You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোয়ালীমাদ্রা যুদ্ধ (লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ)

গোয়ালীমাদ্রা যুদ্ধ (লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৬শে অক্টোবর। এ যুদ্ধে ৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ৬০ জন আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকহানাদারদের দ্বারা গঠিত EPCAF বাহিনীর একটি দল ২৬শে অক্টোবর নৌকা করে লৌহজং থেকে শ্রীনগর যাচ্ছিল। সে-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল তাদের আক্রমণ করে। EPCAF সদস্যরা পরাজিত হয়ে নৌকায় অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা এসব অস্ত্র সংগ্রহ করেন। পরাজয়ের এ খবর পেয়ে পাল্টা আক্রমণের জন্য পাকিস্তানি সৈন্যরা সুসজ্জিত হয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে লৌহজং-এর দিকে রওনা দেয়। সেদিন ছিল মঙ্গলবার, সাপ্তাহিক হাটের দিন। সকাল ৭টায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, ‘এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হবে।’ ঘোষণার পরপরই এলাকাবাসী সরে গেলে হাট বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গোয়ালীমাদ্রা হাটে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। লৌহজং-এর মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের শতাধিক মুক্তিযোদ্ধারা গোয়ালীমাদ্রা হাট ও এর চারপাশে পজিশন নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। প্রায় ২৮ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে ৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ৬০ জন আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে যৌথভাবে চারটি গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
গোয়ালীমাদ্রা যুদ্ধে কমান্ডার ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, শামছুল হক, মোফাজ্জল হোসেন ও আতিকউল্লাহ খান মাসুদের নেতৃত্বে হলদিয়া, ভাগ্যকুল, টঙ্গিবাড়ি ও শিমুলিয়ার অনেক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সোলায়মান (কমান্ডার), শহীদুল আলম সাঈদ, ইকবাল হোসেন, জিলু ইকবাল, সিন্টু, গণি, শাহজালাল, বাবুর, ওহাব, হারুন, টুকু, আবদুল শহীদ ভূঁইয়া, কুতুবউদ্দিন খান দিলু, আওয়াল, সেলিম, জাহাঙ্গীর, দুলাল, কাসেম, নান্নু, রতন, ইদ্রিস, আলি হোসেন, বাহারুল ইসলাম, হাবিলদার বাহাউদ্দিন, সিপাহি আবদুল হামিদ, মোহর খসরু, নুরুল ইসলাম, মন্টু, আরশাদ, বাদশা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
সকাল ১০টা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কারের মধ্যে এলএমজি ও গোলা-বারুদ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে পজিশন নেন। দক্ষিণ পাশে কমান্ডার ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন ও কমান্ডার সোলায়মানসহ অন্যরা, পশ্চিম দিকের খালের পাড়ের বেদে বাড়িতে আবদুল শহীদ ভূঁইয়া ও তাঁর গ্রুপ এবং হাটের পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে কমান্ডার মাসুদ আক্রমণ চালানোর জন্য পজিশন নেন। বেলা ২টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা দুটি লঞ্চে করে শ্রীনগর থেকে লৌহজং হয়ে হলদিয়া যাচ্ছিল। লঞ্চদুটি গোয়ালীমাদ্রা হাটের নিকটবর্তী আসার সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালান। চারদিক থেকে চলতে থাকে চোরাগুপ্তা হামলা। পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এভাবে ৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সারাদিন ও সারারাত যুদ্ধ চালিয়ে পরের দিন সকাল ৯টায় বেলুচ, পাঠান আর পাঞ্জাবি মিলে ৬০ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয় এবং তারা বন্দি হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোরা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। যুদ্ধে ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। বন্দি পাকিস্তানি সৈন্যদের মৌচা প্রাইমারি স্কুলে সারাদিন রেখে স্থানীয় জনগণকে দেখানো হয়। এটি ছিল লৌহজং মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সফল যুদ্ধ। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!