You dont have javascript enabled! Please enable it!

চকবাজার অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)

চকবাজার অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় ১৮ই মে। মে মাসে ভারত থেকে দুটি সুইসাইড গেরিলা দল চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। দুই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল ১১ জন। একটি গ্রুপের কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম, অন্যটির আবদুস সাত্তার। জাহাঙ্গীর গ্রুপের সদস্যরা হলেন মো. আমিন, মো. ইউসুফ, আইয়ুব, আবু সৈয়দ, জামাল ও আবুল হোসেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিনা ক্যাম্পে সুইসাইড ট্রেনিং শেষে তাঁদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য চট্টগ্রাম শহরে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার মোড় ও লালচাঁদ রোডে বহুদিন ধরে মজুর বেচা-কেনার হাট বসে। ভোর হতে না হতেই চকবাজার মোড় ও লালচাঁদ রোডের মুখ জুড়ে এ হাট বসে। মাটি খোঁড়া, মাটি ভরাট করা, বালু তোলা, ইমারত নির্মাণ করা, রাস্তা-ঘাট মেরামত করা ইত্যাদি কায়িক শ্রমের কাজগুলো করেই দিন মজুরদের সংসার চলত। তাদের সংখ্যা চকবাজার মোড়েই সবচেয়ে বেশি। দরদাম করে এ জায়গা থেকে সকালবেলা যাদের প্রয়োজন তারা দিনমজুরদের নিয়ে যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে এ হাট বসে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রতিনিয়ত এ হাট বসত। কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম চজবাজারের অদূরে প্যারেড মাঠের পূর্ব পাশে চুনার গুদামের ওপর তলায় অবস্থান নেন এবং গেরিলা অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি যখন জানতে পারেন যে, প্রতিদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একটি জিপ নিয়ে এসে চকবাজার হাটের বিভিন্ন দোকান থেকে জোর করে জিনিসপত্র নিয়ে যায়, তখন তিনি অপারেশনের পরিকল্পনা করেন।
কমান্ডার জাহাঙ্গীর দিনমজুরের ছদ্মবেশে ১৮ই মে সকাল ১০টায় চকবাজারের হাটে যান। শ্রমিকদের ভিড়ে তিনি এমনভাবে মিশে যান যে, তাঁকে আলাদা করে চেনার উপায় ছিল না। তিনি দিনমজুরদের সঙ্গে এমনভাবে কথাবার্তা বলতে থাকেন যেন তিনি তাদেরই একজন এবং অনেকদিনের চেনাজানা মানুষ। আলোচনার ফাঁকে তিনি যানবাহন চলাচলের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন। তাঁর লক্ষ্য পাকবাহিনীর সেই জিপ গাড়িটি। কয়েকদিন ধরে তিনি জিপটির চলাচল রেকি করে আক্রমণের সিদ্ধ ও নেন। এক পর্যায়ে জিপটি সেখানে এসে থামে এবং ৪ জন পাকসেনা জিপ থেকে সতর্কভাবে নামে। এরপর ৩ জন বিভিন্ন দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র কেনাকাটা করে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় একজন দোকানদার দাম দিয়ে যেতে বলে। হানাদাররা তাকে আঘাত করে মালামাল নিয়ে জিপে গিয়ে বসে। কমান্ডার জাহাঙ্গীর তখন দিনমজুরদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। তাঁর কোমরে রিভলভার ও গ্রেনেড। জিপের ভেতরে হানাদাররা তখন খোশগল্পে মত্ত। কমান্ডার জাহাঙ্গীর দিনমজুরদের পেছনে গিয়ে একটু আড়াল হয়ে সাবধানে গ্রেনেড বের করে হাতে নেন এবং পিন খুলে এক পা দুপা করে জিপের দিকে এগিয়ে যান। তারপর নিরাপদ দূরত্ব থেকে জিপের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে যান। প্রচণ্ড শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে জিপের ভেতরে থাকা পাকসেনারা ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিহত হয়। চকবাজার অপারেশনই চট্টগ্রামের প্রথম গেরিলা অপারেশন। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!