You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.10 | চানমারী খেয়াঘাট গণহত্যা (পিরোজপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

চানমারী খেয়াঘাট গণহত্যা (পিরোজপুর সদর)

চানমারী খেয়াঘাট গণহত্যা (পিরোজপুর সদর) ১০ই মে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ নৃশংস গণহত্যায় ৮ জন ছাত্র-যুবক শহীদ হন।
৩রা ও ৪ঠা মে মঠবাড়িয়া থানার সিআই কাজী জালাল উদ্দিন ও ৭০-এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আ. জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার, আর্শেদ মিয়া, আজাহার মৃধা, পরাজিত প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী মোজাম্মেল হক (কেদার মিয়া) ও ইস্কান্দার মৃধার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে মঠবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেনাসদস্য ফখরুদ্দিনকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রাদি দখল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে ৫ই মে মুক্তিযোদ্ধা এমাদুল হক, সওগাতুল আলম সগীর প্রমুখ আত্মগোপন করেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ৮ই মে সিআই জালালের নিকট ফখরুদ্দিন অস্ত্র সমর্পণ করে। এমনি অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক, শামসুল আলম ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ ঐ ঘটনার পরপরই মঠবাড়িয়া ত্যাগ করলে মঠবাড়িয়ার প্রতিরোধব্যূহ ভেঙ্গে পড়ে। সঙ্গে-সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মানুষ হত্যায় নিয়োজিত হয়।
ফখরুদ্দিনের অস্ত্র সমর্পণের সঙ্গে-সঙ্গে হানাদার বাহিনী ঐদিন অপরাহ্ণ ও পরের দিন বেছে-বেছে ৮ জন তরুণকে গ্রেফতার করে। তাদের হাতে গ্রেফতার হন মঠবাড়িয়া কলেজের ভিপি আনোয়ারুল কাদির (পিতা এলেম উদ্দিন, দক্ষিণ সাপলেজা), খুলনার আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্রনেতা জিয়াউজ্জামান (পিতা ডা. মতিউর রহমান, ২নং ওয়ার্ড, মঠবাড়িয়া পৌরসভা), কে এম লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র গোলাম মোস্তফা (পিতা আতাহার আলী, চিত্রা, সাপলেজা), আবদুল মালেক মুন্সি (পিতা আব্দুল গণি মুন্সি, পাতাকাটা, সাপলেজা), বীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল (পিতা শরৎচন্দ্র মণ্ডল, গিলাবাদ, টিকিকাটা), গণপতি হালদার (পিতা নগেন্দ্রনাথ হালদার, বকশির ঘটিচোরা, মঠবাড়িয়া পৌরসভা; যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারকারী। পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র), অমল মণ্ডল (পিতা পরীক্ষিত মণ্ডল, উত্তর ভেচকি, টিকিকাটা) ও সামসুর রহমান বেপারী (স্মরণখোলা, বাগেরহাট)।
৯ই মে রাতে মঠবাড়িয়া বন্দরে শান্তি কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় উপস্থিত ছিল আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার, ইস্কান্দার মৃধা, হেমায়েত সুফী, আনিস মৃধা, আবদুল লতিফ অডিটর, মোজাম্মেল হক, কেদার মিয়া প্রমুখ। সভায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ অবলম্বন করায় ধৃত ৮ জন ছাত্র-যুবককে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ই মে রাতে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন এজাজের নির্দেশে তাদের পিরোজপুরের চানমারী খেয়াঘাটে নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। [মো. মাসুদুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড