You dont have javascript enabled! Please enable it!

চণ্ডিপুর যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর)

চণ্ডিপুর যুদ্ধ (মনিরামপুর, যশোর) সংঘটিত হয় ৫ই আগস্ট রাজাকারদের বিরুদ্ধে। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ঘটনার দিন ৫০-৬০ জন রাজাকার- বাসে করে চণ্ডিপুর স্কুল মাঠে পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা রাজগঞ্জ বাজারে যায়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণ এ খবর জানতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত নেন রাজগঞ্জ বাজারেই রাজাকারদের আক্রমণ করবেন। এজন্য তাঁরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হন। একটিতে নেতৃত্ব দেন আব্দুল হামিদ গাজি, অপরটিতে দৌলত বিশ্বাস। অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন- আবুল কালাম (খানপুর), গোপাল মণ্ডল (শ্রীপুর), মুকুন্দ সরকার (মহাদেবপুর) প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান ছিলেন পার্শ্ববর্তী ঝাপা গ্রামের ফ্লাইট লে. ফজলুল হক।
এদিকে রাজাকাররা রাজগঞ্জ বাজার থেকে আবার পায়ে হেঁটে চণ্ডিপুর স্কুল মাঠের কাছাকাছি পৌঁছায়। এ-সময় দৌলত বিশ্বাসের গ্রুপ তাদের লক্ষ করে গ্রেনেড চার্জ করে। একই সঙ্গে এ গ্রুপের অপর দুই সদস্য মুকুন্দ সরকার ও গোপাল মণ্ডল রাজাকারদের লক্ষ করে এসএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করেন। এ-সময় হামিদ গাজী গ্রুপের অবস্থান ছিল পাশের একটি পাটক্ষেতে। রাজাকাররা এটি বুঝতে পেরে তাঁদের ঘেরাও করার চেষ্টা করে। হামিদ গাজী গ্রুপ ফায়ার শুরু করে। রাজাকাররা পিছু হটে। এক পর্যায়ে তাদের ধারণা হয় হামিদ গাজী গ্রুপের হাতে একটির বেশি অস্ত্র সচল নেই। এরপর তারা দৌলত গ্রুপের ওপর তীব্র হামলা চালায়। এ হামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা দৌলত হোসেন ও মুকুন্দ মণ্ডল গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁরা পালাতে পারেননি। রাজাকাররা তাঁদের ধরে ফেলে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। রাজাকাররা হামিদ গাজীকে ঘেরাও করে আত্মসমর্পণ করতে বলে। তিনি নিরুপায় হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। রাজাকাররা তাঁকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদাররা তাঁকে মনিরামপুর উপজেলার চাঁচড়া ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিবাহিনীর তথ্য উদ্ধারের জন্য হামিদ গাজীর ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। তারপরও তাঁর কাছ থেকে তারা কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। সেখানে থাকা অবস্থায় এক পাকসেনার পরামর্শে হামিদ গাজী সৈনিক যোদ্ধা হিসেবে বন্দির সুযোগ দাবি করেন। পাকসেনারা তাঁর আবেদন গ্রহণ করে। নভেম্বর মাসের শেষদিকে চাঁচড়ায় অবস্থানকারী পাকসেনারা ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়ার সময় হামিদ গাজীকে রেল লাইনের পাশে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তিনি ঢাকুরিয়া উত্তরপাড়ায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। পরবর্তীতে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন। [আমিনুর রহমান মামুন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!