চাঁদশিকারি গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
চাঁদশিকারি গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ ও ৭ই অক্টোবর। হত্যাকাণ্ডের স্থানটি শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুরে অবস্থিত। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধরা শরত্নগর, বাজিতপুর পূর্বপাড়া, দুর্লভপুর ও পারকালপুরে ডিফেন্স নিলে সীমান্তবর্তী বিনোদপুর এলাকাটি মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ এমপিএ বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ ক্যাম্প থেকে ৪-৫শ যুবককে রিক্রুট করে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং-এর জন্য ভারতে পাঠানো হয়। এসব কারণে বিনোদপুরের প্রতি হানাদাররা বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ ছিল।
অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন সিকান্দার শাহ আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এক প্লাটুন সেনা ও এক প্লাটুন -রাজাকার- নিয়ে বিনোদপুর আক্রমণ করে একরকম বিনাযুদ্ধেই বিনোদপুর রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প দখল করে নেয়। এ ব্যাপারে মাহিদুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, আমিন উদ্দীন, আব্দুল্লাহ প্রমুখ রাজাকার তাদের সাহায্য করে। ক্যাপ্টেন সিকান্দার রাজাকারদের হুকুম দেয় গ্রাম থেকে লোকজন ধরে আনতে। রাজাকাররা কয়েকজন পাকসেনা নিয়ে চাঁদশিকারি উত্তরপাড়া যায় এবং সেখান থেকে ১৬ জন লোককে ধরে এনে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক লাইনে দাঁড় করায়। অতঃপর মোয়াজ্জেম হোসেন, দীন মোহাম্মদ দেনা, গোফরা, আব্দুল্লাহ প্রমুখ রাজাকার তাঁদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে গুলি করলে ১২ জন নিহত হন এবং ৪ জন প্রাণে বেঁচে যান।
এরপর হানাদাররা চাঁদশিকারি দক্ষিণপাড়ায় গিয়ে ২৬ জন লোককে ধরে এনে সহিমুদ্দীন বিশ্বাসের আমবাগানে তাদের নির্যাতন করে। সেখান থেকে তাদের খাসের হাট মসজিদের কাছে নিয়ে আবার নির্যাতন করে। পরের দিন ৭ই অক্টোবর হানাদাররা ৯ জনকে এই শর্তে ছেড়ে দেয় যে, তারা তাদের মুরগি-খাসি ইত্যাদি এনে দেবে। বাকি ১৭ জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করলে ১২ জন নিহত হন।
চাঁদশিকারি গণহত্যায় নিহত ২৪ জন হলেন- ফজলুর রহান, আরিফুল ইসলাম, আয়েশ উদ্দীন, আজমল হক, সাইফুদ্দীন মণ্ডল, এন্তাজ আলী, তসলিম উদ্দীন, নজরুল ইসলাম, আলকেশ আলী, কাতলু, সেনামুল হক, জালাল উদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক, পারুল, গোলাপ, দুখু মণ্ডল, আফাদ্দি মণ্ডল, কসিমুদ্দীন, আজহার আলী, গুদোড় আলী, আকালু মণ্ডল, আফসার আলী, সেন্টু ও হাবিবুর রহমান। [তামিজ উদ্দীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড