চাঁচড়া রায়পাড়া বধ্যভূমি (যশোর সদর)
চাঁচড়া রায়পাড়া বধ্যভূমি (যশোর সদর) যশোর সদর উপজেলার রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকার- ও বিহারিরা এখানে অসংখ্য লোককে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকার ইসমাইল কলোনি, ভোলা কলোনি ও জুবায়ের কলোনিতে প্রচুর বিহারি বাস করত। তারা একটি বাহিনী গঠন করে নিয়মিত বাঙালিদের ধরে এনে রায়পাড়া বধ্যভূমিতে জবাই করে কিংবা গুলি করে হত্যা করত। এ বাহিনীতে ছিল কানা রশিদ, টোনিয়া, হাবিব, হাসান, রমজান, ভোলা, আবুল, মোস্তফা, ইসমাইল, কালুয়া, মনসুর, ফকরুলসহ প্রায় শতাধিক বিহারি যুবক।
বিহারিরা এখানে শতশত বাঙালিকে হত্যা করে তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে বাড়িঘর নির্মাণ করার সময় বহু মানুষের কাঙ্কাল, হাড়, মাথার খুলি ইত্যাদি উঠে আসে। স্টেশনের স্কুল ও মাদ্রাসার পেছনে জনৈক আবদুর রবের বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি ডোবা। এই ডোবায় অনেককে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, যশোর রেলস্টেশন, বেনাপোল বাসস্টান্ড কিংবা সদর রাস্তা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে রায়পাড়ায় আটকে রাখা হতো। তারপর তাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর তাদের গলা কেটে কিংবা গুলি করে হত্যা করা হতো। হত্যার পর নিহতদের সম্পদ হরণ করা হতো। কোনো-কোনো সময় নিহতদের অনুসন্ধানকারী স্বজনরা চাঁচড়া রায়পাড়া বধ্যভূমিতে এলে তাদেরও হত্যা করা হতো।
এই বধ্যভূমি সম্পর্কে স্থানীয় সাবেক দারোগা মোকাররম হোসেন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মনিরামপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। ৬ই ডিসেম্বর বাড়ি এসে তিনি দেখেন শুধু লাশ আর লাশ। স্থানীয় আবদুর রবের বাড়ির চারপাশে ছিল অসংখ্য গলিত লাশ। এরপর তিনি ডোমদের টাকা দিয়ে সেই লাশগুলো সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন। অপর একজন দারোগা মাহবুককে এখানেই হত্যা করা হয়। এখান থেকে পুলিশের পোষাক উদ্ধার করা হয়। দেশ স্বাধীন হলে এখান থেকে এক ট্রাক ভর্তি কঙ্কাল ঢাকার সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেগুলো আজো সেখানে সংরক্ষিত আছে। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড