You dont have javascript enabled! Please enable it!

চট্টগ্রামে জাতিসংঘের গ্যারেজ অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)

চট্টগ্রামে জাতিসংঘের গ্যারেজ অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতিসংঘকে সতর্ক করা। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে নিযুক্ত জাতিসংঘের স্টাফদের ভূমিকা নিরপেক্ষ এবং বাঙালিদের স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্পূর্ণ অনুকূল ছিল না। বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকলেও তারা অনেক সময় পাকিস্তান সরকারের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ করত। তাই তাদের এ আচরণে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষকরে জাতিসংঘের বিভিন্ন গাড়ি পাক সেনাবাহিনীর কাজে ব্যবহার করায় এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রতি মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন।
জাতিসংঘের এরূপ দ্বৈত আচরণের সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাঁরা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের পেছনে অবস্থিত জাতিসংঘের গ্যারেজ আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাকারিয়া, সলিম উল্লাহ ও ফিরোজ আহমেদ। তাঁরা এ অপারেশনে প্রায় দুই পাউন্ড বিস্ফোরক ব্যবহার করেন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা গ্যারেজে বিস্ফোরক স্থাপন করতে গেলে কয়েকজন গাড়িচালক তাঁদের দেখে ফেলে। তাই তাড়াহুড়োর মধ্যে বিস্ফোরক াপন করতে পারলেও পূর্বে বৃষ্টির পানির সংস্পর্শে আসায় বা অন্য কারণে তা কার্যকর হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে গেলে নিকটবর্তী সার্কিট হাউস থেকে পাকসেনারা এসে গ্যারেজটি ঘিরে ফেলে এবং তন্ন-তন্ন করে তল্লাশি চালায়। অপারেশন ব্যর্থ হলেও মুক্তিযোদ্ধারা জাতিসংঘ গ্যারেজে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন এ খবর প্রচারিত হওয়ায় অপারেশনের উদ্দেশ্য সফল হয়। জাতিসংঘের স্টাফদের আচরণে পরিবর্তন আসে। তারা পাকিস্তান সরকারের প্রতি সহযোগিতা করার নীতি পরিবর্তন করে। সরকারি কাজে জাতিসংঘের গাড়ির ব্যবহারও বন্ধ হয়ে যায়। [সাখাওয়াত হোসেন মজনু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!