You dont have javascript enabled! Please enable it!

চানপুর যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ)

চানপুর যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ১০ই সেপ্টেম্বর। দুই ঘণ্টারও অধিক সময় স্থায়ী এ-যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা অনিল সাংমা শহীদ হন। হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পিছু হটে। যুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার- বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মল্লিকবাড়ী বাজারের ক্যাম্পকে একটি শক্তিশালী ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করে। মল্লিকবাড়ীর দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের বন-জঙ্গালাকীর্ণ এলাকা দিয়ে যাতে ভালুকা ঘাঁটি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ঠেকানো যায়, সেদিক বিবেচনা করেই তারা মল্লিকবাড়ী বাজারের ঘাঁটি শক্তিশালী করার প্রয়োজন মনে করে। অপরদিকে হানাদার বাহিনী মল্লিকবাড়ীতে অবস্থান নেয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে উত্তরাঞ্চলের বন-জঙ্গল ও টেক- টিলায় আত্মগোপন করে গেরিলা আক্রমণের জন্য সর্বদাই ওঁৎ পেতে থাকতেন এবং সুযোগমতো হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতেন। হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করতে না পারলেও মাঝে-মধ্যে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের সমতল এলাকায় প্রবেশ করে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও মূল্যবান সম্পদ লুট করার পর বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে চলে যেত।
১০ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী দল মল্লিকবাড়ীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম চানপুর এলাকায় লুটতরাজ করতে আসে। এ খবর জানতে পেরে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০-৪০ জনের একটি দল তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে একটানা আড়াই ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে দ্রুত পিছু হটে গিয়ে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটিতে ফিরে যায়। চানপুর যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন আহত হয়। এ- যুদ্ধে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা অনিল সাংমা শহীদ হন। চানপুর যুদ্ধের পর পাকহানাদার বাহিনীর উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বোর হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ক্রমাগত বেড়ে যেতে থাকে এবং মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি হানাদারমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। উল্লেখ্য, মল্লিকবাড়ী পাকসেনা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে ৩৫ বার গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করেন। হানাদার বাহিনী রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আ আলী রতন, মো. ছমির উদ্দিন, আ. খালেক মাস্টার ও নারায়ণ চন্দ্র পালসহ প্রায় আরো অর্ধশতাধিক লোকের বাড়িতে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। এ-সময় পাকবাহিনী নারীনির্যাতনসহ বেশকিছু নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে যায়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়।
মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চানপুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মো. নাজিমউদ্দিন (কোম্পানি কমান্ডার; নন্দীপাড়া), মো. আ. আলী রতন (মল্লিকবাড়ী), মো. ছমির উদ্দিন (মল্লিকবাড়ী), আ. খালেক মাস্টার (মল্লিকবাড়ী), নারায়ণ চন্দ্র পাল (মল্লিকবাড়ী), আ. ছামাদ (ডাকাতিয়া), মো. রিয়াজ উদ্দিন (কমান্ডার; আড়ালিয়া, কাপাসিয়া), মো. শামছুদ্দিন (কোম্পানি কমান্ডার; বাটাজোড়), সিরাজুল হক (প্লাটুন কমান্ডার; কাঠালী), আ. রউফ (গয়েশপুর, গফরগাঁও), নিজাম উদ্দিন (গয়েশপুর, গফরগাঁও), গিয়াস উদ্দিন (পিরুজুলি, গাজীপুর), নিজাম উদ্দিন (নন্দীবাড়ী), জহিরুল ইসলাম (নিগুয়ারী, গফরগাঁও), মো. আ. জলিল (নিগুয়ারী, গফরগাঁও), মো. কছিম উদ্দিন (ভালুকা) প্রমুখ। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!