চরফ্যাশন থানা দখল (চরফ্যাশন, ভোলা)
চরফ্যাশন থানা দখল (চরফ্যাশন, ভোলা) পরিচালিত হয় ২রা ডিসেম্বর। এতে থানার ওসি ও পুলিশ বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করেন। এর পূর্বে আগস্ট মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক যুদ্ধে ১১ জন পুলিশ ও মিলিশিয়া নিহত হয় এবং ৯ জন ধরা পড়ে। ভোলার মুক্তিযোদ্ধারা ৯নং সেক্টরের অধীন হলেও ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে সেক্টরের কমান্ডারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। ফলে তাঁরা প্রস্তুতি থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন প্রায় স্বতন্ত্রভাবে। যুদ্ধ নিয়েও ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের পৃথক পরিকল্পনা ছিল। জেলার উত্তরে ভোলা সদর এবং সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে পাকিস্তানি বাহিনীর মূল ঘাঁটি ছিল। তাই ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনা ছিল দক্ষিণের থানা চরফ্যাশন মুক্ত করার মাধ্যমে তাঁরা উত্তরমুখী অভিযান পরিচালনা করবেন। সে লক্ষ্যে তাঁরা আগস্ট মাসের শুরুতেই চরফ্যাশন থানার তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমে নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ওসমানগঞ্জের পেয়ার আলী ব্যাপারীর বাড়িতে অবস্থান নেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল চরফ্যাশন থানা ঘেরাও ও তা দখল করা। রাজাকার-দের মাধ্যমে এ খবর থানায় পৌঁছে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দুজন রাজাকারকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে ওসমানগঞ্জ বাজারে তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশল প্রয়োগ করে এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দালালদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এতে পুলিশ ও মিলিশিয়াসহ ১১ জন নিহত হয় এবং ৯ জন ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা ১৩টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত করেন।
নভেম্বরের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঙ্গাসিয়া ক্যাম্পে পুনরায় চরফ্যাশন থানা দখলের পরিকল্পনা করা হয়। ক্যাম্পে অবস্থানরত ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দুভাগে ভাগ করা হয়। দলনেতা ছিলেন জিয়াউর কুদ্দুস লিয়াকত আর সহ-অধিনায়ক ছিলেন আলী হাসান দুলাল। ২রা ডিসেম্বর দলের একটি অংশ নৌকাযোগে এবং অপর একটি অংশ স্থলপথে থানার উদ্দেশ্যে রওনা করে। নির্দিষ্ট স্থানে নৌকা থামিয়ে দলনেতা লিয়াকত ও আলী হাসান দুলাল ধানের ব্যাপারী সেজে থানার দিকে হাঁটতে শুরু করেন। থানার গেটে পাহারায় থাকা সেন্ট্রিদের তাঁরা ধানের ব্যাপারী বলে পরিচয় দেন। দলনেতারা এগিয়ে গেলে অন্যরা ক্রলিং করে এগুতে থাকেন। থানার কাছে এসে সেখানে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশদের মুক্তিযোদ্ধারা ‘হ্যান্ডস আপ’ করান। এমতাবস্থায় দোতলায় অবস্থানরত ওসি মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়। ওসি নিজে নিচে নেমে এসে থানা ও মালখানার চাবি দলনেতা লিয়াকতের হাতে তুলে দেয়। একই সময় স্থলপথের দলটিও থানায় এসে পৌছায়। মুক্তিযোদ্ধাদের থানা দখলের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসী বাজারে আনন্দ মিছিল বের করে। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড