You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক গোলাম আজাদ

গোলাম আজাদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৪) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালের ১লা অক্টোবর নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইটনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোলাম হাসিব এবং মাতার নাম রাবেয়া বেগম। গোলাম আজাদ ১৯৭১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। তারা গোলাম আজাদের ইটনা গ্রাম আক্রমণ করে ৪৯ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এ- সময় গোলাম আজাদ স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য মে মাসে ভারতে চলে যান। ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া ক্যাম্পে প্রথম ব্যাচে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৮ নম্বর সেক্টরে খন্দকার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বয়রা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এ-সময় তিনি নড়াইল, লোহাগড়া, গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়াসহ আরো কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরা জেলার বুনোগাতি রাজাকারদের শক্তিশালী ক্যাম্পে অপারেশন চালান। তাঁরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে এ আক্রমণ করেন, যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম আজাদ। তাঁর দল অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে সুরক্ষিত বাংকারে গ্রেনেড ছুড়ে ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করে। রাজাকাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোলাম আজাদ তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। রাজাকারদের এ ক্যাম্পটি ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। এখান থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও দালালরা আশেপাশের গ্রামগুলোতে অত্যাচার-নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ করত। এজন্য মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। গোলাম আজাদের ক্ষিপ্রতা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোরকম ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই রাজাকরদের এ ক্যাম্প দখলে আসে।
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁরা ভাটিয়াপাড়া যাওয়ার জন্য জড়ো হওয়া পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে কয়েকজনকে হতাহত করেন। একই মাসের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি ভাটিয়াপাড়া থেকে খুলনাগামী হানাদারদের দুটি লঞ্চ আক্রমণ করেন। এতে বেশ কয়েকজন হানাদার সদস্য হতাহত হয়। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে লোহাগড়া উপজেলা আক্রমণ এবং ১০ই ডিসেম্বর নড়াইল শহর দখলে এ দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৮-১৯শে ডিসেম্বর গোলাম আজাদের নেতৃত্বে এ দলটি পাকিস্তানি বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্প আক্রমণ করে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোলাম আজাদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। গোলাম আজাদ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, টিএন্ডটি এবং গণপূর্ত বিভাগে প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন। ২০১৫ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের একটি প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। তাঁদের ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!