You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.05 | গোয়ালহাটি যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর) - সংগ্রামের নোটবুক

গোয়ালহাটি যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর)

গোয়ালহাটি যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর) সংঘটিত হয় ৫ই সেপ্টেম্বর। এ-যুদ্ধে ইপিআর-এর ল্যান্স নায়েক নূর মোহম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ – ও একজন কৃষক শহীদ হন। অপরপক্ষে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ঘটনার দিন বিকেলে ছুটিপুর এলাকা থেকে রেঞ্জার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ১৫০ জনের মতো পাকসেনা গোয়ালহাটি-আটিলা সড়ক ধরে সামনের দিকে এগুতে থাকে। এ-সময় আগে থেকে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ। এখানে গাছের ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ওপি (অবজারভেশন পোস্ট) ছিল। পাকহানাদার বাহিনী এই ওপিটি ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। তারা দুভাগে ভাগ হয়ে সেখানে গুলি ছুড়লে স্থানীয় একজন কৃষক শহীদ হন। হানাদারদের গুলিতে ওপিটি নিচে পড়ে যায়। শত্রুর মর্টারের আঘাতে আহত হন মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়া। তাঁর হাতে ছিল একটি এলএমজি। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ছুটে এসে আহত নান্নু মিয়াকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনদিক থেকে পাকবাহিনীর আক্রমণে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিধান্ত নেন। তখন নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়ার এলএমজি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালান। হঠাৎ শত্রুর আর একটি মর্টারের গোলায় নূর মোহাম্মদের ডান পা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তখন মোস্তফা নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এদিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নূর মোহাম্মদ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালিয়ে যান। তাঁর মৃত্যুর পর হানাদার বাহিনী পৈশাচিক আচরণ করে। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর সমস্ত শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেয়। চোখ দুটি তুলে ফেলে। বুট দিয়ে লাথি মেরে মাথা থেতলে দিয়ে মরদেহটি একটি ঝোঁপের মধ্যে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা রক্তাক্ত নূর মোহম্মদকে উদ্ধার করে কাশিপুর সীমান্তে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করেন। গোয়ালহাটির যুদ্ধে ২৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। [ফখরে আলম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড