You dont have javascript enabled! Please enable it!

চরকাউয়া গণহত্যা (বরিশাল সদর)

চরকাউয়া গণহত্যা (বরিশাল সদর) সংঘটিত হয় ৩০শে আগস্ট। পাকিস্তানি বাহিনী বারিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়ার মোসলেম আলী খালিফার বাড়ি সংলগ্ন খালের পাড়ে পারিকল্পিতভাবে এ পৈশাচিক গণহত্যা চলায়। এতে ১৬ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
ঘটনার দিন পাকবাহিনী বেলা ১১টার দিকে বরিশাল থেকে গানবোটে করে এসে কীর্তনখোলা নদীর ওপারে চরকাউয়ায় প্রবেশ করে। গ্রামের ভেতর অভিযান চালিয়ে তারা গণহত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা চরকাউয়া গ্রামে প্রবেশ করেই হাবিব মাস্টারের বাড়ির সামনে রহমালী খাঁ নামে একজন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। অতঃপর তারা রাস্তা ধরে সামনে অগ্রসর হতে থাকে। পথিমধ্যে তালুকদার বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে দোকানে জাল বুননরত অবস্থায় তজুম্বর তালুকদার (আড়াই তালুকদার)-কে ধরে নিয়ে যায় এবং তাঁর দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনীর প্রবেশ এবং অগ্নিসংযোগের খবর শুনে গ্রামের মানুষ ছুটাছুটি করতে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী হাজী বাড়ির সামনে ধানক্ষেতে পলায়নরত অবস্থায় মোতাহার নামে একজনকে ধরে নির্যাতন করে এবং অন্যদের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যায়। তারা নৌকা মেরামতরত অবস্থায় ইসরাইল ও ধানক্ষেত থেকে দিনমজুর এনায়েতকে ধরে একত্রে বেঁধে নেয়। তারা ধলু মোল্লার বাড়ির নিকটে ময়দান পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোট ১৪ জন এবং বরিশাল যাওয়ার পথে খেয়াঘাট থেকে আলম ও দুজন পথচারী মোট ১৭ জনকে একত্রে চরকাউয়া খেয়াঘাটে বেঁধে রাখে। গানবোটে করে তাদের নদীর ওপারে নিয়ে বরিশাল সদরঘাট নেভাল জেটিতে সবাইকে হাতবাঁধা অবস্থায় বসিয়ে রাখে। দুঘণ্টা পরে সবাইকে আবার গানবোটে উঠিয়ে চরকাউয়ায় মরগঙ্গির খালের পাড় দিয়ে মোসলেম আলী খলিফার বাড়ি সংলগ্ন খাল পাড়ে নিয়ে আসে। পাকবাহিনী মোসলেম আলী খলিফার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং খালের পাড়ে ১৭ জনকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। কয়লাঘাটার মোতাহার ছাড়া সকলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মোসলেম আলী খলিফার বাড়ির আগুনের মধ্যে ছিটকে পড়ে পুড়ে যায়। খালের মধ্যে থাকা একটি নৌকা ও পানির মধ্যে সকলের লাশ পড়ে থাকে। তজুম্বর তালুকদারসহ দু- একজনের লাশ আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে সমাহিত করে। পরদিন স্থানীয়রা শহীদ শাহজাহান, মফিজ, তাজুলসহ কয়েকজনকে এসহাক চৌকিদারের বাড়ির তালগাছের নিচে গণকবর দেয়। বাকি লাশগুলো দুদিন পর্যন্ত মোসলেম খলিফার বাড়ির বাঁশঝাড়ের পাশে ডোবায় ভাসতে থাকে। শেয়াল-কুকুর লাশ নিয়ে কাড়াকাড়ি করলে মোসলেম খলিফার ছেলে চুন্নু খলিফাসহ গ্রামের লোকজন অজ্ঞাত লাশগুলোকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরবর্তীতে জানা যায় যে, অজ্ঞাত লাশগুলোর দুটি কাগাশুরার একই পরিবারের পিতা ও পুত্রের।
চরকাউয়া গণহত্যায় শহীদ ১৬ জন গ্রামবাসী হলেন- তাজেল হাওলাদার (৫৫) (পিতা মোহম্মাদ হাওলাদার, চরকাউয়া), মফিজ উদ্দিন হাওলাদার (৩৫) (পিতা তাজেল হাওলাদার, চরকাউয়া), তজুম্বর তালুকদার ওরফে আড়াই তালুকদার (৫৫) (পিতা হাসমত আলী তালুকদার, চরকাউয়া), এনায়েত (৩৫) (পিতা মোশারেফ হোসেন, চরকাউয়া), রহমালী খাঁ (৪০) (পিতা গফুর খাঁ, চরকাউয়া), শাহজাহান হাওলাদার (৩২) (পিতা মোতালেব হাওলাদার, চরকাউয়া), ইসরাইল (৫৫) (চরকাউয়া), আলম (৩০) (পিতা আকরাম, চরকাউয়া), ইউসুফ (৩২) (পিতা মো. গফুর, চরকাউয়া), মো. জালাল (৪৫) (পিতা রহমান হাওলাদার, চরকাউয়া), মো. আলম (২৫) (পিতা মো. এসাহাক, চরকাউয়া), মো. আলমগীর (৩০) (পিতা ফিরোজ হাওলাদার, চরকাউয়া), মো. আনোয়ার (৪০) (পিতা আব্দুল হাকিম, কয়লাঘাটা), মো. সুরুজ (৪৫) (পিতা সেকান্দার ফকির, চরকাউয়া) এবং অজ্ঞাত দুজন (পিতা ও পুত্র; কাগাশুরা, চরবাড়িয়া)। [লুলু আল মারজান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!