গৌরীনগর গণহত্যা (কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট)
গৌরীনগর গণহত্যা (কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট) সংঘটিত হয় দুদফায়। এতে ৯ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গৌরীনগর একটি অজপাড়াগাঁ। সালুটিকর ফেরিঘাট হয়ে সিলেটের সঙ্গে এর যোগাযোগ। এখানেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একটি শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। সিলেটসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো। পাকসেনাদের একটি পৃথক গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। অক্টোবর মাসের শেষদিকে একদিন সকালে এক দল পাকসেনা এসে হাজির হয় গৌরীনগর গ্রামে। এসেই তারা গ্রামের সমস্ত লোকজনকে কোম্পানীগঞ্জ সড়কের পাশে এনে জড়ো করে। চারদিকে সেনা বেষ্টনী দিয়ে বন্দিদের ওপর শুরু করে নির্যাতন। দীর্ঘক্ষণ ধরে অত্যাচার-নির্যাতন চলে। সকলেরই শরীর ক্ষত-বিক্ষত এবং তাদের অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়। কারো কারো হাত-পা ভেঙ্গে গেছে। কারো-বা মুখমণ্ডল ও মাথা ছিল ভয়ানকভাবে থেঁতলানো। এ অবস্থায় মূল দল থেকে ৫ জনকে আলাদা করা হয়। তারপর সালুটিকর- কোম্পানীগঞ্জ সড়কের পাশে এক সাড়িতে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর গুলি করা হয়। এতে ৫ জনই সঙ্গে-সঙ্গে শহীদ হন। তারা হলেন— আহমদ আলী, মরম আলী, ময়না মিয়া, মক্তাদির আলী ও আবদুল হামিদ। তারপর অস্ত্রের মুখে আরো কিছু লোককে এখানে এনে তাদের দিয়ে দুটি গর্ত খুঁড়িয়ে তাতে শহীদের লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়।
অল্প কিছুদিনের মধ্যে এখানে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চালানো হয়। এ আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকাররা বিভিন্ন বাড়ি থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- গৌরীনগরের আবদুল করিম, মজম্মিল আলী, কোড়ারপারের রুস্তম আলী এবং রাজাপুরের আবদুর রহিম। তারপর এদের নিয়ে যাওয়া হয় পুচকাউড়ি হাওরে। সেখানে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে সবাইকে হত্যা করা হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড