চড়িয়া শিকার গণহত্যা (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ)
চড়িয়া শিকার গণহত্যা (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৫শে এপ্রিল। এটি এ উপজেলার সবচেয়ে বড় গণহত্যা। এখানে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হন। উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের একটি গ্রাম চড়িয়া শিকার। ২৫শে এপ্রিল সকালে পাকবাহিনী কয়েকটি জিপে করে বগুড়া থেকে বগুড়া-নগরবাড়ি সড়কপথে উল্লাপাড়া যায়। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে চড়িয়া শিকার ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের (বর্তমান সিরাজগঞ্জ রোড সংলগ্ন) যুবকরা পাকবাহিনীকে উল্লাপাড়া প্রবেশে বাধা দিতে রাস্তার ওপর বেশ কয়েকটি গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখে। পাকসেনারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে চড়িয়া, পাটধারী ও গোলকপুর গ্রামে ঢুকে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষকে ধরে চড়িয়া শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- চড়িয়া মধ্যপাড়ার ডা. মজিবর রহমান (পিতা অরফ আলী), ডা. শাহজাহান মণ্ডল (পিতা আলিম উদ্দিন মণ্ডল), আমানত আলী (পিতা মজিবর রহমান), আব্দুল কাইয়ুম মণ্ডল (পিতা তোমেজ উদ্দিন মণ্ডল), আতাব আলী প্রামাণিক (পিতা জাদু প্রামাণিক), তারা প্রামাণিক (পিতা আতাব আলী প্রামাণিক), আবেদ আলী প্রামাণিক (পিতা বাবর আলী প্রামাণিক), দারোগ আলী প্রামাণিক (পিতা সাবান আলী প্রামাণিক), আবু তাহের প্রামাণিক (পিতা আবেদ আলী প্রামাণিক), আব্দুল আজিজ (পিতা নওশের আলী), আবু বকর প্রামাণিক (পিতা আগর আলী প্রামাণিক), শাহজাহান আলী সরকার (পিতা ইয়ার উদ্দিন সরকার), তারা সরকার (পিতা ইয়ার উদ্দিন সরকার), মোহাম্মদ আলী সরকার (পিতা ইয়ার উদ্দিন সরকার), চড়িয়া মধ্যপাড়ার কানছু সরকার (পিতা দেলোয়ার সরকার), গগন মণ্ডল (পিতা ইসমাইল হোসেন মণ্ডল), ইউসুফ আলী মণ্ডল (পিতা ইসমাইল হোসেন মণ্ডল), ছলিম উদ্দিন (পিতা কোরবান আলী), মেছের উদ্দিন মুন্সী (পিতা এরশাদ আলী), আজিজল হক (পিতা মেছের উদ্দিন মুন্সী), আদম আলী (পিতা মেছের উদ্দিন মুন্সী), বাহাজ উদ্দিন আকন্দ (পিতা রহিজ উদ্দিন আকন্দ), ইয়াকুব আলী আকন্দ (পিতা নজাত আলী আকন্দ), মাহাম খাঁ, আব্দুস সামাদ (পিতা দবির উদ্দিন আকন্দ), আবু তাহের প্রামাণিক (পিতা বাহাদুর প্রামাণিক), আসান আলী (পিতা মোনসব আলী), পাওমোছা প্রামাণিক (পিতা আবু তাহের প্রামাণিক), আজগর আলী প্রামাণিক (পিতা জায়েদুল্লাহ প্রামাণিক), মজিবর রহমান প্রামাণিক (পিতা আজগর প্রামাণিক), কানছু মানিক, আব্দুল মজিদ প্রামাণিক (পিতা মুন্সী মগরব আলী প্রামাণিক), আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক (পিতা আব্দুল মজিদ প্রামাণিক), আবু তালেব প্রামাণিক (পিতা কাদের প্রামাণিক), আব্দুল কাফি (পিতা মুন্সী বেলায়েত হোসেন), শমসের আলী, হাকিম উদ্দিন (পিতা শমসের আলী), ফজলার রহমান প্রামাণিক, আব্দুল আজিজ, ছানু ফকির, তারা প্রামাণিক, আব্দুস সামাদ; চড়িয়া দক্ষিণের ঠান্ডু ফকির (পিতা কছিম উদ্দিন ফকির), আহেজ আলী (পিতা রহিজ উদ্দিন), হারান আলী সরকার (পিতা আব্বাস আলী সরকার), মোজাহের প্রামাণিক (পিতা পরবত আলী প্রামাণিক), আবেদ আলী শেখ (পিতা কেফাত আলী শেখ), সোবাহান প্রামাণিক (পিতা কেফাত প্রামাণিক), জুববার আলী খাঁ (পিতা নয়ান উদ্দিন খাঁ), আছাব আলী প্রামাণিক (পিতা কছের আলী প্রামাণিক), বাহাজ উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা হেমায়েত প্রামাণিক), হাতেম আলী প্রামাণিক (পিতা হেমায়েত প্রামাণিক), মুজাহার আলী (পিতা এলাহী বক্স), আব্দুস সামাদ (পিতা মুজাহার আলী), গোলবার হোসেন শেখ, চান্দুল্লাহ শেখ (পিতা ওফাত শেখ), আব্দুল কুদ্দুস সরকার (পিতা রহিম বক্স সরকার), আছাব আলী প্রামাণিক (পিতা কছের উদ্দিন প্রামাণিক), আকবর আলী শেখ (পিতা নূরাল শেখ), নাকা গোলবার শেখ (পিতা নূরাল শেখ), জাবেদ আলী মণ্ডল (পিতা মোহাম্মদ আলী মণ্ডল), নজাব উদ্দিন শেখ (পিতা গোমর আলী শেখ); চড়িয়া কালীবাড়ির শশীভূষণ বসাক, কালীচরণ বসাক, দ্যুতিরাম বসাক, কৃষ্ণ চন্দ্র বসাক, পঞ্চানন বসাক (পিতা কেশব চন্দ্র বসাক), চিত্তরঞ্জন বসাক, সুজাবত আলী শেখ (পিতা ভ্রমর শেখ), আজাহার আলী (পিতা মোকছেদ আলী মুন্সী), ফজলার রহমান (পিতা হারান মুন্সী), মুকতার হোসেন সরকার (পিতা মুনজিল সরকার), মুনজিল হোসেন সরকার, জাকের আলী সরকার (পিতা মনসব আলী সরকার), ওসমান আলী সরকার (পিতা মনসব আলী সরকার), হাবিবুর রহমান শেখ (পিতা আব্দুল জব্বার শেখ), জান বক্স, সোহরাব আলী শেখ, শুকুর মাহমুদ শেখ (পিতা ভ্রমর শেখ), সোহরাব আলী, শাহেদ আলী খন্দকার (পিতা বছির উদ্দিন সরকার), হাবিবুর রহমান, আব্দুর রহমান প্রামাণিক, দেলবর হোসেন খাঁ (পিতা এনছাব আলী খাঁ), বাহাতন নেছা (পিতা বছির উদ্দিন খন্দকার), কেশব চন্দ্র বসাক, আবু বকর শেখ (পিতা হারান মুন্সী), নূর মোহাম্মদ ফকির (পিতা হারান ফকির), আব্দুল কুদ্দুস; চড়িয়া মগড়াপাড়ার তমিজ উদ্দিন খন্দকার, মুকুল হোসেন, শাহজাহান আলী, পুটু মিঞা, হাসান আলী, আব্দুর রহমান, সাবান আলী, খায়ের আলী, মাওলানা রহিম বক্স, সোহরাব আলী, আলতাফ হোসেন, ইয়াকুব হোসেন; গোলকপুরের আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুর রহমি বক্স, আববাস আলী, ঝড়ু মণ্ডল; পাটধারীর ছামান আলী আকন্দ (পিতা জুব্বার আলী আকন্দ), আব্দুর রশিদ আকন্দ (পিতা জুব্বার আলী আকন্দ), আব্দুল মজিদ আকন্দ (পিতা জুব্বার আলী আকন্দ), তাজু আকন্দ (পিতা হাবিবুল্লাহ আকন্দ), মোজদার আকন্দ (পিতা তাজু আকন্দ), আব্দুস সোবাহান আকন্দ (পিতা মোজদার আকন্দ), মাহতাব উদ্দিন তালুকদার (পিতা আসাদ তালুকদার), কাদের তালুকদার (পিতা খয়েরুজ্জামান তালুকদার), খয়েরুজ্জামান তালুকদার (পিতা ফসিউদ্দিন তালুকদার), ফণি মীর (পিতা ঠাণ্ডা মীর), ননী মীর এলএলবি (পিতা ঠাণ্ডা মীর), আফসার আলী খন্দকার (পিতা ইসহাক আলী খন্দকার), গোলাম হোসেন খন্দকার (পিতা ইসহাক আলী খন্দকার), আব্দুর রাজ্জাক টোনা (পিতা ইসহাক আলী খন্দকার), আতাব উদ্দিন খন্দকার (পিতা ইসহাক আলী খন্দকার), জয়নাল খন্দকার (পিতা আতাব আলী খন্দকার), রহিম বক্স প্রামাণিক, সাহেব আলী প্রামাণিক (পিতা রহিম বক্স প্রামাণিক), ময়দান ফকির (পিতা মাদার বক্স ফকির), ঝর্ণা বেগম (স্বামী গোলাম সোহরাব বকুল), আব্দুর রহমান ফকির (পিতা ময়াজ ফকির), আমজাদ তালুকদার খোকা (পিতা দুলা উদ্দিন তালুকদার), বান্দু প্রামাণিক, তারা প্রামাণিক (পেশা রাজমিস্ত্রি), জোনাব আলী মণ্ডল, মুকুট চৌধুরী (পিতা মোজাম্মেল হক চৌধুরী), আব্দুর রহিম বক্স ও গোলবার হোসেন শেখ।
পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর এসব গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। প্রতিবছর ২৫শে এপ্রিল এখানে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ২৫শে এপ্রিল উল্লাপাড়ায় চড়িয়া গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। [কল্যাণ ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড