চম্পকনগর যুদ্ধ (ছাগলনাইয়া, ফেনী)
চম্পকনগর যুদ্ধ (ছাগলনাইয়া, ফেনী) সংঘটিত হয় ২২শে সেপ্টেম্বর। এতে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
চম্পকনগর ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরেশ্বরাই উপজেলার সীমারেখায় অবস্থিত শুভপুর ব্রিজের কিছুটা উত্তরে বাংলাদেশ-ভারত (আন্তর্জাতিক সীমারেখায়) সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। রণকৌশলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ চম্পকনগর সীমান্ত ফাঁড়ি (বিওপি) নিজেদের দখলে রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা বহুবার এখানে যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা এবং বাংলাদেশ ও ভারতে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে এ রুট খোলা রাখা ছিল খুবই জরুরি। ২২শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি চম্পকনগর সীমান্ত ফাঁড়ি দখলের পরিকল্পনা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মাহফুজ। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য ভারতীয় আর্টিলারির কয়েকটি কামান প্রস্তুত রাখা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্যবস্তুর প্রায় ৮০০ গজ দূরে একটি পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেন। মূল আক্রমণের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা কামানের গোলা বর্ষণের সাপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের কয়েকশ গজের মধ্যে পৌছে যান। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরাও ডান ও বাম দুদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশনের ওপর মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করতে থাকে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা আর সামনের দিকে এগুতে পারছিলেন না। এ-সময় তাঁদের ওয়ারলেস সেটও বিকল হয়ে পড়ে। ফলে ক্যাপ্টেন মাহফুজের সঙ্গে ক্যাপ্টেন রফিকের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় পাকিস্তানি আর্টিলারি বাহিনী শুভপুর এলাকা থেকে ক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে এবং কিছুক্ষণ পর করেরহাট এলাকা থেকে চম্পকনগরে রি-ইনফোর্সমেন্ট পাঠিয়ে দেয়। তাদের কামানের গোলা (যার মধ্যে এরোয়ার বাস্ট শেলও ছিল) ব্যাপকভাবে এদিক-ওদিক পড়তে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা অভিযান বাতিল করে পিছু হটেন। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড