You dont have javascript enabled! Please enable it! চকরিয়া থানা অপারেশন (চকরিয়া, কক্সবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

চকরিয়া থানা অপারেশন (চকরিয়া, কক্সবাজার)

চকরিয়া থানা অপারেশন (চকরিয়া, কক্সবাজার) প্রথমবার পরিচালিত হয় ২০শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে, দ্বিতীয়বার ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। এতে বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
চকরিয়ার প্রতিরোধযোদ্ধারা অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য প্রথমে চকরিয়া থানাকে চিহ্নিত করেন। ২০শে মার্চ রাত ১০টার দিকে সংগ্রাম কমিটির নির্দেশে চকরিয়া থানায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতিরোধযোদ্ধারা থানা থেকে ১২টি রাইফেল ও ৩০৩ রাইফেলের গুলি সংগ্রহ করেন। ২৩শে মার্চ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত চকরিয়া আমতলা (চকরিয়া সরকারি হাইস্কুল সংলগ্ন) সমাবেশে প্রধান অতিথি এম আর সিদ্দিকী এমএনএ জয়বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত তিন শতাধিক সদস্যের অভিবাদন গ্রহণ করেন। ২৬শে মার্চ সকাল ১১টার দিকে সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে তাঁরা দ্বিতীয়বার চকরিয়া থানা অভিযান পরিচালনা করেন। এ-সময় তাঁরা আরো ১৮টি রাইফেল ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। চকরিয়া থানা থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ অভিযানে ছিলেন- চকরিয়া থানা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এস কে শামসুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক ডা. শামসুদ্দিন চৌধুরী, নুরুল হক, তাহের আহমদ, মোজাম্মেল হক, মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালি, আনোয়ার হাকিম দুলাল, হাবিলদার আবুল কালাম, নায়েক বদিউল আলম, নায়েক আশরাফ, হাবিলদার গোলাম কাদের, শামসুল হুদা বিএসসি, শের আলম, শাহনেওয়াজ, মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, আবুল কাশেম প্রমুখ।
২রা এপ্রিল চকরিয়ায় থানা, অফিস ও চিরিংগা বাণিজ্যিক এলাকার দোকানপাটে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ-সময় কতিপয় পাকিস্তানি দালাল ও পুলিশের সঙ্গে সংগ্রাম কমিটির সংঘর্ষ হয়। এদিকে ২রা এপ্রিল থেকে চকরিয়া থানা সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) মিলনায়তনে (বর্তমান মোহনা) অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন- রশিদুল হক, বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য কবির আহমদ, মাস্টার আহমদ হোসেন, আমিনুল হক বিএসসি-সহ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। প্রথম দিকে অস্ত্র ছাড়া এ প্রশিক্ষণ চললেও পরে চকরিয়া থানা থেকে রাইফেল এনে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। রশিদুল হক এসব অস্ত্র চকরিয়া থানা থেকে স্বাক্ষর করে গ্রহণ করেন। দিনের বেলা এসব অস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যে ব্যবহার করে রাতে তা বাটাখালীস্থ সংগ্রাম কমিটির নেতা নুরুল হকের স্ত্রী জাহেদা বেগমের তত্ত্বাবধানে রাখা হতো। চকরিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনের কয়েকদিন আগে এসব অস্ত্র আবার চকরিয়া থানায় জমা দেয়া হয়।
১৬ই এপ্রিল চকরিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী আসছে এমন খবর রটে যায়। এ-সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের নির্দেশে চকরিয়ার অফিস, থানা, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা হলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের জন্য তৎপরতা চালান। এতে পাকিস্তানি দোসর ও পুলিশের সঙ্গে সংগ্রাম কমিটির কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।
চকরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, ২০ ও ২৬শে মার্চ চকরিয়া থানা অপারেশন, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, কালুরঘাট যুদ্ধ, ২রা এপ্রিল চকরিয়া থানা ও অফিসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ১৬ই এপ্রিল অফিস, থানা ও বিভিন্ন দোকানে পাকিস্তানি পতাকা নামানোর প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দান ও এসবে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ২২শে জুলাই চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। মামলা নম্বর ছিল ৪। এ মামলায় ৩০২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আসামি করা হয়। তন্মধ্যে ৫২ জনের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়। তাঁরা হলেন- আলহাজ্ব এস কে শামশুল হুদা (পিতা মোজাফফর মাস্টার), নুরুল হক (পিতা মোজাফফর মাস্টার), ডা. শামসুদ্দিন চৌধুরী (পিতা সিরাজুল হক চৌধুরী, দুলাহাজারা), তাহের আহমদ মাজু (পিতা আবুল ফজল মাস্টার, বাটাখালী), মোজাম্মেল হক (পিতা বদিউজ্জামান, ভেওলা), মাস্টার সামশুল হুদা বিএসসি (পিতা বদিউজ্জামান, ভেওলা), আহমদ কবির (পিতা বদিউজ্জামান, ভেওলা), অধ্যক্ষ আকবর আহমদ (পিতা বদিউজ্জামান, ভেওলা), আবদুর রহমান (পিতা ফজল করিম, ভেওলা), মো. ইউনুস (পিতা আ. আজিজ, ভেওলা), শাহ নেওয়াজ (পিতা গোলাম কবির, ভেওলা), শের আলম (পিতা সিরাজুল হক, ভেওলা), মাহবুবর রহমান (পিতা দেলোয়ার হোসাইন সিকদার, লক্ষ্যারচর), অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (পিতা খোরশেদ আহমেদ চৌধুরী, লক্ষ্যারচর), হাজী আবু তাহের (ইউপি সদস্য, লক্ষ্যারচর), রেজাউল করিম চৌধুরী রাজা মিয়া (পিতা কবির হোসাইন, লক্ষ্যারচর), মাস্টার নুরুল কবির (পিতা আবদুল কাদের, লক্ষ্যারচর), অধীর চন্দ্র শীল (পিতা হাচী শীল, চিরিঙ্গা), সুবীর চন্দ্র শীল (পিতা হাচী শীল, চিরিঙ্গা), মো. ইছহাক আহমদ কন্ট্রাক্টর (পিতা হাজী ইয়াকুব আলী, চিরিঙ্গা), কবির মিয়া (পিতা আবুল খায়ের, চিরিঙ্গা), আনোয়ারুল হাকিম দুলাল মিয়া (পিতা আনোয়ারুল ইসলাম বাবু মিয়া, চিরিঙ্গা), জমির উদ্দিন আল মুজাহিদ (পিতা আমির হোসাইন, সাহারবিল), খলিলুর রহমান (পিতা আবদুর রশিদ), এস এম সিরাজুল হক মিয়া (পিতা আবদুল মজিদ, মগপাড়া), এডভোকেট জহিরুল ইসলাম এমপিএ (পিতা আশ্রাফ আলী মুন্সী, মগনামা), সাংবাদিক নুরুল ইসলাম (পিতা আশ্রাফ আলী মুন্সী, মগনামা), নুরুল আজিম (পিতা দলিলুর রহমান, বারবাকিয়া), ছাদেকুর রহমান ওয়ারেসি (পিতা সৈয়দুর রহমান, বারবাকিয়া), দেলোয়ার হোসাইন (পিতা আবদুল মজিদ, কাকারা), মোহাম্মদ হোসাইন (পিতা আবদুস সালাম, করইয়াঘোনা), মফজল আহমদ সওদাগর (দুলাহাজারা), মাস্টার নুরুল আলম (পিতা ইদ্রিস আহমেদ), আমির হোসাইন (পিতা ফকির মোহাম্মদ), শহীদ মিয়া (পিতা আলীম উদ্দিন), আলী হোসাইন (পিতা কালু মিয়া, দুলাহাজারা), মো. হোসাইন আহমদ (পিতা মনিরুজ্জামান, হারবাং), খোরশেদ আহমদ মিয়া (পিতা মনিরুজ্জামান, হারবাং), সাবের আহমদ (পিতা বদিউর রহমান, হারবাং), আবুল কালাম (পিতা আবুল ফজল, বাটাখালী), নুরুল আবছার (পিতা ছমেদ আলী, কোনাখালী), আনোয়ার হোসেন বাঙালি (পিতা মনিরুজ্জামান, দক্ষিণ হাতিয়ার ছড়া), নুরুল কবির (পিতা আবদুল মওদুদ, সাহারঘোনা), জীবন চন্দ্র শীল (পিতা উপেন্দ্র চন্দ্র শীল), মো. হোসাইন (পিতা আবদুল জব্বার, পূর্ব বড় ভেওলা), এ এইচ এম সালাহ উদ্দিন মাহমুদ (পিতা সুলতান আহমেদ, বারইয়ারটিলা), মো. আবদুল জলিল (পিতা মো. আলী), আবদুল মোতালেব (পিতা আহমেদ আলী, বারবাকিয়া), আবদুল মান্নান (পিতা ছিদ্দিক আহমেদ, পেকুয়া), সৈয়দ নুর (পিতা আবদুল কাদের), এমদাদ মিয়া (পিতা অছিউর রহমান, বারবাকিয়া) ও মো. ইদ্রিস (পিতা আজিজুর রহমান, বারবাকিয়া)। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড