গোমস্তাপুর হিন্দুপাড়া গণহত্যা (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
গোমস্তাপুর হিন্দুপাড়া গণহত্যা (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৩শে এপ্রিল। এতে ৩৫ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
২১শে এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানা দখলের পর পাকহানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তারা বাড়ি- বাড়ি হানা দিয়ে অনেক মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে। হানাদার বাহিনী গোমস্তাপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ২৩শে এপ্রিল দুপুরে পাকবাহিনী দালালদের সহায়তায় গোমস্তাপুর থানা সংলগ্ন হিন্দুপাড়ায় অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৩৫ জন পুরুষকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর পেট্রোল দিয়ে সমস্ত পাড়া জ্বালিয়ে দেয়। ধৃত ৩৫ জন নিরীহ মানুষকে হানাদাররা থানার পার্শ্ববর্তী খালের ধারে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলো পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
সেদিন যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তারা হলেন— অনিল কুমার কর্মকার, গুপিনাথ কর্মকার, দিবস চন্দ্র কর্মকার, নিরঞ্জন কর্মকার (নুকা), কার্তিক চন্দ্র কর্মকার, বিনোদ চন্দ্র কর্মকার, মহিপদ কর্মকার, কামিনী কর্মকার, শিবনারায়ণ কর্মকার, অবিনাশ কর্মকার, কৃষ্টপদ কর্মকার, গুপ্তীশ চন্দ্র কর্মকার, মন্টু কর্মকার, গোবিন্দ চন্দ্র কর্মকার, খগেন্দ্রনাথ শীল, বীরেন্দ্রনাথ শীল, গোবিন্দ হালদার, ভীমচন্দ্র হালদার, চণ্ডী কুমার শীল, কান্তি দত্ত, কল্যানণ কুমার দত্ত, সুনীল কুমার দত্ত, কেদারনাথ দত্ত, হরেরাম দত্ত, কানু সাহা, সতীশ চন্দ্র সাহা, নীরু হালদার, মৃত্তন চন্দ্র, নিরু, ভাষণ সাহা, মন্টু সাহা, কানাই সাহা, শশধর মুনিয়া, অতুলচন্দ্র সাহা ও জীতেন্দ্ৰনাথ দত্ত।
পাকহানাদার বাহিনী গোমস্তাপুর থানায় সেনাছাউনি গড়ে তুলেছিল। পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে সেখানে রাখত। তারপর তাদের গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে বা বুটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের ফাঁকা জায়গায় মাটিচাপা দিত। অনেককে তারা জবাই করে হত্যা করেছে। কখানো-কখনো জীবন্ত ও আধমরা মানুষকেও মাটিতে পুঁতে ফেলত। গোমস্তাপুর থানা সংলগ্ন স্থানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করার চিহ্ন রয়েছে। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড