ঘোড়াইল গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)
ঘোড়াইল গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা) সংঘটিত হয় ৫ই সেপ্টেম্বর। এতে ৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার মাসকা ইউনিয়নভুক্ত ঘোড়াইল গ্রাম কেন্দুয়া থানা থেকে ১ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত। এ গ্রামে হিন্দু-মুসলমানের বসতি ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কেন্দুয়া শহর ও অন্যান্য স্থান থেকে অনেকে এসে এ গ্রামে আশ্রয় নেন। আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে কেন্দুয়া সদরে বসবাসকারী আওয়ামী লীগ নেতা অতুল চন্দ্র সরকার (পিতা জয়নাথ সরকার), তাঁর পুত্র সন্তোষ সরকার (বর্তমান নিবন্ধ লেখক)-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিলেন। এছাড়া কেন্দুয়া বাজারের স্বর্ণব্যবসায়ী কুঞ্জ বিহারী পোদ্দার ও উপেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দার এবং রুহিণী বণিক পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘোড়াইল গ্রামের অনিল চন্দ্র বণিক, ধীরেন্দ্র চক্রবর্তী ও ধোপাবাড়িসহ অন্যান্য বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসব শরণার্থীর কাছ থেকে সম্পদ লুণ্ঠন ও আওয়ামী লীগ নেতা অতুল চন্দ্র সরকারকে ধরার জন্য স্থানীয় দালালদের প্ররোচনায় পাকবাহিনী ৫ই সেপ্টেম্বর ঘোড়াইল গ্রাম আক্রমণ করে। কিন্তু পাকবাহিনী ও রাজাকারদের আক্রমণের আশংকা করে অতুল চন্দ্র সরকার পূর্বেই এ গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। ৫ই সেপ্টেম্বর গ্রামে ঢুকেই পাকসেনা ও রাজাকাররা গ্রামের বণিকবাড়ি থেকে রমেশ বণিক (পিতা ঈশান চন্দ্র বণিক), হরেন্দ্র বণিক (পিতা হরকিশোর বণিক), অনিল চন্দ্র বণিক (পিতা হরকিশোর বণিক), ধীরেন্দ্র চক্রবর্তী (পিতা ঈশান চক্রবর্তী), উপেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দার (কেন্দুয়া বাজার), নন্দ কিশোর দে (পিতা গোবিন্দ চন্দ্র দে, আদমপুর) প্রমুখকে আটক করে। পরে দড়ি দিয়ে বেঁধে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাঁদের ওপর গুলি চালায়। ফলে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত হন। হত্যার পর পাকসেনা ও রাজাকাররা গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন চালায়। ৫ই সেপ্টেমর ঘোড়াইল গ্রামের যে স্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, সেটি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। [সন্তোষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড