You dont have javascript enabled! Please enable it!

চাঁচড়া প্রতিরোধযুদ্ধ (যশোর সদর)

চাঁচড়া প্রতিরোধযুদ্ধ (যশোর সদর) সংঘটিত হয় ৩০শে মার্চ, ১লা এপ্রিল ও ৩রা এপ্রিল। প্রথম দিনের যুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
চাঁচড়া যশোর সদর উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ইপিআর সদস্যরা এখান থেকে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যান। ২৮শে মার্চ নড়াইল মহকুমার কালিয়া থানা, লোহাগড়া থানা ও সদর নড়াইল থানার -আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মী এবং ইপিসিপি (এমএল)-র সদস্যরা যশোর সেনানিবাস ঘেরাও করেন। তাঁরা পাকবাহিনীর বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ৩০শে মার্চ সেনানিবাস থেকে পাকবাহিনী তাঁদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। ইতোমধ্যে যশোর ইপিআর ক্যাম্পের বাঙালি যোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এতে বেশকিছু সংখ্যক ইপিআর যোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন বন্দি হন। এদিকে বাঙালি ইপিআর- এর একটি দল চাঁচড়ার মোড়ে এবং অন্য একটি দল শহরের সন্ন্যাসী দিঘিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চাঁচড়ার মোড়ে অবস্থান নেয়া দলের নেতা ছিলেন নায়েক মতিউর রহমান। চাঁচড়ার ট্রাফিক আয়ল্যান্ডের ওপর তিনি ৬ পাউন্ডের একটি কামান বসান। হাবিলদার তৈয়াবুর রহমান উক্ত আয়ল্যান্ডের ওপর ৬ পাউন্ডের আরেকটি কামান বসান। সাতক্ষীরার ইপিআর ক্যাম্প থেকে আসা বাঙালি যোদ্ধারাও চাঁচড়ার মোড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
৩০শে মার্চ রাতে খুলনা শহর থেকে পাকসেনাদের একটি দল যশোরের দিকে এগুতে থাকে। তাদের সঙ্গে ছিল সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি। পাকবাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে চাঁচড়ার মোড়ে অবস্থানরত ইপিআর সেনারা তাদের প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি নেন। পাকসেনাদের গাড়ি ৩টি ইপিআর যোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁরা হামলা চালান। পাকবাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে পালাবার চেষ্টা করে। এখানে কমপক্ষে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং তাদের দুটি গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে ২ জন ইপিআর মুক্তিযোদ্ধা, রাজবাড়ি এলাকার ৪ জন সাধারণ মানুষ (মহিউদ্দিন শরিফ, শামসুর রহমান, শ্যাম বর্মণ ও রতন বর্মণ) এবং স্থানীয় নজরুল ইসলামের স্ত্রী শহীদ হন।
১লা এপ্রিল বাঙালি সামরিক অফিসার ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি খুলনার ৫নং উইং থেকে আগত ৩টি কোম্পানির নেত্বত্ব দেন। ইপিআর মুক্তিযোদ্ধারা চাঁচড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেনানিবাসের দিকে মাঝে-মাঝে গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। স্থানীয় সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা ও ইপিআর যোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ৩রা এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী সেনানিবাস থেকে ব্যাপক গোলাগুলি চালায়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধারা চাঁচড়া মোড়ের অবস্থান তুলে নিয়ে পশ্চাদপসরণ করেন এবং দুই দলে ভাগ হয়ে একটি দল নড়াইলের দিকে, অন্য দল মাগুরার দিকে চলে যায়। [মহসিন হোসাইন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!