You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোপালপুর বাজার গণহত্যা (লালপুর, নাটোর)

গোপালপুর বাজার গণহত্যা (লালপুর, নাটোর) সংঘটিত হয় ৫ই মে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় এ গণহত্যা চালায়। এতে অন্তত ১২ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। হানদাররা বাজারের দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। গোপালপুর বাজারে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তারা গোপালপুর-লালপুর রাস্তায় আরো ৫ জনকে হত্যা করে।
লালপুর উপজেলাধীন গোপালপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে বাজারের অবস্থান। ঘটনার দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঈশ্বরদী বিমান বন্দর থেকে তাদের এদেশীয় দালাল ইদুয়ার নেতৃত্বে গোপালপুর বাজারে আসে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল গোপালপুর সুগার মিলে যাওয়া। গোপালপুরের দিকে পাকিস্তানি সৈন্যদের গাড়ি আসছে শুনে স্থানীয় বাঙালিরা লালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে তাদের প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পাকিস্তানি সেনাবহর গোপালপুর বাজারে বাঙালিদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। পাকহানাদাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। অবিরাম গুলির মুখে প্রতিরোধকারীরা টিকতে পারছিল না। ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ- সময় রোগী দেখতে বাজারে এসে ডা. শাহাদাৎ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। শুরু হয় লুটপাট। বাজারের ব্যবসায়ী তোফাজ্জল, সাজদার প্রমুখকে গুলি করে হত্যা করে তাদের দোকানে লুটপাট এবং পরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেদিন গোপালপুর বাজারে ১২ জন মানুষ পাকিস্তানি ঘাতক ও দালালদের অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। এ ১২ জনের মধ্যে ২ জন ছাত্র, ৫ জন ব্যবসায়ী, ১ জন স্টেশন মাস্টার, ১ জন দর্জি, ২ জন সাধারণ মানুষ ও ১ জন ডাক্তার ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা গোপালপুর চিনিকলের দিকে রওনা দেয়। পথে গোপালপুর- লালপুর রাস্তায় আরো ৫ জন টমটম আরোহীকে গুলি করে হত্যা করে।
গোপালপুর বাজার গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যে ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন (পিতা ছইমুদ্দিন প্রামাণিক, ভূঁইয়াপাড়া, গোপালপুর), তোফাজ্জল হোসেন (পিতা দুখু ব্যাপারী, গোপালপুর বাজার), সাদের প্রামাণিক (পিতা নাছির প্রামাণিক, বিজয়পুর), সাজদার রহমান (পিতা আ. রহমান, বিলশোলিয়া), মখলেছুর রহমান (পিতা আ. সামাদ, বাহদিপুর), ইয়াছিন আলী (পিতা জসিম, বৈদ্যনাথপুর), মোজাম্মেল হক (পিতা মুন্সি জান মোহাম্মদ, বাওড়া), আশরাফ আলী (পিতা আ. ওয়াহাব সওদাগর, গোপালপুর), আবুল হোসেন (পিতা হাজী হুরমুজ আলী, বরমহাটি), বকস খলিফা (পিতা চান মিঞা, গোপালপুর) ও কাজী চাঁন্দ মিয়া (কাজী ফজলুর রহমান, কাজীপাড়া, দয়ারাম, উপজেলা বাগাতিপাড়া)। এছাড়া এলাহী দর্জি নামে অপর একজন সেদিন হানাদারদের হাতে নিহত হন। [সুমা কর্মকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!