You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.10 | গোয়াতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) - সংগ্রামের নোটবুক

গোয়াতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ)

গোয়াতলা যুদ্ধ (ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ১০ই সেপ্টেম্বর। ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজারস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে পাকসেনারা আক্রমণ করলে এ-যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা-প্রতিরোধ গড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। তিনদিক থেকে পরিচালিত পাকসেনাদের আক্রমণে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
গোয়াতলা ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে নেত্রকোণা মহকুমার পূর্বধলা থানাধীন ছিল। এ ইউনিয়নের গোয়াতলা বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। ভারতের শিববাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ ক্যাম্পে অবস্থান করতেন। এখান থেকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করা হতো।
১০ই সেপ্টেম্বর ভোরে পাকবাহিনী তিনদিক থেকে গোয়াতলা বাজার আক্রমণ করে। নেত্রকোণার পূর্বধলা থেকে এসে পাকসেনারা গোয়াতলা বাজারের দক্ষিণ দিকে, দুর্গাপুরের বিরিশিরি ক্যাম্প থেকে এসে গোয়াতলা বাজারের পূর্বদিকে ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে এসে বাজারের উত্তর দিকে অবস্থান নেয়। ভোরে তারা তিনদিক থেকে একযোগে গোয়াতলা বাজারের ওপর মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
৯ই সেপ্টেম্বর এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা গোয়াতলা ক্যাম্প ত্যাগ করে ফুলপুর থানার চিকনীকান্দা গ্রামে চলে যান। সেখান থেকে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া রেলপথের কুকুয়াখালী রেল ব্রিজে পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। ১০ই সেপ্টেম্বর গোয়াতলা ক্যাম্পে বিভিন্ন প্লাটুনের কয়েকজন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। পাকবাহিনীর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সূর্য ওঠার সঙ্গে- সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে-করতে পেছনে সরে যেতে শুরু করেন। তাঁরা এক পর্যায়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। সেদিন ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
গোয়াতলা বাজারে প্রবেশ করে পাকসেনা ও রাজাকাররা বিভিন্ন দোকানে লুটপাট চালায়। পরে সমগ্র বাজার তারা পুড়িয়ে দেয়। বাজারের পূর্ব পাশের সনাটিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী ও হেলার উদ্দিনের বাড়িও তাদের দেয়া আগুনে ভস্মীভূত হয়।
১৪ই সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি খবর ঢাকার দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয়। এতে পাকবাহিনীর দখলে আসা অস্ত্র ও গোলাবারুদের তালিকা দেয়া হয়। খবরে ২টি অটোমেটিক রাইফেল, ৪২টি হাতবোমা, ২টি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন, ৮০০ ফুট প্রিমাকর্ড, এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্রের মোট ৫ হাজার ৩শ ৫৫ রাউন্ড গুলি পাকিস্তানিদের দখলে আসে বলে উল্লিখিত হয়। খবরে ৩৫ জন ‘অনুপ্রবেশকারী’ নিহতের কথাও বলা হয়। সেসব অস্ত্র দেখতে ও হানাদার পাকসেনাদের প্রশংসা করতে ১৭ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি নেত্রকোণায় যায়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড