র এলাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাকসেনাদের চলাচলের পথ ছিল চিতোষী রেলস্টেশন থেকে শান্তির বাজার এবং চিতোষী বাজার থেকে রামগঞ্জ পর্যন্ত। টহল পথে মে মাসের শেষদিকে জয়নাল আবেদীন নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে। জুন মাসের শেষদিকে পাকসেনারা পদুয়া নিবাসী মোশারফ হোসেন নামে অপর এক মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে তাঁর লাশ ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়।
২৯শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জহিরুল হক পাঠান ও সুবেদার রবের নেতৃত্বে এখানকার পাকবাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য এক অভিযান পরিচালনা করেন। মুক্তিবাহিনীর অপর একটি দল (যার নেতৃত্বে ছিলেন নায়েক আবদুর রব ও হাবিলদার আবদুল আলী) প্রথমোক্ত দলের সঙ্গে যোগ দেয় এবং পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ক্যাম্পটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। প্রথম রাতেই কয়েক জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং পালাবার সময় ৭-৮ জন রাজাকার ধরা পড়ে। অন্যান্য রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাজাকারদের গুলি শেষ হয়ে গেলে সুবেদার জহিরুল হক পাঠান ও কলিম উল্যাহ ভূঁইয়া গুলি করতে-করতে রাজাকার ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা ৪ জন রাজাকার, ২ জন পাকিস্তানি দালাল এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করেন। ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম হস্তগত করেন। কয়েকজন বন্দি যুবতীকেও উদ্ধার করা হয়। ডা. বদরুন নাহারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম এই যুবতীদের চিকিৎসা সেবা দান করেন। [মো. মিজানুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড