You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক গোলাম মোস্তফা - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক গোলাম মোস্তফা

গোলাম মোস্তফা, বীর প্রতীক (১৯২৮-২০০০) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৮ সালে সিলেট জেলার জালালাবাদ থানার কালারুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জালালাবাদ থানা শহর থকে ১৫ কিলোমিটার
দক্ষিণে এ গ্রাম। গোলাম মোস্তফার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী এবং মাতার নাম আয়েশা বিবি। তিনি সিলেট শহর থেকে এসএসসি পাস করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সাহসী ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর শুরু থেকেই যে শোষণ-বৈষম্য চালাচ্ছিল, তা তরুণ বয়স থেকে তাঁর মনে গভীর রেখাপাত সৃষ্টি করে। গোলাম মোস্তফা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ইপিআর- এর সিপাহি পদে তিনি সিলেটের আখালিয়া ক্যাম্পে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন স্থানে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি রংপুরের ১০ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। এখান থেকে ২৮শে মার্চ পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। রংপুরে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও অবাঙালি ইপিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে লড়াই করেন। ১লা এপ্রিল তিস্তা নদীর ওপর ব্যারিকেড স্থাপন করে তাঁরা পাকসেনাদের অগ্রগতি রোধ করেন। এক পর্যায়ে এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে পড়লে পাকবাহিনীর মেজর এজাজ ও ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভাঙ্গার জন্য পাকসেনারা পরদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তীব্র আক্রমণ পরিচালনা করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে মরণপণ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে গোলাম মোস্তফা বীরত্বের পরিচয় দেন।
প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে গোলাম মোস্তফা ভারতে প্রবেশ করে উইং কমান্ডার এম কে বাশারের নেতৃত্বাধীন ৬ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। পরে তিনি ফুলবারী-ভুরুঙ্গামারী-উলিপুর সাব- সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দিনের অধীনে যুদ্ধ করেন। এ সাব-সেক্টরের অধীন এলাকায় পরিচালিত বিভিন্ন এম্বুশ, মাইন স্থাপন ও অপারেশেনে গোলাম মোস্তফা নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১লা অক্টোবর তাঁদের স্থাপিত মাইন বিস্ফোরণে আন্ধারীঝাড় নামক স্থানে ১ জন ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোলাম মোস্তফাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪২৪, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭৪)।
স্বাধীনতার পর গোলাম মোস্তফা বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যোগদান করেন। বিডিআর- এর সৈনিক হিসেবে তিনি অসীম সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকার পিলখানা থেকে তিনি সুবেদার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহরের একটি বেসরকারি প্রিন্টিং প্রেসে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেন। ২০০০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ২ কন্যা ও ৮ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম খায়রুন নেছা। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড