You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.13 | চাটমোহর থানা যুদ্ধ (চাটমোহর, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

চাটমোহর থানা যুদ্ধ (চাটমোহর, পাবনা)

চাটমোহর থানা যুদ্ধ (চাটমোহর, পাবনা) হয় ১৩ থেকে ২০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী। থানা দখলকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এ-যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন পলাশডাঙ্গা বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার মো. গোলজার হোসেন, মুজিব বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার মযহারুল ইসলাম কালু, এফএফ বাহিনীর সদস্য মো. আমজাদ হোসেন লাল, মোজাম্মেল হক ময়েজ, ইদ্রিস আলী চঞ্চল প্রমুখ।
চাটমোহর পুরাতন বাজার ডাকবাংলো সংলগ্ন স্থানে চাটমোহর থানার অবস্থান। নওগাঁ যুদ্ধের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পলাশডাঙ্গা যুবশিবির-এর গেরিলারা তাড়াশ ও চাটমোহর থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনী ও পলাশডাঙ্গা বাহিনীর ৭০-৮০ জন সশস্ত্র গেরিলা চাটমোহর থানা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। চাটমোহর থানার পশ্চিম পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন মুজিব বাহিনীর স্থানীয় গ্রুপ কমান্ডার মযহারুল ইসলাম কালু, দক্ষিণ পাশে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন লাল এবং উত্তর দিকে অবস্থান নেন কমান্ডার গোলজার হোসেন। মুক্তিযোদ্ধারা ১৩ই ডিসেম্বর ভোরবেলা থানা ঘেরাও করে ‘জয় বাংলা” স্লোগান দিতে থাকেন। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে রামনগর গ্রামের সহোদর দুই মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম ও আবু তালেব পাকসেনাদের খতম করার লক্ষ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে থানার মধ্যে ঢুকে পড়লে পাকসেনাদের গুলিতে তাঁরা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ২৪ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১৪ই ডিসেম্বর থানায় অবস্থানরত পাকসেনা অফিসার শের আফগানসহ ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়। দুজন মুক্তিযোদ্ধা ছাইকোলা গ্রামের রবিউল ইসলাম নিমু এবং মণ্ডতোষ গ্রামের ওমর আলী গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটলেও চাটমোহর থানায় তখনও ২২ জন পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছিল। ২০শে ডিসেম্বর পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বকুল, কমান্ডার মোজাম্মেল হক ময়েজ, কমান্ডার মোজাম্মেল হক, ইদ্রিস আলী চঞ্চল, ময়েজ উদ্দিন প্রমুখ ২২ জন মিলিশিয়াকে আত্মসমর্পণ করিয়ে একটি ট্রাকে করে চাটমোহর থেকে পাবনা এনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। এভাবে বিজয় দিবসের চারদিন পর ২০শে ডিসেম্বর চাটমোহর থানা হানাদারমুক্ত হয়। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড