চাঁদনীঘাট ব্রিজ গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর)
চাঁদনীঘাট ব্রিজ গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর) ১৩ই মে সংঘটিত হয়। এটি ছিল একটি ভংকর ও নিষ্ঠুর গণহত্যা। ব্রিজের ওপর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বলে শহরে মাইকিং করে শতশত লোক এনে তাদের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম হিলালপুর। এ গ্রামের লন্ডন প্রবাসী হাজী মোহাম্মদ উস্তার ও সিরাজুল ইসলাম কলন্দর মিয়া ৭০-এর নির্বাচনের পূর্বে দেশে আসেন। নির্বাচনের সময় তারা – আওয়ামী লীগ-এর প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করেন। এজন্য এ দুজনের ওপর ইনাম উল্লাহর খুবই আক্রোশ ছিল। পাকবাহিনী মৌলভীবাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর ইনাম উল্লাহ পাকহানাদার বাহিনীকে দিয়ে বাড়ি থেকে তাদের আটক করায়। কলন্দর মিয়াকে আটকের সময় তার পিতা ৭৬ বছর বয়স্ক আবদুল মান্নান বাধা দেন। পাকসেনারা আবদুল মান্নানকেও ধরে নিয়ে যায়। এ-সময় মোহাম্মদ উস্তার ও কলন্দর মিয়ার বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। তাদের মৌলভীবাজারে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট (পিটিআই) ভবন সংলগ্ন রেস্ট হাউস ও মৌলভীবাজার কলেজ স্টাফ কোয়ার্টার্স এলাকায় অবস্থিত পাকবাহিনীর ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। সেখানে পূর্ব থেকে পাকবাহিনীর হাতে আটক ছিলেন মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা আনসার এডজুট্যান্ট চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার বাসিন্দা এ জে মনসুর আহমদ। মনসুর আহমদ আনসার বাহিনীর অস্ত্রাগার খুলে ছাত্রদের সকল রাইফেল দিয়ে দিয়েছিলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্স আটক এ ৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে প্রহসনমূলক বিচারে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয়।
পাকবাহিনী ১২ই মে মৌলভীবাজার শহরে মাইকিং করে সবাইকে পরদিন ১৩ই মে বেলা ১২টায় চাঁদনীঘাটের মনু নদীর ব্রিজে একটি প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ জানায়। প্রদর্শনী দেখার জন্য শতশত মানুষ জড়ো হয়। সবার সামনে দেশপ্রেমিক হাজী মোহাম্মদ উস্তার (পিতা মুন্সি মো. এলিম), সিরাজুল ইসলাম কলন্দর মিয়া ও আনসার এডজুট্যান্ট এ জে মনসুর আহমদকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। এদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে বলে সেদিন মাইকে ঘোষণা দেয় শান্তি কমিটির মৌলভীবাজার মহকুমা আহ্বায়ক মো. মিছির উল্লাহ মোক্তার। ব্রিজের ওপর হত্যার পর পাকসেনারা লাথি দিয়ে ৩ জনের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এ দৃশ্য দেখে অনেকে জ্ঞান হারায়। এ হত্যাকাণ্ডের পর মৌলভীবাজারবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কলন্দর মিয়ার পিতা আবদুল মান্নানকে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্সের পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার কলেজের স্টাফ কোয়ার্টার্সের লাগোয়া একটি গর্তে ফেলে হত্যা করা হয়। [আবদুল হামিদ মাহবুব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড