চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর)
চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় ১৩-১৫ই ডিসেম্বর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকসেনারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন রাজাকার, আলবদর ও পাকবাহিনীর সহযোগীরা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল। ১৩ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের অনতিদূরে অবস্থিত হরিপুর পুলের কাছে তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ইপিআর-এর নায়েক মোহাম্মদ নবীর উদ্দীন এবং ৯ জন গ্রামবাসী নিহত হন। পাকসেনাদেরও কয়েকজন হতাহত হয়।
১৩ই ডিসেম্বর মোহদীপুর সীমান্ত থেকে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে মহানন্দা নদীর প্রান্তে এসে পৌঁছান। তারপর নদীর কূল বরাবর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে শহরের বিভিন্ন লক্ষ্যস্থলে তাঁরা আক্রমণ চালাতে থাকেন। ১৩ই ডিসেম্বর রাতে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাঁর বাহিনীকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেন। একটি দল লে. রফিক ও লে. কাইউমের নেতৃত্বে (যাঁরা দলদলি সাব সেক্টরে যুদ্ধ করছিলেন) বালিয়াডাঙ্গায় মহানন্দা নদী পার হয়ে শহরের দিকে এগিয়ে যায়। অপর দল মেজর গিয়াসের নেতৃত্বে কালীনগর ঘাটে মহানন্দা নদী পার হয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাঁর দল নিয়ে মহানন্দা নদী অতিক্রম করে ভোরে শহরের রেহাইচর এলাকায় অবস্থান নেন। এ দলের মুক্তিযোদ্ধারা রেহাইচর ঘাটের কাছে শত্রুদের অবস্থান নির্ণয় করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের বাংকার দখল করেন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শাহজাহান আহত হন। অসীম সাহসী জাহাঙ্গীর একা সামনের দিকে এগিয়ে যান। এ অবস্থায় শত্রুদের একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হলে তিনি ঘটনাস্থলে শহীদ হন।
শহীদ জাহাঙ্গীরের লাশ মোহদীপুরের ঐতিহাসিক সোনা মসজিদের সামনের চত্বরে সমাধিস্থ করা হয়।
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর শহীদ হওয়ার পরপরই মেজর গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী, লে. রফিকুল ইসলাম ও লে. আব্দুল কাইউম খান স্ব-স্ব দল নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। ১৫ই ডিসেম্বর সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। এদিন চাঁপাইনাবগঞ্জ কলেজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শহরবাসীর এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড