You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঘোড়াঘাট ডাকবাংলো গণকবর (ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর)

ঘোড়াঘাট ডাকবাংলো গণকবর (ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর) ঘোড়াঘাট উপজেলা সদরে অবস্থিত। এখানে বহু লোককে কবর দেয়া হয়।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার অন্যতম ঘোড়াঘাট। ১৯৭১ সালে ঘোড়াঘাটবাসী প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ফলে এখানে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটে এবং একাধিক গণকবরও রয়েছে। গণকবরগুলোর মধ্যে একটি ঘোড়াঘাট ডাকবাংলো গণকবর। গণকবরটি ঘোড়াঘাট থানা সদরের অতি সন্নিকটে অবস্থিত। এটি এখন পৌরসভার আওতাধীন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। এখানে একটি স্মৃতিফলক রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতের উত্তর প্রদেশ ও কোলকাতা থেকে অনেক উর্দুভাষী মানুষ ঘোড়াঘাটে এসে বসতি স্থাপন করে। তারা ধর্মে মুসলমান হলেও ভাষা ও সংস্কৃতিতে ছিল আলাদা। তারা অর্থ ও সম্মানে ছিল স্থানীয় বাঙালিদের চেয়ে দুর্বল। তাই স্থানীয় বাঙালি সমাজ তাদের শ্যেনদৃষ্টিতে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশ্নে অবাঙালিরা স্বভাবতই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষালম্বন করে এবং তাদের অধিকাংশ আলবদর-, মুজাহিদ-, আলশামস- ও রাজাকার- বাহিনীতে যোগ দেয়। তারা স্বাধীনতার পক্ষের বাঙালিদের চিহ্নিত করে পাকহানাদারদের মাধ্যমে তাদের হত্যা ও গুমের মতো জঘন্য পথ অবলম্বন করে। স্থানীয় দোসরদের প্ররোচনা ও পরামর্শে ঘোড়াঘাটে তাদের অনেকগুলো ক্যাম্প গড়ে ওঠে। রাজিয়া চৌধুরী (আর সি) উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, হোসেনপুর আমবাগান, বলাহার ও দক্ষিণ জয়দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্প ছিল। এ-সকল ক্যাম্পে পথপ্রদর্শক হিসেবে বেশকিছু সংখ্যক রাজাকার ও আলবদর ছিল। সার্বিক দায়িত্বে ছিল লে. আফজাল। হত্যা, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের জন্য রাজিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্প কুখ্যাত ছিল। এ-সকল ক্যাম্পের নেতৃবর্গ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের আত্মীয়-স্বজন, বিশেষত নারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা সন্দেহভাজনদের ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রাখত ও নির্যাতন করে হত্যা করত। ২৩শে মে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মুজাহিদ বাহিনীর মেজর বদর উদ্দীনকে পাকহানাদার বাহিনী ২১ দিন ধরে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। ঘোড়াঘাটের দখলদার বাহিনী এবং তাদের দোসর বিহারি ও রাজাকাররা কিশোরগাড়ি, রামচন্দ্রপুর, কাশিয়াবাড়ি ও করোতয়া পাড়ায় লুটপাত চালায় এবং ১৬৫ জনকে ধরে আনে। পরে তাদের অনেককে ঘোড়াঘাট ডাকবাংলোর পূর্বপাশে হত্যা করে পুঁতে রাখে। [মো. ওসমান গনী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!