You dont have javascript enabled! Please enable it!

গৌরাঙ্গপাড়া গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

গৌরাঙ্গপাড়া গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৩শে এপ্রিল। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের অন্তর্গত হিন্দু অধ্যুষিত গৌরাঙ্গপাড়ার দক্ষিণাংশে এ গণহত্যা চালায়। এখানে বিশেষ দুটি বাড়ি হলো মিত্রবাড়ি ও দাশবাড়ি। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে পটিয়া পিটিআই ক্যাম্প থেকে ৪-৫ জন পাকসেনা কয়েকজন স্থানীয় দোসরসহ এসে মিত্রবাড়ি ও দাশবাড়ি রেকি করে আবার ক্যাম্পে ফিরে যায়। তাদের আসতে দেখে দুই বাড়ির অনেকে পূর্বদিকে পাহাড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু হানাদাররা ফিরে যাওয়ার পর কেউ-কেউ আবার বাড়ি ফিরে আসে। দুপুর দুটার দিকে পাকবাহিনী আবার এখানে আসে। তাদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় দোসর আবুল হোসেন (গোবিন্দারখীল), আলী আহমেদ (হাইদগাঁও), লিয়াকত আলী (হাইদগাঁও), মো. ইসমাইল (হাইদগাঁও), দুলা মিয়া (হাইদগাঁও), এজাহার মিয়া (হাইদগাঁও), ফজর রহমান (হাইদগাঁও) এবং গুরু মিয়া (হংসের পাড়া, হাইদগাঁও)। তারা প্রথমে মিত্রবাড়িতে ঢুকে। সেখানে এক নারীকে ধর্ষণ করে। নগেন্দ্রলাল মিত্র ও তার পুত্র কৃষ্ণকুমার মিত্র বাধা দিলে হানাদাররা প্রথমে কৃষ্ণকুমার মিত্র এবং পরে নগেন্দ্রলাল মিত্রকে হত্যা করে। তারা আরো তিনজনকে হত্যা করে মিত্রবাড়ির সব ঘরে লুণ্ঠনপূর্বক গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিত্রবাড়ির উত্তর পাশে দাশবাড়ি। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সেখানে গিয়ে ৪ জনকে হত্যা ও কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে। অতঃপর এখানেও লুণ্ঠনপূর্বক সব ঘরে গানপাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। মিত্রবাড়ি ও দাশবাড়িতে প্রায় দুঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে বিকেল ৪টার দিকে পাকসেনারা ক্যাম্পের দিকে যেতে থাকে। পথিমধ্যে গৌরাঙ্গপাড়ায় তারা কাঞ্চন মিয়া নামে একজন কৃষককে হত্যা করে। তারপর তারা বর্তমান ফৌজদারি কোর্ট রোড হয়ে ক্যাম্পে ফিরে যায়। তারা চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে লাশগুলো সংগ্রহ করে মিত্রবাড়ি ও দাশবাড়ির উত্তর পাশে রাস্তাসংলগ্ন পুকুরপাড়ে মাটিপাচা দেয়া হয়। এ গণহত্যায় শহীদরা হলেন: মিত্রবাড়ির কৃষ্ণকুমার মিত্র (পিতা নগেন্দ্রলাল মিত্র), নগেন্দ্রলাল মিত্র ওরফে মহাজন (পিতা বঙ্গচন্দ্র মিত্র), রুক্মিণী মিত্র (পিতা সারদাচরণ মিত্র), অনিল মিত্র (পিতা মণীন্দ্র মিত্র), জীবনহরি মিত্র (পিতা গুরুদাশ মিত্র), দাশবাড়ির সাধন দাশ (পিতা রামকৃষ্ণ দাশ), ক্ষেমহরি দাশ (পিতা বোচন দাশ), সুনীল দাশ (পিতা প্রেমহরি দাশ), নিরঞ্জন দাশ ওরফে সোনারাম দাশ (পিতা হরকুমার দাশ) এবং গৌরাঙ্গপাড়ার কাঞ্চন মিয়া (পিতা আলী হোসেন)। এঁদের বয়স ২২-৭০ বছরের মধ্যে। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!