You dont have javascript enabled! Please enable it!

চড়ারহাট-আন্দল গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর)

চড়ারহাট-আন্দল গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১০ই অক্টোবর। এতে শতাধিক সাধারণ লোক শহীদ হন।
নবাবগঞ্জ থানার পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাট ও আন্দল গ্রামে পাকবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হয় এক ভয়াবহ গণহত্যা। ৯ই অক্টোবর সাতজন পাকসেনা গরুর গাড়িতে চড়ে তাদের বিরামপুর ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিজুল গ্রামের আলতাদিঘিতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেন। সঙ্গে দুজন -রাজাকার- ছিল। তারা পালিয়ে গিয়ে বিরামপুর ক্যাম্পে পাকসেনাদের খবর দেয়। তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ১০ই অক্টোবর ভোরে চড়ারহাট ও আন্দল গ্রামে অপারেশন চালায়। গ্রাম দুটির সাধারণ মানুষ তখন মসজিদের মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আযানের ধ্বনিতে জেগে উঠছিল। প্রবীণরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় পাকহানাদাররা চড়ারহাট গ্রামে প্রবেশ করে। তারা মেশিনগান তাক করে গ্রামের দিকে এগুতে থাকে। তা দেখে গ্রামে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাবার কোনো সুযোগ ছিল না। হানাদাররা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষজনকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে বিরামপুর- ঘোড়াঘাট সড়কের পাশের খোলা প্রান্তরে তাদের জড়ো করতে থাকে। কালভার্ট মেরামতের জন্য মাটি কাটার কথা বলে হানাদাররা মসজিদ থেকে মুসল্লিদেরও ডেকে আনে। তারপর সবাইকে দাঁড় করিয়ে কলেমা পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এক মিনিট যেতে-না-যেতেই তাদের ওপর গর্জে ওঠে মেশিনগান। ভোরের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে একসঙ্গে অনেক শিশু, যুবক, প্রবীণ ও মহিলার আর্তনাদ শোনা যায়। ভোর ৫টা থেকে সকাল আটা পর্যন্ত চলে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড। একই সঙ্গে একটু দূরে আন্দল গ্রামের সরাইপাড়ায়ও ঘটে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। কোনো-কোনো পরিবারের সকল পুরুষই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
পাকহানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার সময় আন্দল গ্রামের চারদিকে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে হানাদারদের দৃষ্টি এড়িয়ে যারা ঘরের চালে লুকিয়েছিল, তারাও পুড়ে মরে। অপারেশন শেষ হলে দেখা যায় নিহতের সংখ্যা শতাধিক। তাদের মধ্যে ৯৮ জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তারা হলেন— চড়ারহাটের আবুল হোসেন, বিএসসি (পিতা আ. রহমান; শিক্ষক), মফিজ উদ্দিন (পিতা করমত উল্লাহ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক), মনসুর আলী মণ্ডল (পিতা নাসের উদ্দিন), মকবুল হোসেন, আইএ (পিতা মনসুর আলী), আতোয়ার রহমান (পিতা আলেবুদ্দিন), আলম মিয়া (পিতা আহম্মদ আলী), আহাদ আলী (পিতা আকবর আলী), আইয়ুব আলী (পিতা আলেবুদ্দিন), জবেদ আলী (পিতা আইয়ুব আলী), ডা. আবু বক্কর (পিতা তছির উদ্দিন), সোলায়মান আলী (পিতা তছির উদ্দিন), মোফাজ্জল হোসেন (পিতা মহরুল্লাহ), ইউসুফ আলী (পিতা ইদ্রিস আলী), শাহেলা বিবি (স্বামী বিলাত ফকির), ছালিমন বিবি (স্বামী গফুর), মহির উদ্দিন (পিতা বছির উদ্দিন), জহির উদ্দিন (পিতা বছির উদ্দিন), শফিউদ্দিন (পিতা জহির উদ্দিন), আফসার উদ্দিন (পিতা আব্দুল), আফতাব উদ্দিন (পিতা আব্দুল), আকবর উদ্দিন (পিতা আব্দুল), আ. আজিজ (পিতা আকবর), ঈমান আলী, হুসেন আলী (পিতা ইমান আলী), মোবারক আলী, কছিরউদ্দিন (পিতা কিনা প্রধান), কফিল উদ্দিন (পিতা কছির উদ্দিন), তোফাজ্জল হোসেন (পিতা কিনা প্রধান), সোলায়মান আলী (পিতা ইসা), সুফিয়ান (পিতা ইসা), কোরমান আলী (পিতা লাল মিয়া), মংলু (পিতা জবান প্রমানিক), হেজাবুদ্দিন (পিতা তুষা মণ্ডল), তোজাব উদ্দিন (পিতা তমির উদ্দিন), ওমর উদ্দিন (পিতা তুষা মণ্ডল), আনোয়ার হোসেন (পিতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী), জোনাব আলী (পিতা ফজু মুন্সি), কবাব উদ্দিন (পিতা মনির উদ্দিন), মফিজ উদ্দিন (পিতা ময়েজ উদ্দিন), তাইজল (পিতা বছির উদ্দিন), আনছার আলী (পিতা নয়া মিয়া), কাদের আলী (পিতা কফিল উদ্দিন), নেজাম উদ্দিন (পিতা কফিল উদ্দিন), দানেজ উদ্দিন (পিতা দেওয়ান আলী), আজগর আলী (পিতা রহিম উদ্দিন), সাখাওয়াত (পিতা আছদ্দি মণ্ডল), এছাহার (পিতা গফুর), রাজ্জাক আলী (পিতা এছাহার), আ. রহমান (পিতা ফুলবর), আজিজার আলী (পিতা কছিমুদ্দিন), খোরশেদ আলী (পিতা আ. গফুর), ফজর আলী (পিতা বাচ্চা মিয়া ফকির), জসিম উদ্দিন (পিতা ফজর আলী), সাদেক আলী (পিতা রমজান ফকির), সায়েদ আলী (পিতা বাচ্চা মিয়া ফকির), আজর উদ্দিন মাস্টার (পিতা বাচ্চা মিয়া ফকির), আ. ছাত্তার আলী (পিতা গণি মিয়া ফকির), বেড়া মালিয়ার বেলাল হোসেন, বিএ (পিতা আজর উদ্দিন খন্দকার; শিক্ষক), আহম্মদ নগরের আব্বাস আলী (পিতা তছুউল্লাহ), সৈয়দ আলী (পিতা শাহিবুল্লাহ), আনতা মিয়া (পিতা শাহিবুল্লাহ), নওদাপাড়ার আছাবুদ্দিন (পিতা আব্দুল আকন্দ), শিগরামপুরের জাহির উদ্দিন (মানসিক প্রতিবন্ধী), চৌঘরিয়ার আফজাল আলী (পিতা বিলাত ফকির), আমতলার সামাদ আলী, আন্দলগ্রামের তোজাম আলী (পিতা মছরব আলী), ওয়াহেদ (পিতা হেজাবুদ্দিন), আজিজ (পিতা ইছাহাক), আছাব উদ্দিন (পিতা আনার উদ্দিন), আফছার উদ্দিন (পিতা আনার উদ্দিন), মোস্তনা (পিতা আছাব উদ্দিন), সরওয়ার (পিতা আফছার), আব্দুল বাকী (পিতা গুড়া মণ্ডল), মজিবর রহমান (পিতা কছর উদ্দিন ফকির), তছির উদ্দিন (পিতা তরেজ মণ্ডল), অছুমুদ্দিন (পিতা ফইমুদ্দিন), আলেবুদ্দিন (পিতা ফইমুদ্দিন), কলিমুদ্দিন (পিতা ফইমুদ্দিন), রিয়াজ উদ্দিন (পিতা মজর উদ্দিন), নজিবুদ্দিন (পিতা সফর উদ্দিন), নেজাবুদ্দিন (পিতা মজর উদ্দিন), আ. রহমান (পিতা কেরামত সরদার), ইব্রাহিম সরদার (পিতা বছর সরদার), কেরামত সরদার (পিতা কছর সরদার), মনছের আলী (পিতা মিয়াজান আলী),শমসের আলী (পিতা মিয়াজান আলী), আ. সামাদ (পিতা কছির উদ্দিন), খাবছার আলী (পিতা কুতুব আলী), ছলেমান (পিতা উৎসব সরকার), জফুর উদ্দিন (পিতা কছরু মিয়া), কোযাব উদ্দিন (পিতা কছরু মিয়া), ইনছার (পিতা কছরু মিয়া), মোজাহার (পিতা কছরু মিয়া), মহির উদ্দিন (পিতা কছরু মিয়া), আ. সাত্তার (পিতা নয়া মিয়া), আ. সামাদ (পিতা আয়েজ উদ্দিন), জহির উদ্দিন (পিতা কলিমুদ্দিন সরদার) এবং ওয়াহেদ সরদার (পিতা জবান সরদার)। নবাবগঞ্জ চড়ারহাট বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [মাসুদুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!