You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঘোড়াশাল ন্যাশনাল জুট মিলস গণহত্যা (নরসিংদী সদর)

ঘোড়াশাল ন্যাশনাল জুট মিলস গণহত্যা (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় ১লা ডিসেম্বর এবং এতে শতাধিক লোক নিহত হয়।
ঘটনার দিন ভোর ৫টার দিকে একজন মেজরের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন পাকসেনা ট্রেনে করে এসে ইজব নগরস্থ ঘোড়াশাল ন্যাশনাল জুট মিলস ঘিরে ফেলে। তখন অনেকেই ছিল নিদ্রামগ্ন। মিলে চলছিল রমজানের ছুটি। তাই মিলের স্টাফরাই তখন সেখানে ছিল। পাকবাহিনী ঘোড়াশাল সেতুর পশ্চিম পাশে গাড়ি থামিয়ে গুলি করতে-করতে মিলে প্রবেশ করে এবং রাস্তার পাশের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। গুলির শব্দ শুনে মিল এবং মিলের আশপাশের লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকে। মিলের সহকারী ম্যানেজার আবু তালেব পাকবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে মিলের সবাইকে আশ্বস্ত করে কাছে ডেকে আনে। তাদের সংখ্যা আনুমানিক দেড়শ হবে। এরপর ঐ মেজর সবাইকে ডেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায় এবং ম্যানেজারের কাছে জানতে চায় এখানে কোনো মুক্তিযোদ্ধা আছে কিনা। ম্যানেজারের উত্তরের অপেক্ষা না করে মেজর সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করে। ম্যানেজার নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন যে, এরা কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন। বেলা প্রায় ২টা পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে এ নিয়ে কথা হয়। শেষ পর্যন্ত মেজর ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং সবাইকে স্ব-স্ব কাজে যোগ দিতে বলে। স্টাফরা সবাই নিজ-নিজ কাজে চলে যায়। মেজর ও তার সৈন্যরা মিল প্রদক্ষিণ করতে থাকে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিবাহিনী অনুসন্ধান করা। অবশেষে তারা গাড়ির দিকে রওনা হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে কোথা থেকে কে যেন দুটি গুলি ছুড়ে। গুলির শব্দ শুনে মেজর ও সৈনিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় মিলের দিকে রওনা হয়। তারা কালবিলম্ব না করে অফিস স্টাফদের প্রত্যেকের বাসায় ঢুকে যাকে যেভাবে পেয়েছে সেভাবেই হত্যা করে। এদিন মিলের গেট কিপার এবং অফিসার ও স্টাফের দুজন ছাড়া বাকি সবাইকে পাকবাহিনী হত্যা করে। শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ট্রেনে উঠে ঢাকা অভিমুখে চলে যায়। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!