You dont have javascript enabled! Please enable it!

চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিরোধযুদ্ধ (চাঁদপুর সদর)

চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিরোধযুদ্ধ (চাঁদপুর সদর) ৮ই এপ্রিল সংঘটিত হয়। এতে সেকান্দার পাটোয়ারীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে সড়ক পথে চাঁদপুরের দিকে আসতে থাকে। এ খবর পেয়ে তাদের প্রতিরোধে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ৭ই এপ্রিল বিকেলে চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুলের নিকট বিদ্যাপতি খালের ওপর সিএন্ডবি ব্রিজে গাড়ি ওঠার পথে বিশাল গর্ত খোঁড়েন। এ কাজে যুক্ত ছিলেন কুদ্দুস মৌলভী, মোহাব্বত আলী পাটোয়ারী, কাশেম আলী মিজি, ওহাব মিয়া প্রমুখ।
৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মেজর তৈমুরের নেতৃত্বে প্রায় ৮০টি সামরিক কনভয় নিয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চাঁদপুর অভিমুখে এগুতে থাকে। শাহরাস্তি এবং হাজিগঞ্জে তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে গণহত্যা চালিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সন্ধ্যার দিকে চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুলের কাছে এলে তারা পুনরায় বেরিকেডের সম্মুখীন হয়। বাবুর হাট বাজারের স’মিল থেকে হানাদাররা গাছের বড়বড় কাটা অংশ এনে বিশাল গর্ত ও খাদের ওপর দিয়ে সামরিক কনভয়গুলো পাড় করে। রাত ৮টার দিকে তারা টেকনিক্যাল স্কুলের মাঠে সামরিক কনভয়গুলো জড়ো করে এবং স্কুলটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। এ খবর সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা জানতে পেরে রাত ৯টার দিকে ইপিআর সুবেদার আবদুর রবের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা এবং স্থানীয় ছাত্র-যুবকরা টেকনিক্যাল স্কুলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণের নয়া বাগান থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে পশ্চাদপসরণ করেন। এ-যুদ্ধে সেকেন্দার পাটোয়ারীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পরদিন ভোরবেলা হানাদার বাহিনী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে সামরিক কনভয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে বের হয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে পুরুষ সদস্যদের না পেয়ে তারা পেট্রোল দিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের দেয়া আগুনে স্কুল সংলগ্ন মিজি বাড়ি, খলিফা বাড়ি, আছরুদ্দিন বাড়ি, গাজী বাড়ি, খালেক বেপারী বাড়ি, আকন বাড়ি, সৈয়াল বাড়ি, লবা বাড়ি, মণীন্দ্র পাল মাস্টার বাড়ি, পাল পাড়া, ঠাকুর বাড়ি, পণ্ডিত বাড়ি, খান বাড়ি ও শ্রীধাম ঠাকুর বাড়ি পুড়ে যায়। তারা স্কুলের নিকটবর্তী একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল লুণ্ঠন করে। এ-সময় তাদের গুলিতে আফিয়া বেগম, কলিমুল্লাহ মিজি, ইসমাইল হোসেন ভলান্টিয়ার এবং ঠাকুর বাড়ির একজন শহীদ হন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে কয়েকটি শিশু পরবর্তীতে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠনের পাশাপাশি তারা কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এদিন সকাল ৮টার মধ্যে তারা চাঁদপুর শহরে প্রবেশ করে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!