You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক গোলাম হোসেন

গোলাম হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৩৪-১৯৮১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বারপাড়া ইউনিয়নের টোলাটুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এ গ্রাম। গোলাম হোসেনের পিতার নাম আফসার উদ্দিন মোল্লা এবং মাতার নাম মোমেনা খাতুন। তিনি কুমিল্লার বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তরুণ বয়স থেকেই গোলাম হোসেন এলাকায় একজন সাহসী যুবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
গোলাম হোসেনের কর্মজীবনের শুরু ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে। তিনি চট্টগ্রামে ইপিআর-এর সিপাহি পদে যোগ দেন এবং সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি সিলেট সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী ঢাকার পিলখানায় গণহত্যা শুরু করলে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি বাঙালি ইপিআর সদস্যদের একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতের ডাউকিতে নিয়ে যান। সেখানে তিনি প্রথমে কিছুদিন ছাত্র-তরুণদের নিয়ে গঠিত কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে গোলাম হোসেন প্রথমে ৫ নম্বর সেক্টরে মেজর মীর শওকত আলী, বীর উত্তম- এবং পরে ৪ নম্বর সেক্টরে মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত, বীর উত্তম-এর অধীনে যুদ্ধ করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে এসে সিলেটের তামাবিল ও জাফলং এলাকায় একাধিকবার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এম্বুশ ও আক্রমণ পরিচালনা করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকসেনারা হতভম্ব হয়ে পালিয়ে যায়। এতে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রচুর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এ যুদ্ধে গোলাম হোসেন অসাধারণ বীরত্ব ও রণকৌশল প্রদর্শন করেন। এরপর সিলেটের জৈন্তা এলাকায় পাকবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে পরিচালিত সম্মুখ যুদ্ধেও তিনি অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত ও বিপর্যস্ত হয়। তাদের অনেক গোলাবারুদ ও রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ-যুদ্ধে গোলাম হোসেন আহত হন। সিলেট টিবি হাসপাতাল এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে গোলাম হোসেন বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার গোলাম হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪২৭, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭৭)।
স্বাধীনতার পর গোলাম হোসেন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি)-এ যোগদান করেন। শুরু থেকে এ বাহিনীর পুনর্গঠনমূলক কাজে তিনি সম্পৃক্ত হন। নবগঠিত বিডিআর-এ সততা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সুবেদার মেজর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তাঁকে বাংলাদেশ-বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) সীমান্ত চিহ্নিতকরণ দলের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। কমান্ডার হিসেবে বার্মা সীমান্তে যাওয়ার পথে ১৯৮১ সালের ১০ই এপ্রিল এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তিনি প্রাণ হারান। দেশের জন্য দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার এ আত্মদান সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দেশসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কক্সবাজার বিমান বন্দর সংলগ্ন মসজিদের পাশে এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!