You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.05 | চানখালি নদীতে রাজাকার অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

চানখালি নদীতে রাজাকার অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

চানখালি নদীতে রাজাকার অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় দুবার – ৫ই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। প্রথমবারের অপারেশন পরিচালনা করে হাবিলদার আবু মো. ইসলাম গ্রুপ। এতে রাজাকার-রা আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ১১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ১৭৩৬টি গুলি হস্তগত করেন। দ্বিতীয়বার অপারেশন পরিচালনা করে শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ। এবারও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কাছ থেকে ৩০০ বস্তা খাদ্যসামগ্রী ও ১১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করেন।
৫ই সেপ্টেম্বর আনোয়ারা উপজেলার ওসখাইন গ্রামে রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিমের ওপর সফল অপারেশন পরিচালনা শেষে হাবিলদার আবু মো. ইসলাম গ্রুপ চন্দনাইশের বরকলে ফেরার পথে চানখালি নদীর চামুদরিয়া ঘাটে এসে গ্রুপটির মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের দিক থেকে একটি লঞ্চ নদীর পূর্বপাশ ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যেতে দেখতে পান। তখন কমান্ডার আবু মো. ইসলাম লঞ্চটির দিকে অস্ত্র তাক করে লঞ্চটিকে নদীর পশ্চিম পাড়ে চামুদরিয়া ঘাটে ভেড়াতে বলেন। লঞ্চের ভেতরে ছিল একদল রাজাকার। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাঁশখালী রাজাকার ক্যাম্পে যাচ্ছিল। তারা লঞ্চটি ঘাটে না ভিড়িয়ে বরং মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারাও লঞ্চটির দিকে পাল্টা গুলি ছোড়েন। অনেকক্ষণ যুদ্ধ চলার পর লঞ্চটির ভেতর থেকে রাজাকাররা আত্মসমর্পণের সংকেত দেয় এবং লঞ্চ চামুদরিয়া ঘাটে ভেড়ায়। মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে-সঙ্গে লঞ্চে উঠে রাজাকারদের চোখ বেঁধে ফেলেন এবং লঞ্চ থেকে ১১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ১৭৩৬টি গুলি উদ্ধার করেন। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা উক্ত লঞ্চে করে কেশুয়া রাস্তার মাথায় টিনের ঘাটে এসে লঞ্চসহ রাজাকারদের ছেড়ে দেন।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল, চন্দনাইশ), নুরুল ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল; সেনাসদস্য), আইয়ুব আলী (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল), দুদু মিয়া (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), এস এম গফুর (পিতা ছৈয়দুল হাকিম, বরকল), মো. আবুল কাশেম (পিতা এনু মিয়া, পশ্চিম পাঠানদণ্ডী, বরকল), মো. ইছহাক মিয়া (পিতা মো. এনু মিয়া, পাঠানদণ্ডী, বরকল), মো. ইছহাক (পিতা আলতাপ মিয়া, উত্তর হাশিমপুর), মো. আবদুল জব্বার (পিতা দুলা মিয়া চৌধুরী, বরকল), আনোয়ারুল হক চৌধুরী (বরকল), মনছফ আলী (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), আবুবকর চৌধুরী (পিতা কবির আহমদ চৌধুরী, বরকল) প্রমুখ।
বাঁশখালী এলাকায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হওয়ার পর তাদের জন্য চাল-ডাল-তৈল প্রভৃতি খাদ্যদ্রব্য চট্টগ্রাম শহর থেকে কর্ণফুলী ও চানখালি নদী দিয়ে বাঁশখালীতে নিয়ে যাওয়া হতো। অক্টোবর মাসে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে একটি গদুনৌকা বাঁশখালী যাচ্ছিল। খবরটি চন্দনাইশের বরমা ইউনিয়নে শাহজাহান ইসলামাবাদীর দেউরি ঘরে ফ্লাইট সার্জেন্ট মহিউল আলমের ঘাঁটিতে পৌঁছলে, সেখান থেকে শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ চানখালি নদীর বরকল পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হয়। অতঃপর গ্রুপটি এই পাড়সংলগ্ন চানখালি নদীর মধ্যস্থলে গদুনৌকাটিকে লক্ষ করে আক্রমণ পরিচালনা করে। গদুনৌকাটিতে ৩০০ বস্তা চাল ও গম এবং ১১ জন রাজাকার ছিল। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রায় দুঘণ্টা ধরে প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রত্যেক রাজাকারের কাছে ছিল একটি করে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল। শেষ পর্যন্ত রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করলে শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ গদুনৌকা থেকে উক্ত ৩০০ বস্তা চাল ও গম এবং রাজাকারদের কাছ থেকে ১১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করে। রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করায় তাদের লঘু দণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপের উল্লেখযোগ্য যোদ্ধারা হলেন চন্দনাইশের বরকল এলাকার মোহাম্মদ সোলায়মান খান (পিতা আনু মিয়া), ইসলাম খাঁ (পিতা নাগু মিয়া), মোহাম্মদ শফি (পিতা আবদুল গণি), বদিয়ুল আলম (পিতা আবদুল খালেক), বদরুল আলম (পিতা আবদুর রহমান), আইয়ুব বাঙালি (পিতা মোহাম্মদ ইছহাক), আবু সোলায়মান (পিতা ওবায়দুর রহমান), মোহাম্মদ আলী (পিতা আনু মিয়া), মোহাম্মদ আহমদুর রহমান (পিতা আবদুর রহিম), আবুল বশর (পিতা আবদুছ ছমদ), আবুল কালাম (পিতা ওবায়দুর রহমান), মো. সোলায়মান (পিতা মোখলেছুর রহমান), আবু তৈয়ব (পিতা আবদুল গাফফার), এ এম মনচুর (পিতা আবদুল হাই), ছাদেক আবদুল মহী (পিতা আবদুল মোনায়েম), আবদুছ ছবুর (পিতা রমজু মিয়া), মুজিবুর রহমান (পিতা মাহমুদুর রহমান), নাজিম উদ্দিন (পিতা আবদুছ ছমদ), মোহাম্মদ আমানত খাঁ (পিতা আহামদ মিয়া), আযম খাঁ (পিতা মখলচুর রহমান), আবুল মনজুর (পিতা আবদুল জব্বার), শফিফুল আলম (পিতা সোলতান আহমদ), আবুল মনজুর (পিতা কবির আহমদ); বরমা এলাকার এম এম নওশাদ আলী (পিতা বদরুজ্জামান), অরুণ বিকাশ দাস (পিতা মোহনবাঁশি দাস), মাহবুবুল আলম, এ কে এম ইয়াহিয়া (পিতা আবদুল মোনাফ), আবুল মনজুর (পিতা ইমাম আলী), এম আবুল কাসেম (পিতা সোলতান আহমদ), এ টি এম শামসুল হুদা (পিতা আবদুল মোনাফ), ডা. গোলাম মওলা, বদিয়ুল আলম (পিতা মোহাম্মদ ছাবের), এস এম আলমগীর আলম (পিতা বদিউল আলম), মোজাহেরুল ইসলাম (পিতা মোহাম্মদ বকস), মোহাম্মদ ফজলুল কবির (পিতা আবদুল মোনাফ), মাহমুদুর রহমান (পিতা মোহাম্মদ লাল মিয়া), নুরুল হুদা (পিতা মোহাম্মদ কবির আহমদ), সিরাজুল হক (পিতা হাবিবুর রহমান), মোহাম্মদ আবুবকর (পিতা আবদুল গাফফার), এস এম মাসুদ (পিতা আবদুল হাই), নুর মোহাম্মদ (পিতা মো. ছিদ্দিক), নুরুল ইসলাম (পিতা এজাহার মিয়া), মো. মঞ্জুরুল হক খান (পিতা মীর আহমদ খান) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড