You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে চান্দিনা উপজেলা (কুমিল্লা)

চান্দিনা উপজেলা (কুমিল্লা) ১৯৭০ সালের নির্বাচনে -আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্বে বাঙালির নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। চান্দিনাবাসী বুঝতে পারে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ আসন্ন। সারা দেশের ন্যায় তারাও অসহযোগ আন্দোলনে শরিক হয়। এরপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান-এর ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া যে মুক্তি নেই তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সমাবেশে চান্দিনার হাজার হাজার ছাত্র জনতা যোগ দেয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই চান্দিনাবাসী ছিল সচেতন। তখন হারং গ্রামের বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক ন্যাপ নেতা আব্দুল জলিল ভুইয়ার নেতৃত্বে সোচ্চার ছিল চান্দিনাবাসী। তিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই এলাকার সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ এর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের একটি আসন সীমানা ছিল সমগ্র চান্দিনা ও দেবীদ্বার থানা মিলে। আর তৎকালীন জাতীয় পরিষদের এমএনএ ছিলেন দেবীদ্বারের ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাত আলী। তাই যুদ্ধকালীন সময়ে চান্দিনা অঞ্চলে সংগঠক হিসেবে তার ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি চান্দিনা ও দেবীদ্বার থানার দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে প্রাদেশিক পরিষদের এমপিএ চান্দিনার হাজী রমিজ উদ্দিনও ছিলেন বিশিষ্ট সংগঠক।
২৫শে মার্চ পাকবাহিনী ঢাকায় আক্রমণের পর রাত ১২টায় ছাত্রনেতা ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ৩০০ জনের মতো ছাত্র ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে জড়ো হয়। সেখানে চান্দিনারও অনেক ছাত্র উপস্থিত ছিল। এরপর তারা গোপনে আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকে। এছাড়াও ঢাকা থেকে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত ছাত্রনেতা যাদের বাড়ি চান্দিনা ও দেবীদ্বার এলাকায়, এমন অনেকে এলাকায় এসে এবং কুমিল্লা জেলা শহরের অনেক ছাত্রনেতা চান্দিনায় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।
চান্দিনায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে যাঁরা উল্লেখযোগ্য, তাঁরা হলেন— মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া (বারেরা), রমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া এমএলএ, হাজী আব্দুল মালেক ও এডভোকেট আবুল কাসেম, নির্মল দাস (নবাবপুর), ডা. ইব্রাহিম মজুমদার (জামিরাপাড়া), মহিতুল ইসলাম (ইলিয়টগঞ্জ), সিরাজুল ইসলাম (হারং), আব্দুল জব্বার, কফিলউদ্দিন সরকার ও আবুল কাসেম (কলাগাঁও), কালীভূষণ বকসি (হারং), আবদুল মজিদ সরকার (নাওতলা), ডা. ফজলুর রহমান (দলপাড়া), আবু ইউসুফ (কৈকরই), সৈয়দ রেজাউর রহমান (কুমিল্লা), মো. ইয়াছিন মিয়া (নবিয়াবাদ), কমরেড হাফেজ (বতুয়া), আবদুল মমিন সরকার (তুলাগাঁও), আম্বর আলী ডাক্তার (মেহার), ওমর আলী প্রধান (নবাবপুর), আব্দুল মান্নান (জামিরা পাড়া), আবদুর রশিদ (নাওতলা), কাজী মোখলেছুর রহমান (বড়ইয়া কৃষ্ণপুর), মজিদ মাস্টার (কৈকরই), মোসলেম ডাক্তার (নবাবপুর), রমিজ উদ্দিন (বারেরা), মধু মাস্টার (শ্রীমন্তপুর), মাস্টার ফজলুল হক (পানিপাড়া), সুফী নুরুল হক সরকার (সাতগাঁও), মমতাজ উদ্দিন (জাফরাবাদ), আতাউর রহমান মজুমদার (গল্লাই), আবুল কাশেম সরকার (কলাগাঁও), মোহিতুল ফকির (শব্দলপুর), মনিরুজ্জামান (সাতবাড়িয়া), কে এম সামসুল হক (নাওতলা), কাজী জাহাঙ্গীর (চান্দিনা), সুরুজ ভূইয়া (নোয়াগাঁও), হাবিবুল্লাহ (পরচঙ্গা), ডা. আবদুল মালেক সরকার (নাওতলা) প্রমুখ। এঁদের নেতৃত্বে এলাকার ছাত্র- যুবকসহ সাধারণ জনতাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে ভারতে ট্রেনিং-এর জন্য পাঠানো হয়। পাশাপাশি তাঁরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পত্রিকা ও বিভিন্ন রকম প্রচারপত্র বিতরণ করেন। ভারতের পালাটানা, সোনামুড়া, তেজপুর (মেঘালয়), আগরতলা, কামাল চৌমুহনী, সমস্যাহাট, হাতিমারা, কৃষ্ণনগর, বক্সনগর, মেলাঘর ও মির্জানগরে চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নেন।
চান্দিনায় তিনটি বাহিনীর নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হয়- মুক্তিবাহিনী (এফএফ), মুজিব বাহিনী – (বিএলএফ) ও ন্যাপের গেরিলা বাহিনী। যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন আলী আকবর। চান্দিনা, বরুড়া ও বুড়িচং অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন কৈলাইন মিয়া বাড়ির মো. মহিউদ্দিন মিয়া। তিনি চান্দিনার বেশিরভাগ যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ন্যাপের গেরিলা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন কমান্ডার সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এপ্রিলের শেষদিকে চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা-চট্টগ্রাম গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রোডের কাঠেরপুল সাহাপাড়া এলাকার একটি ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
চান্দিনায় পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট চান্দিনার নিকটবর্তী ছিল (১২ কিলোমিটার দূরত্বে) বলে পাকবাহিনী এখানে এসে অপারেশন শেষে আবার চলে যেত।
কুমিল্লা সদর-উত্তর মহকুমার সদর দপ্তর চান্দিনায় ছিল বলে এখান থেকেই এ অঞ্চলের শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় দাউদকান্দির হাসানপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সামাদ কন্ট্রাক্টরকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় নুরুল ইসলাম খানকে। চান্দিনায় শান্তি কমিটির প্রধান ছিল মাইজখার ইউনিয়নের বিডি চেয়ারম্যান গণি মজুমদার (হরিনা)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলো সিরাজ মোক্তার (মাইজখার), শহীদুল্লাহ মাস্টার ওরফে সোনা মিয়া মাস্টার (পিহর), মাওলানা আব্দুল হক (পানিপাড়া), কেরামত আলী (বেলাশহর), দুধ মিয়া ভূঁইয়া (মহিচাইল), আলতাফ হোসেন (মাধাইয়া, মীরগঞ্জ), খালেক আরতদার (নাওতলা), চানু মিয়া, খালেক সরকার (নাওতলা), মানু চেয়ারম্যান (শব্দলপুর), আব্দুর রহমান মৃধা (জোড়পুনি), আব্দুর রহমান (খৈছাড়া), জুলফিকার আলী ভুট্টু (জামিরাপাড়া), ইউসুফ মাস্টার (চান্দিনা সদর), সৈয়দ লুৎফুর রহমান চেয়ারম্যান (চান্দিনা সদর), আব্দুর রহমান (নেহার), চাঁদ মিয়া চৌকিদার (কুটুম্বপুর), আবিদ আলী মেম্বার (ভোমরকান্দি), মালু চেয়ারম্যান (শব্দলপুর), মোসলেম (চান্দিনা সদর), লতিফ (চান্দিনা সদর), মালু ভূঁইয়া (চান্দিনা সদর), আলী আকবর (চান্দিনা সদর), আব্দুল মালেক (মাইজখার), রোস্তম (মাইজখার), কালা সাজা মেখয়ব (মাইজখার), এ কে এম শামসুল হক (মহিচাইল), খালেক (ছেঙ্গাছিয়া), আছমত আলী (খৈছারা), রহম আলী (খৈছারা), রুহুল আমিন (বিশ্বাস), সুরুজ (বিশ্বাস), আব্দুল আজিজ (গল্লাই), আবুল বাসার ( গল্লাই), তাহের (গল্লাই), খালেক মুন্সি (মহারং), সিদ্দিকুর রহমান (মহারং), কসাই কুইট্টা (মহারং), আইল্লা চোরা (ডুমুরা) প্রমুখ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ লুৎফুর রহমানকে পদাধিকারবলে শান্তি কমিটির সদস্য করা হয়। এপ্রিলের শেষদিকে পাকবাহিনী চান্দিনা ও পার্শ্ববর্তী বরকামতা এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু বাড়ি গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দিনভর বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব ও লুণ্ঠন চালিয়ে সন্ধ্যায় তারা ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যায়। এরপর থেকে অতর্কিতে পাকসেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চান্দিনায় এসে অপারেশন চালাত। শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় তারা থানাকেন্দ্রিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালাত। চান্দিনা থানার ওসি নোয়াখালীর রুহুল আমিন ছিল খুবই অত্যাচারী। তার নেতৃত্বে শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাকবাহিনী গল্লাই, পরচঙ্গা, রসুলপুর, কালিয়ারচর, ধেরেরা, মোহনপুর, কঙ্গাই, কেশেরা, রামমোহন, মহিচাইল, নাওতলা, কাশিমপুর, ছেঙ্গাগাছিয়া, দোতলা, রামপুর, কলাগাঁও ও দরানিপাড়াসহ বহু গ্রাম লুট করে ও জ্বালিয়ে দেয়। কাশেমপুর, কঙ্গাই, হারং ও মহিচাইল বাড়ইপাড়া এলাকায় পাকসেনারা গণহত্যা, নারীনির্যাতন ও লুটপাট চালায়। পাকবাহিনী কাঠেরপুল সাহাপাড়ায় (পুলঘাটা) লোকজন ধরে এনে জবাই করে হত্যা করত। ৭ই জুলাই ডা. মো. সায়েদ আলী মাস্টার (চান্দিয়ারা), সোনা মিয়া (ছায়াকোট তুলাতুলি) এবং মো. আলী মিয়া (ছায়াকোট)-কে শান্তি কমিটির মিটিং-এ যোগদানের কথা বলে বাড়ি থেকে এনে কাঠেরপুল ব্রিজের নিচে জবাই করে হত্যা করা হয়। পাকবাহিনী ২০শে জুলাই কাসেমপুরের পশ্চিমপাড়া জগবন্ধু মাস্টারের বাড়ির উঠানে মাধাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু সরকারসহ মোট ৮ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এটি কাসেমপুর পশ্চিমপাড়া গণহত্যা নামে পরিচিত। ১২ই সেপ্টেম্বর তারা মহিচাইল থেকে ৬ জনকে ধরে এনে প্রথমে খেজুর কাঁটা দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় এবং পরে ছেঙ্গাগাছিয়া পুলের নিকট গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনা – ছেঙ্গাগাছিয়া পুল গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। ৩রা অক্টোবর দুপুরে তারা গল্লাই ইউনিয়নের কঙ্গাই উত্তরপাড়া বড়বাড়িতে হানা দিয়ে ৭ জনকে হত্যা করে, যা কঙ্গাই বড়বাড়ি গণহত্যা হিসেবে অবহি। ২৭শে অক্টোবর তারা পুনরায় কঙ্গাই উত্তরপাড়া বড়বাড়ির আব্দুল গফুরের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছামাদের বাড়িতে প্রবেশ করে ১০ জন সাধারণ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় হানাদার বাহিনী হাড়িখোলা ব্রিজের নিচ দিয়ে পাড়াপাড়ের সময় একটি বড় নৌকা বোঝাই শরণার্থীদের ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। হাড়িখোলা ব্রিজ গণহত্যায় নিহতদের অনেকের লাশ নদীতে ভাসতে দেখা যায়। চান্দিনা সদরের নিকটে খৈছাড়ার আব্দুর রহমান রাজাকার- ছিল খুব অত্যাচারী। সে নিয়মিত খোঁজ নিত কার ঘরে যুবতী মেয়ে আছে এবং দলবল নিয়ে যুবতী মেয়েদেরকে ধরে এনে চান্দিনা থানায় পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিত। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তথ্য পাকবাহিনীকে সরবরাহ করত। যুদ্ধশেষে তাকে ও সুজাত আলীকে হত্যা করা হয়।
চান্দিনায় পাকবাহিনীর আলাদা কোনো নির্যাতনকেন্দ্র ছিল না। থানায় লোকজন ধরে এনে অত্যাচার-নির্যাতন চালাতো বলে থানাই ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র। তবে চান্দিনার নিকট ইলিয়টগঞ্জের গুমতা উচ্চ বিদ্যালয়ে মেজর চেংগিস খানের নেতৃত্বে একটি নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। ইলিয়টগঞ্জ গুমতা উচ্চ বিদ্যালয় নির্যাতনকেন্দ্রে চান্দিনার অনেককে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো।
চান্দিনায় দুটি বধ্যভূমি ও ৩টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- চান্দিনা সদরে কাঠেরপুল সাহাপাড়া বধ্যভূমি-, ঢাকা-চট্টগ্রাম গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রোডে হাড়িখোলা ব্রিজ বধ্যভূমি, মাধাইয়ার কাসেমপুর গণকবর, গল্লাইয়ের কঙ্গাই গণকবর ও মহিচাইলের বারইপাড়া গণকবর।
১১ই ডিসেম্বর সহস্রাধিক পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের দোসর রাজাকাররা পালানোর উদ্দেশ্যে বরুড়ার ঝলম হয়ে রামমোহন দিয়ে চান্দিনা আসার পথে রামমোহন, এতবারপুর ও হারং উদালিয়ায় তাদের সঙ্গে চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধা ও <মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ হয়। হারং উদালিয়ার যুদ্ধে ১৪৫৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এতে অনেক সাধারণ মানুষও নিহত হয়। পরের দিন ১২ই ডিসেম্বর ফাঐ বটতলায় উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ফাঐ বটতলার যুদ্ধে ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং সাধারণ জনতাসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এদিনই চান্দিনা উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মো. আব্দুল মালেক, বীর বিক্রম (পিতা মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, সাইকোট), কর্নেল মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ, বীর প্রতীক- (পিতা মৌলভী সাহেব উল্লাহ, কৈলান) এবং – আব্দুল মমিন, বীর প্রতীক- (পিতা আব্দুল মোতালেব, পিপুইয়া, সহিলপুর)। চান্দিনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিসের মুক্তি বার্তার তালিকায় ৪৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। এর মধ্যে যে- সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন- আব্দুল মমিন, বীর প্রতীক (ইলিয়টগঞ্জ ব্রিজ যুদ্ধে শহীদ), মনির হোসেন ফকির (পিতা মো. জিন্নত আলী ফকির, শব্দলপুর; ইলিয়টগঞ্জ ব্রিজে শহীদ), মো. সৈয়দ আহাম্মদ (পিতা মো. রোশন আলী, নাওতলা; ফাঐ বটতলার যুদ্ধে শহীদ), মো. ফুল (পিতা ইয়াকুব আলী, বিচুনদাইর; ফাঐ বটতলার যুদ্ধে শহীদ), মো. আব্দুল মান্নান (পিতা মো. লাল মিয়া, মাইজখার; ফাঐ বটতলার যুদ্ধে শহীদ), মো. কেরামত আলী (পিতা মো. চান মিয়া, কালেমসার; ফাঐ বটতলার যুদ্ধে শহীদ), মো. আবু ইউসুফ (পিতা নজরুল ইসলাম, বাকসার; ফাঐ বটতলার যুদ্ধে শহীদ), হাবিলদার মো. শব্দর আলী খান (পিতা মো. আছমত আলী খান, চান্দিনা খান বাড়ি; ইপিআর বাহিনীর সদস্য), মো. মজিবুর রহমান মজনু (পিতা মো. ছাফর আলী স্বর্ণকার, হাশিমপুর; ইপিআর সদস্য), মো. ছিদ্দিকুর রহমান (পিতা মো. হাফিজ উদ্দিন, কুটম্বপুর; ইপিআর সদস্য), মো. আব্দুল মালেক (পিতা আব্দুল হামিদ, গল্লাই; নিজ গ্রামে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ), মো. আলী আশরাফ (পিতা কালা মিয়া, গল্লাই; নিজ গ্রামে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ), মো. লাল মিয়া (পিতা মো. মুজাফফর আলী, গুবিন্দপুর) এবং মো. মোশারফ হোসেন (কুল্লাপাথর, কসবা; শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গোরস্থানের সমাধীগাত্রে ঠিকানার স্থানে শুধু চান্দিনা লেখা আছে)।
চান্দিনা উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ১০ জন শহীদের নামসহ একটি স্মৃতিফলক এবং ফাঐ-এর যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ফাঐ স্কুল মাঠে অপর একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। মাধাইয়া কলেজের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কলেজ। চান্দিনা ও আশপাশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। [মো. তামিদুর রহমান দিদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!