চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি বধ্যভূমি (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি বধ্যভূমি (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়।
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় দেয়াঙ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বন্দর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি অবস্থিত। পূর্ব থেকেই এখানে একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে একদল পাকসেনার অবস্থান ছিল। ২০শে মে মেরিন একাডেমি সংলগ্ন বন্দর গ্রামে এক ভয়ানক গণহত্যা সংঘটিত হয়। ঐদিন পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানে নির্বিচারে গুলি করে ২১২ জন মানুষকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান নৌবাহিনী সদস্যদের সঙ্গে মেরিন একাডেমির দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও তার সৈনিকরা যুক্ত ছিল। তাছাড়া এখানে তিন শতাধিক সদস্যের একটি রাজাকার- ক্যাম্প ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে নৌকমান্ডো অপারেশনে ব্যর্থ হয়ে কমান্ডোরা যখন তীরে উঠছিলেন, তখন ভুলক্রমে একজন কমান্ডো মেরিন একাডেমিতে উঠে পড়েন। পাকিস্তানি সৈনিকরা তাঁকে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে এ একাডেমিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈনিক ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারায় অগণিত মানুষ। বিশেষ করে স্থানটি কর্ণফুলী নদীর মোহনা হওয়ায় শহর থেকে প্রতিনিয়ত শতশত মানুষকে নদী পারাপারের জন্য এ ঘাটটি ব্যবহার করতে হতো। ফলে প্রতিদিন পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের হাতে অনেক মানুষ বন্দি হতো। বন্দিদের মাঝ থেকে মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সন্দেহ হলে তাকে একাডেমি সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর ঘাটে নিয়ে গুলি করে নদীতে ফেলে দিত। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ১৪ই আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশন জ্যাকপট নামে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো হামলার পর থেকে এখানে আরো ২ জন মেজর নিজ-নিজ ব্যাটেলিয়নসহ যুক্ত হয়। মেরিন একাডেমির এ ঘাটে এভাবে অসংখ্য মানুষ পাকিস্তানি সৈনিক ও রাজাকারদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। ঘাটটি বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃত হলেও এখানে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কারণ নিহতদের লাশ নদীতে ভেসে গেছে। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড