You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোলাহাট গণহত্যা (সৈয়দপুর, নীলফামারী)

গোলাহাট গণহত্যা (সৈয়দপুর, নীলফামারী) সংঘটিত হয় ১৩ই জুন গোলাহাট রেলওয়ে ব্রিজ বা কালভার্টের ওপর। এতে ৪৫০ জন শিশু-নারী-পুরুষ নিহত হয়। পাকবাহিনী স্থানীয় বিহারি ও বাঙালি দালালদের সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড চালায়।
গোলাহাট রেলওয়ে ব্রিজ বা কালভার্টের অবস্থান সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কয়াগোলাহাটের কাছে। এ ব্রিজের ৫০০ গজ পূর্বদিকে কয়াগোলাহাট। এটি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। গোলাহাট গণহত্যার মূল ঘাতক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় বিহারিরা। এছাড়া এ গণহত্যায় ইপিসিএএফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস~) বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মতিন, হাশেম ও কাইয়ুম এবং তাদের সহযোগীরা সৈয়দপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এনে বিমান বন্দরের কাজ করাত। এদের নেতৃত্বে সৈয়দপুরে বাঙালিদের ওপর প্রায়ই নির্যাতন ও অত্যাচার চলত। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর স্থানীয় বাঙালিদের ওপর এদের নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। অনেক বাড়িঘরে তারা লুটপাট চালায়। অনেককে গৃহবন্দি করে রেখে জোর করে ব্যাংকের চেকে সই নিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়। অনেককে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। ১৩ই জুন তারা ভারতে পাঠানোর কথা বলে বহু নারী-পুরুষকে চিলাহাটিগামী ট্রেনে উঠায়। ট্রেন গোলাহাটে পৌঁছলে তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে নেতৃত্ব দেয় মহিউদ্দিন গুণ্ডা, শুকুর কসাই, সম্পাত প্রমুখ। অবাঙালি পুলিশ, অবাঙালি গুণ্ডা, মিউনিসিপ্যালিটির পিয়ন মহিউদ্দিন, মেহেদী পানওয়ালা, ইসমাইল, ফরহাদ টেইলরসহ অনেকে বল্লম ও রামদা নিয়ে ট্রেনে ওঠে। তারা একের পর এক সবাইকে রামদা ও বল্লম দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আক্রান্তদের অনেকে হত্যাকারীদের পূর্বপরিচিত ছিল। পরিচিতরা মৃত্যুর পূর্বে হাতে-পায়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করলেও ঘাতকদের মন গলেনি। চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তলোয়ার দিয়ে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে অনেককে হত্যা করা হয়। শিশুদের দুই পা ধরে টেনে দেহ ছিন্নভিন্ন করা হয়। যারা জীবন বাঁচানোর জন্য ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে, তাদের মেশিনগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেকে মারাত্মভাবে আহত হয়। এ গণহত্যায় ৪৫০ জন নারী-পুরুষ প্রাণ হারান।
নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- যমুনা প্রসাদ, শান্তি দেবী, দ্বারকা প্রসাদ, ললিত কুমার, দিলীপ কুমার, সলিল কুমার, মুন্না, প্রদীপ কুমার আগরওয়ালা, সুমিত্রা দেবী, ঊষা আগরওয়ালা, সুনীতা, রিতা, রামেশ্বরলাল আগরওয়ালা, পুরুষোত্তমলাল আগরওয়ালা, বিমল কুমার আগরওয়ালা, মুরুলীধর আগরওয়ালা, দুর্গাপ্রসাদ আগরওয়ালা, নিতা কুমারী, রাজেশ কুমার আগরওয়ালা, পুষ্পা দেবী, শান্তি দেবী, মাঙ্গিলাল আগরওয়ালা, দোয়ারকা প্রসাদ আগরওয়ালা, ঊষা দেবী, নিতা দেবী, সরোজ দেবী, ললিতকুমার আগরওয়ালা, রঞ্জিত কুমার আগরওয়ালা, মানিক কুমার আগরওয়ালা, তিলোক কুমার আগরওয়ালা, কিশোরকুমার আগরওয়ালা, শহীদ রাধাকৃষ্ণ আগরওয়ালা, দামোদর প্রসাদ আগরওয়ালা, গোদাবরী দেবী আগরওয়ালা, চন্দা দেবী আগরওয়ালা, ললিতা দেবী আগরওয়ালা, রাজকুমারী দেবী আগরওয়ালা, শহীদ পুনমচাঁদ কেডিয়া, চাপলা প্রসাদ কেডিয়া, সুরেশ কেডিয়া, মিতা কেডিয়া, লক্ষ্মী আগরওয়ালা, অশোক আগরওয়ালা, মুন্না আগরওয়ালা, লীলা আগরওয়ালা, মোহন লাল ঘোষ, পুষ্প রাণী ঘোষ ও কার্তিক ঘোষ। নিহতদের অনেকের বাড়ি সৈয়দপুরের মারোয়ারিপট্টিতে। শহীদের স্বরণে গোলাহাট বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [আহম্মেদ শরীফ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!